বাঁ পা নেই, ডান পা থেকেও অকেজো। প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে ঘাড়ের ওপরে। চলেন বিশেষভাবে তৈরি করা তিন চাকার ইলেকট্রিক গাড়িতে। কেউ ভাবেননি তিনি বেঁচে ফিরবেন, কিন্তু ফিরেছেন। প্রথম দেখায়, অনেকে তাঁকে পরিবারের বোঝা মনে করেন। তবে তিনি নিজের কাজ নিজে করেন। বাড়িতে অলস বসে না থেকে বাইরে কাজও করেন। তিনি এখন ফুডপান্ডার রাইডার। রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে বিশেষ ওই গাড়িতে ছুটে বেড়ান।

রাজশাহী নগরের কাজলা এলাকার জাহেদুল ইসলাম ওরফে পলাশের (২৬) গায়ে ২০১০ সালের শেষ দিকে বৈদ্যুতিক তার খসে পড়ে। জ্ঞান ফেরার পরে নিজেকে দেখতে পান ঢাকার একটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বাঁ পায়ের হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। হাঁটুর নিচে থেকে এটি অপসারণ করা হয়। পরে লাগানো হয় কৃত্রিম পা। কীভাবে বৈদ্যুতিক তার খসে পড়ল, সেই কথা জাহেদুলের মনে নেই। তাঁর বাবা নাজির আলী একজন দিনমজুর, মা জানেহার বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহেদুল মেজ। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা হয় নগরের কাজলা এলাকায়। ইলেকট্রিক ওই গাড়িতে বসেই তিনি কথা বলেন।

জাহেদুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে জাহেদুল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন। অন্য আর দশ শিশুর মতো তিনিও চঞ্চল ছিলেন। হঠাৎই খেয়াল করলেন, হাসপাতালের বিছানায় তিনি। কী ঘটেছিল, তা তাঁর মনে নেই। মা–বাবার কাছ থেকে জেনেছেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। প্রায় সাত মাস ঢাকায় চিকিৎসা শেষে রাজশাহীতে ফেরেন তিনি। আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন। মাধ্যমিক পেরিয়ে পাস করেন এইচএসসি। পরে করোনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। শারীরিক বাধা নিয়েও তিনি কিছু একটা করার চিন্তা করতে থাকেন।

জাহেদুল বলেন, ‘রাস্তায় দেখতে পাই বিশেষ ধরনের পোশাক পরে কিছু মানুষ সাইকেল চালিয়ে যান। পরে জানতে পারি, তাঁরা খাবার ডেলিভারি দেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফুডপান্ডায় চাকরির আবেদন করি। প্রতিষ্ঠানটি চাকরি দেওয়ার সময় বলেছিল, অনেক সময় উচ্চ ভবনে গিয়ে খাবার দিতে হয়। তখন আমি বলেছিলাম, আগে চাকরিটা দেন, সেটা আমি করে নেব।’

জাহেদুল ক্রিকেট খেলতেও ভালোবাসেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে ভারতেও খেলতে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য।

কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহেদুল বলেন, ‘আমার প্রথম খাবার ডেলিভারিটাই ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। প্রথম খাবার অর্ডার আসে লক্ষ্মীপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের পঞ্চমতলা থেকে। নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে ম্যাপ দেখে এগোতে থাকি। সেই হাসপাতালের সামনে গিয়ে ওই ক্রেতাকে ফোন করি এবং শারীরিক অবস্থার কথা বলি। ওই লোক বলে দেন, তাঁকে পাঁচতলায় গিয়েই খাবারটি দিতে হবে। তাঁর পুলিশি ঝামেলা আছে। আমার আগে থেকেই হামাগুড়ি দিয়ে চলার অভ্যাস আছে। পরে আমি হামাগুড়ি দিয়ে পাঁচতলায় উঠে খাবারটি ডেলিভারি দিই। ওই ব্যক্তি আমার এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তিনি তখন বলতে থাকেন, “ভাই, আমি বুঝতেই পারিনি যে আপনার এই অবস্থা।” এর পর থেকে আর খুব বেশি কষ্ট হয়নি। রেস্তোরাঁর লোকজনও খুব সহযোগিতা করেন।’

খাবার ডেলিভারি দিয়ে সপ্তাহে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করেন জাহেদুল। এই টাকা থেকে নিজে কিছু খরচ করেন; মায়ের হাতেও কিছু টাকা দেন। জাহাদুল বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে শিফটে কাজ করতে হয়। অ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতা অর্ডার করেন। সেই অর্ডার নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে দিয়ে আসি। এতে কিছু কমিশন পাওয়া যায়। এটা একদম ইচ্ছেমাফিক। এ কাজ করে ভালো লাগে। কিছু টাকা আয় হয়। তা দিয়ে নিজে চলি। মাঝেমধ্যে মায়ের হাতে কিছু টাকা দিই।’

তিন চাকার ইলেকট্রিক গাড়িতে করে খাবার ডেলিভারি দেন জাহেদুল ইসলাম। সম্প্রতি রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরগঞ্জের সাবেক ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ

প্রধান আসামির নাম না দিয়ে মামলা নথিভুক্ত করায় ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম ছিফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

গত ১৭ এপ্রিল আদালতে মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নাামে এক ব্যক্তি। ওইদিনই বিচারক একেএম ছিফাতুল্লাহ আবেদনটি আমলে নেওয়ায় রেজিস্ট্রার খাতায় মামলা (২৭৭/২৫) হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।

আসামিরা হলেন- তৎকালীন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, তিনি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। সাবেক এসআই মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক (ওসি) হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি তদন্ত করবেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসাইন। কতদিন তদন্ত চলবে তা বিচারকের ওপর নির্ভর করবে।”

মামলা সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের পূর্ব বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কুপিয়ে জখম করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার কিছুদিন পর আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন শফিকুল। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় কয়েক বছর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০১৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় শফিকুলকে। কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বসায় নিয়ে আসার পরদিন (একই বছরের ২ জানুয়ারি) মারা যান শফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি। এমতাবস্থায় ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়ের করা হয়। 

ওই দিনই অভিযোগ থানায় এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক। ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে জানান মামলাটি থানায় এসেছে। আপনার (বাদীর) টিপসই লাগবে। বাদী সরল মনে ওসি ও এসআইয়ের কথা বিশ্বাস করে টিপসই দেন।

পরবর্তীতে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, অন্য একটি মামলা লিখে বাদীর স্বাক্ষর নেওয়া, যে মামলাটি এজহার হিসেবে নথিবদ্ধ করেন তাতে বাদীর নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা মো. আবদুর রশিদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈশ্বরগঞ্জের সাবেক ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ
  • স্থায়ী সমাধান ও অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা কী