কম বাজেটে যে এখনও বিশ্বসেরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়, তাই দেখা গেল এবারের অস্কারে। ধ্বনিত হলো বিকল্প চিন্তা ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের জয়জয়কার। সেরা সিনেমার স্বীকৃতি পেল ‘আনোরা’।

এ ছাড়া সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেত্রীসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে চলচ্চিত্রটি। এর মধ্যে পরিচালক শন বেকার একা চারটি, যৌথভাবে একটিসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার জিতে গড়েছেন ইতিহাস। এর আগে সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপাম জিতেছে।

‘আনোরা’ একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। খরচ ৬০ লাখ ডলার। এক যৌনকর্মীর প্রেম ও জীবনের গল্প। এর আড়ালে নিম্নবিত্তের বাস্তবতা আর স্বপ্নের টানাপোড়েন।

সিনেমাটির প্রেক্ষাপট নিউইয়র্কের ব্রুকলিন। এখানে রাশিয়া থেকে আসা অনেক মানুষ বসবাস করেন। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুটিংয়ের কয়েক মাস আগে ব্রুকলিনে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন নায়িকা মাইকি ম্যাডিসন। তাঁর নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয়দের লক্ষ্য করা। তাদের আচরণ, চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস, উচ্চারণে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন। প্রতিদিন স্থানীয় দোকান, মার্কেট, রেস্তোরাঁয় কাটিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

স্থানীয় সময় রোববার রাতে (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড অ্যান্ড হাইল্যান্ড সেন্টারের ডলবি থিয়েটারে এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ২০২৪ সালের সেরা অভিনেত্রীর জন্য উপস্থাপক যখন ম্যাডিসনের নাম ঘোষণা করেন, তখন অভিনেত্রী যেন তড়িতাঘাত পান। মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত করে মঞ্চে চলে যান। মাইক্রোফোনের সামনে এক হাতে পুরস্কার এবং অন্য হাতে ছিল ছোট্ট একটি কাগজের টুকরো। চোখে তখন অশ্রু, ধরে এসেছিল গলা।

শুরুতেই বলেন, ‘এটা পরাবাস্তব। আমার খুব নার্ভাস লাগছে। ফলে আমায় দেখে দেখে পড়তে হবে।’ কাগজের টুকরোয় লেখা চলচ্চিত্রটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নাম পড়তে থাকেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় হলেও হলিউড সব সময় দূরের কিছু বলে মনে হতো। তাই এখানে, এই হলরুমে দাঁড়িয়ে থাকা অবিশ্বাস্য।’ একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ম্যাডিসন বলেন, ‘যৌনকর্মীদের প্রতি স্বীকৃতি ও সম্মান চেয়েছিলাম। আমি তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলছি, তাদের পাশে আছি। যেসব প্রান্তিক নারীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তারা এই অর্জনের ভাগীদার।’

ম্যাডিসন অন্য প্রতিযোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমার সঙ্গে আপনারাও স্বীকৃতি পেয়েছেন।’ পরে পরিচালক শন বেকার বলেন, ‘ম্যাডিসন না থাকলে আনোরা 
হতো না।’ 

৯৭তম অস্কারে ২৩টি বিভাগে পুরস্কার দিয়েছে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংস্থাটির প্রায় ১১ হাজার ভোটার মিলে বিজয়ীদের নির্বাচন করেছেন।

এবারের আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি উঠছে অ্যাড্রিয়েন ব্রডির (দ্য ব্রুটালিস্ট) ঝুলিতে। ব্র্যাডি কোর্বে পরিচালিত এই সিনেমা সেরা মৌলিক আবহ সংগীত (ড্যানিয়েল ব্লুমবার্গ) ও সেরা চিত্রগ্রহণের (লল ক্রলি) জন্যও পুরস্কৃত হয়েছে। দুটি করে পুরস্কার জিতেছে ডেনি ভিলন্যুভের ‘ডুন: পার্ট টু’, জ্যাক অঁডিয়ারের ‘এমিলিয়া পেরেজ’ ও জন এম চু পরিচালিত সিনেমা ‘উইকেড’। এ ছাড়া পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন সেরা পার্শ্ব অভিনেতা কিয়েরেন কালকিন (অ্যা রিয়েল পেইন), পার্শ্ব অভিনেত্রী জোয়ি সালদানিয়া (এমিলিয়া পেরেজ), সেরা রূপান্তরিত চিত্রনাট্য কনক্লেভ (পিটার স্ট্রাউহ্যান), সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘ফ্লো’ (গিন্টস জিলবালোডিস, মাতিস কাজা, রন ডাইন্স, গ্রেগরি জাল্কম্যান), সেরা অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইন দ্য শ্যাডো অব দ্য সাইপ্রেস’ (শিরিন সোহানি, হোসেন মোলায়েমি), সেরা প্রামাণ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’ (বাসেল অ্যাদ্রা, র‌্যাচেল সোর, হামদান বালাল, ইউভাল অ্যাব্রাহাম), সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম স্টিল হিয়ার’ (ব্রাজিল), সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য অনলি গার্ল ইন দ্য অর্কেস্ট্রা’ (মলি ও’ব্রায়েন, লিসা রেমিংটন), সেরা শর্টফিল্ম ‘আই অ্যাম নট অ্যা রোবট’ (ভিক্টোরিয়া ওয়ারমারডাম, ট্রেন্ট), সেরা পোশাক পরিকল্পনা পল টেজওয়েল (উইকেড), সেরা মৌলিক গান ‘এল মাল’ (এমিলিয়া পেরেজ; ক্লেমোঁ দ্যুঁকল, কামিল, জ্যাক অঁডিয়ার), সেরা শিল্প নির্দেশনা নাথান ক্রোলি ও লি স্যান্ডালস (উইকেড), সম্মানসূচক অস্কার সংগীত প্রযোজক কুইন্সি জোন্স (মরণোত্তর), কাস্টিং পরিচালক জুলিয়েট টেলর, আরভিং জি থালবার্গ মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড  ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের চলচ্চিত্র প্রযোজক বারবারা ব্রকোলি, মাইকেল জি উইলসন।

এ ছাড়া ব্রিটিশ চিত্রনাট্যকার রিচার্ড কার্টিসকে ‘জিন  হার্শোল্ট মানবিক অ্যাওয়ার্ড’সহ আরও বেশ কয়েকটি শাখায় একাডেমি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। তারা ঝলমলে এই অনুষ্ঠানের সঞ্চলনায় ছিলেন আমেরিকান টিভি ব্যক্তিত্ব কোনান ও’ব্রায়েন। এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হুলু সরাসরি দেখিয়েছে অনুষ্ঠানটি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন চলচ চ ত র পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রলি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা, চাকার নিচে পড়ে প্রাণ গেল ছোট্ট মুরসালিনের

নাটোরের লালপুরে বাবার ইঞ্জিনচালিত ট্রলির চাকার নিচে পড়ে মুরসালিন হোসেন (৩) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে লালপুর উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মুরসালিন হোসেন ওই গ্রামের পিন্টু মণ্ডলের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বাবা পিন্টু ট্রলি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় শিশু মুরসালিন ট্রলির শব্দ শুনে বাবাকে দেখার জন্য বাড়ির সামনে গেলে ট্রলির চাকার নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে জানাজা শেষে শিশুটিকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঘটনার পর বাবা পিন্টু মণ্ডল আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমি এমন একজন হতভাগা বাবা। আমার নিজের ট্রলিতে আমার বুকের ধনের মৃত্যু হলো। এই কষ্ট আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না।’

লালপুর থানার (ওসি) নাজমুল হক বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই শিশুটির মরদেহ স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ