২ মাস চলে গেল, ৬ কোটির বেশি বই সরবরাহ হয়নি
Published: 4th, March 2025 GMT
শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে শিক্ষা বিভাগ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, এবার বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু এই দেরি এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। শিক্ষাবর্ষের দুই মাস পেরিয়ে তৃতীয় মাস শুরু হলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৬ কোটি ৩৮ লাখের বেশি বই সরবরাহই করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই ৬ কোটি ২২ লাখের মতো।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে কমপক্ষে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বই পেতে যতই দেরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতিও বাড়ছে।
এরই মধ্যে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলোতে লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সব পাঠ্যবই হাতে পেতে অপেক্ষাও দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব বিদ্যালয়ে অবশিষ্ট বই সময়মতো দেওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নও আছে।
অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যালয় ছুটি হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া যাবে। তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠাচ্ছেন। সেখান থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বই সংগ্রহ করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ছাপিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হবে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজসংকটের কারণে তা আরও বেশি দেরি হচ্ছে।
এনসিটিবির সূত্রমতে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ২ মার্চ পর্যন্ত মাধ্যমিকের ২৭ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার বই ছাপা হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের অনুমোদন (পিডিআই) দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ ৭২ হাজারের মতো পাঠ্যবই। এই হিসাবে ৬ কোটি ২২ লাখ ২৮ হাজারের মতো পাঠ্যবই এখনো সরবরাহই করতে পারেনি এনসিটিবি।
প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এর মধ্যে ৯ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজারের মতো বই সরবরাহের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৬ লাখের মতো বই সরবরাহ হয়নি।
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবই ছাপা হওয়ার পর সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, এখনো নবম শ্রেণির দু-একটি বিষয়ের বই পেতে বাকি। তবে বাকি শ্রেণিগুলোর বই পেয়েছেন।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন দেরির কারণ হলো কাগজের সংকট। মুদ্রণকারীরা চীন থেকে আট হাজার টন কাগজের বুকিং দিয়েছেন। দুই হাজার টন কাগজ পাওয়া গেছে। আর দুই হাজার টন আজ-কালের মধ্যে পাওয়া যাবে। এরপরও চার হাজার টনের মতো কাগজ আসতে বাকি। এ রকম অবস্থায় মুদ্রণকারীরা অন্য জায়গা থেকেও কাগজ কিনতে চাইছেন না। কারণ, তাতে তাঁদের লোকসান হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন ১০ মার্চের মধ্যে সব বই দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে মুদ্রণকারীদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। তাঁরা যদি ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজটি দ্রুত করে দেন, তাহলে এটি সম্ভব। ইতিমধ্যে মুদ্রণকারীদের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। তাই যাঁরা পূর্ণ ও আংশিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের বিষয়ে এক রকম ব্যবস্থা এবং যাঁরা অসহযোগিতা করছেন, তাদের বিষয়ে আরেক রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদ্রণকারী বলেন, কাগজসংকটের কারণে ১০ মার্চও সব
বই দেওয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এবার এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনায় ভুল ছিল। ফলে বই দিতে দেরি হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র র মত ম দ রণক র এনস ট ব র হ জ র টন প ঠ যবই বই ছ প পর য য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভোজ্যতেল নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছেই
রমজানে লেবু, বেগুনসহ কয়েকটি পণ্যের দরে অস্বস্তি। সঙ্গে ভোজ্যতেল নিয়ে শুরু হওয়া ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকায় বিপাকে ভোক্তারা। তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্বল তদারকির কারণে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর দাবি, অন্য সময়ের তুলনায় এবার রমজানে বেশির ভাগ পণ্যের দাম নাগালে রয়েছে।
গতকাল রোববার প্রথম রোজায় রাজধানীর হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে মুদি ও ইফতার সামগ্রীর দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কেনাকাটা করতে আসা মানুষ কিছু পণ্যের সংকট ও দাম নিয়ে বিরক্ত বলে জানান।
বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ায়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। গত দুই-তিন মাস পণ্যটি নিয়ে লুকোচুরি করছেন খুচরা, পাইকারি থেকে পরিশোধন কোম্পানিগুলো। বাজারে বোতলজাত তেল নিয়ে চলছে ইঁদুর বিড়াল খেলা। বেশির ভাগ দোকানে নেই পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল। অনেকে লুকিয়ে রেখে ৮৫২ টাকার বোতল ছাড়ছেন ৮৭০-৮৮০ টাকায়। এক, দুই লিটারের বোতলও খুব কম। সংকটে চড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। ১৫৭ টাকার খোলা সয়াবিন কিনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে দায় সারলেও, বাড়ছে না সরবরাহ।
গতকাল হাতিরপুল বাজারে তেল কিনতে গলদঘর্ম বেসরকারি চাকরিজীবী শাহ আলম জানান, পাঁচ দোকান ঘুরেও বোতলের তেল পাননি। বাধ্য হয়ে বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল কিনেছেন। সরকারই বদলেছে, বাজার অসাধু চক্রেই জিম্মি রয়েছে। তদারকি না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। মানুষ অতিষ্ঠ হবে, মনে করেন তিনি।
এক মাস ধরে মানভেদে ছোলা ১০৫-১২০ ও চিনির কেজি ১১৮-১২০ টাকা। গত রোজায় চিনির কেজি ঠেকেছিল ১৪০-১৫০ টাকায়। রাজধানীর পান্থপথের রয়েল বেঙ্গল ইফতারি বাজারের বিক্রয়কর্মী আবু তাহের বললেন, রোজায় আমরা শাহি ৪৫০ ও বোম্বে জিলাপি ৩০০ টাকা বিক্রি করছি। গত রোজায় ছিল ৫০০ ও ৪০০ টাকা।
বাজারে বেড়েছে তরমুজের সরবরাহ। প্রথম রোজায় বেচাকেনাও ভালো। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকায়। পাকা পেঁপের দর বাড়তি, কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়।
বাজারে প্রচুর বেগুন রয়েছে। মানভেদে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ ব্যবধানে বেগুন কেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়লেও গত রোজার তুলনায় কম। গেলবার ১০০ থেকে ১২০ টাকায় চড়েছিল বেগুন। এবার আলু কেনা যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, যা গতবার ছিল ৩০ টাকার ওপরে।
অবশ্য কম দামের প্রভাব পড়েনি ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ বানিয়ে ফেলা চপ ও বেগুনিতে। কারওয়ান বাজারের ইফতারি ব্যবসায়ী খালেক মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরেই আলুর চপ ও বেগুনির পিস ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। দাম কম না রেখে তারা গতবারের তুলনায় আকার বড় করছেন বলে জানান।
বেগুনের মতো বাজারে ভরপুর শসা দেখা গেছে। তবে কোনো কোনো এলাকায় অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে শসার দাম। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি হাইব্রিড শসা ৪০ থেকে ৫০ এবং দেশি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাস দুয়েক আগে ছোট আকারের লেবুর ডজন ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন হালিই বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার আশপাশে। আর মাঝারি আকারের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এ মানের লেবু কেনা গেছে ৪০-৫০ টাকা হালি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজায় শরবতের চাহিদা বেশি। সরবরাহ কম থাকায় লেবুর দাম বেড়েছে। তেজকুনিপাড়ার ব্যবসায়ী মহিন সরকার বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। রমজানে প্রায় সবাই লেবু কেনেন। এরই প্রভাব পড়েছে বাজারে।
গত রোজায় পেঁয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় উঠেছিল। এবার কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অন্যান্য পণ্যের দরও অনেকটা স্বাভাবিক। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান গতকাল কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট পরিদর্শন করেন। তদারকি শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রমজানে কিছু পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবেই বাড়বে। এগুলোর মৌসুম নয়। আবার ভোক্তাদের কেউ কেউ প্রয়োজনের বেশি কেনাকাটা করেন, যার প্রভাব বাজারে পড়ে। এর পরও এবার বেশির ভাগ পণ্যের দাম নাগালে রয়েছে।
ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত তেল সরবরাহের আশ্বাস দিলেও কথা রাখেনি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি হচ্ছে।’ৎ