‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।     

এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। 

রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম  (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’

তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা,  সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ল হক ন র এনস ব জ ত য় ন গর ক প র ট ন র ল হক ন র র জন ত ক র ন ত কর দল গঠন আম দ র ন করছ সরক র ধরন র কতট ক র করছ

এছাড়াও পড়ুন:

সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার ঘটনার জেরে তীব্র উত্তেজনা চলছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদ পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ভারত। 

শুক্রবার ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাতিল বলেছেন, পাকিস্তানে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও যেন না যায় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত। 

এদিকে, ভারত একতরফাভাবে পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করলে সিন্ধুতে ভারতীয়দের রক্ত ​বইবে বলে হুংকার দিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে যেতে দেওয়া হবে না: ভারত

শুক্রবার সিন্ধু প্রদেশের সুক্কুর জেলায় পিপিপির এক সমাবেশে বিলাওয়াল বলেন, “সিন্ধু সভ্যতার বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে পাকিস্তান কখনই নদীর ওপর তার দাবি ত্যাগ করবে না।” 

ভারতকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত ​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে।”
 
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সিন্ধু সভ্যতার উত্তরাধিকারী হওয়ার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বিলাওয়াল পাল্টা বলেন, “তিনি (মোদি) বলছেন যে- তারা হাজার হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার উত্তরাধিকারী। কিন্তু সেই সভ্যতা লারকানার মহেঞ্জোদারোতে অবস্থিত। আমরাই এর প্রকৃত রক্ষক এবং আমরা এটিকে রক্ষা করব।” 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “পাকিস্তানের জনগণ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেউই মোদির যুদ্ধবাজ মনোভাব বা পাকিস্তান থেকে সিন্ধু নদীর পানি সরিয়ে নেয়ার কোনো প্রচেষ্টা সহ্য করবে না।”
 
বিলাওয়াল বলেন, “মোদি সিন্ধু এবং সিন্ধু নদীর জনগণের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলা বন্ধন ছিন্ন করতে পারবেন না। ভারত সরকার পাকিস্তানের পানির ওপর চোখ রেখেছে। এ পরিস্থিতিতে সিন্ধুর পানি রক্ষা এবং সুরক্ষার জন্য চারটি প্রদেশের ঐক্য প্রয়োজন। আমরা বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠাব। তা হলো, সিন্ধু নদীতে ডাকাতি মেনে নেয়া হবে না।”

পাকিস্তানের সর্বকনিষ্ঠ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা বিলাওয়াল বলেন, “ভারতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের জনগণ। পাকিস্তানিরা নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার।”

ভারত সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে বলে বিলাওয়াল অভিযোগ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত অবৈধভাবে সেই চুক্তি বাতিল করছে।

পিপিপি চেয়ারম্যান তার সমর্থকদের ভারতীয় আগ্রাসন থেকে তাদের নদী রক্ষার জন্য দৃঢ় সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে আশ্বস্ত করেন যে, পিপিপি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর মধ্যে রাজনৈতিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, তারা ভারতের মোকাবিলায় ফেডারেল সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।

পাকিস্তান সরকার ইতিমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানির প্রবাহ বন্ধের চেষ্টা চালায় তাহলে এটিকে তারা যুদ্ধের কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করবে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ