চট্টগ্রামে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪
Published: 4th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা এলাকায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হয়েছে। ডাকাত সন্দেহ করে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে তাদের পিটুনি দেওয়া হয়। এ সময় আক্রান্তরা পাল্টা গুলি চালালে স্থানীয় চারজন এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছনখোলা (পশ্চিম পাড়া) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনিতে নিহত দুজনের মরদেহ থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ অন্তত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত রেজা বলেন, রাত ১০টার দিকে ইওছিয়া ইউনিয়নের চানখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। প্রকৃত কারণ জানতে আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে জানায় যে, ডাকাতরা যখন ডাকাতির চেষ্টা করে, তখন গ্রামবাসী মসজিদের লাউড স্পিকার ব্যবহার করে তাদের উপস্থিতি ঘোষণা করে। এ সময় ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করলে দুজনকে ধরে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’
সাতানিয়া থানার ডিউটি অফিসার আমজাদ হোসেন জানান, এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে দুজন মারা গেছে। তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে সেটা তিনি জানাতে পারেননি। ঘটনাস্থলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য অফিসার আছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, কাঞ্চনার নেজাম নামের এক রাজনৈতিক কর্মী ৫ আগস্টের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরেন। ফিরেই তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি শুরু করেন। নেজাম গ্রুপের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সোমবার নেজাম আরও কয়েকজনকে নিয়ে ছনখোলা এলাকায় গেলে তারাবি নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিরা নেজাম গ্রুপকে ঘিরে ফেলে। মসজিদের মাইক থেকেও তখন ঘোষণা দেওয়া হয় এলাকায় ডাকাত পড়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেজাম এলাকাবাসীর ওপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে পরে নেজাম ও তার সঙ্গীদের গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নেজাম ও ছালেক নামে দুজন মারা যায়।
একটি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার: পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, মো. ওবায়দুল্লাহ (২২), মো. নাসির(৩৮), মো. আব্বাস (৩৮) ও মো. মামুন সওদাগর (৪৮)। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শান্তু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণপ ট ন গণপ ট ন ত কর মকর ত এল ক ব স এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
মহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প
এই গল্পটি যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি উপভোগ্যও। রাসুল (সা.) তখন প্রায় ৫০ বছর বয়সী। দশ বছর ধরে তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন। তাঁকে চরম বিরোধিতা, নির্যাতন ও নানা রকম কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। তবু তিনি কখনো করুণা, ধৈর্য কিংবা সহনশীলতা হারাননি।
একদিন তিনি মক্কার বাইরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তাঁর সামনে পড়ল রুকানা নামে বিখ্যাত এক ব্যক্তি। রুকানা ছিল কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে বলশালী, সেরা কুস্তিগির। রুকানা মহানবীকে (সা.) ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করত না; তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে সে দ্বিধা ও সংশয়ে ছিল। সে বুঝতে পারত না নবীজি (সা.) আসলে কী প্রচার করছেন।
মহানবী (সা.) তাকে দেখে বললেন, ‘রুকানা, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।’
রুকানা বলল, ‘তা হলে চলো, আগে কুস্তি লড়ি, তারপর কথা হবে।’
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩নবীজি (সা.) হাসিমুখে বললেন, ‘ঠিক আছে, কুস্তি হোক।’
উভয়ে প্রস্তুত হলেন, কুস্তি শুরু হলো। রাসুল (সা.) রুকানাকে এক চাপে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা বিস্ময়ে হতবাক! সে জীবনে কখনো হারেনি। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আবার হোক।’
দ্বিতীয়বারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা এবার পুরোপুরি হতবাক। সে বলল, ‘আরও একবার!’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তৃতীয়বারও তাকে মাটিতে আছড়ে ফেললেন। রুকানা এবার সত্যিই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বলল, ‘আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি জীবনে কখনো হারিনি। কেউ কখনো আমাকে মাটিতে ফেলতে পারেনি। এটা কীভাবে সম্ভব।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে শোনো, আমি তোমাকে আরও আশ্চর্য কিছু দেখাব।’
একটু দূরে একটি গাছ ছিল। রাসুল (সা.) সেই গাছকে ডাক দিলেন। গাছটি নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করে তাঁর কাছে চলে এলো। তিনি গাছকে বললেন, ‘ফিরে যাও।’ গাছটি আবার ফিরে গেল তার আগের জায়গায়। রুকানা এই অলৌকিক ঘটনা দেখে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইবাদতযোগ্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার নিজের পথে রওনা দিলেন।
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
এই ঘটনাটি আমাদের শেখায়, রাসুল (সা.) কীভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করতেন, কীভাবে ইসলাম প্রচার করতেন। তিনি ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতময় মানুষ। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অমূল্য। তবু তিনি মানুষকে এতটাই ভালোবাসতেন, এতটাই বুঝতেন এবং গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি একজন মানুষের সঙ্গে সময় নিয়ে কুস্তিও করতেন, শুধু তাকে বোঝানোর জন্য।
তিনি চাইলে শুধু একটি বক্তৃতা দিয়েই বা হাতে একটি পুস্তিকা ধরিয়ে দিয়েই চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করতেন না। তিনি আগে মানুষকে বুঝতেন, তাদের মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিতেন। এ জন্যই মানুষ তাঁকে ভালোবাসত, তাঁর কথা শুনত, আর ইসলাম গ্রহণ করত। তাঁর এই মনোভাবই আমাদের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত।
যখন আমাদের কারও সঙ্গে ইসলামের কথা বলার সুযোগ আসে, তখন আগে সেই মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করি, তার মতো করে কথা বলি। আর যদি তাতে একটু কুস্তিও লড়তে হয়—তাহলে তাই হোক!
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ৮,৪৫০; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৭৭৪)
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫