প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভির পাতানো ফাঁদে প্রাণ গেছে রাজধানীর ইম্পেরিয়াল এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাজকীর আহমেদের। সীমার সঙ্গে দেখা করতে খুলনায় এলে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল হোতা অভিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তাজকীরের বাবা-মা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাজকীর লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করতেন। সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে গত ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ধানমন্ডির বাসা থেকে খুলনা নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় মামার বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে খালিশপুরে নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার উদ্দেশে বের হন সীমার সঙ্গে দেখা করতে। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তাজকীরের বাবা মুরাদ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানায় জিডি করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাজকীরের প্রেমিকা সীমা ও অভির মা লাবণী বেগমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদ থেকে পুলিশ বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে। তাজকীরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট দেখে অর্ধগলিত লাশটি তাজকীরের বলে শনাক্ত করেন। তাজকীরের বুকসহ একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। তাঁকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি মরদেহ পরিবারে হস্তান্তর করা হয়।
খালিশপুর থানার ওসি মো.

রফিকুল ইসলাম জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে, অর্ধগলিত লাশটি তাজকীরের কিনা। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত এখনও কোনো আদেশ দেননি। তাজকীরকে অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশটি তাজকীরের বলে নিশ্চিত হওয়া গেলে অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।

পুলিশ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে খালিশপুর হাউজিং এলাকার বখাটে ও মাদকাসক্ত অভি দুই পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সীমাকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এর পর অভি বিদেশে চলে যান। সম্প্রতি তিনি এলাকায় ফিরে এসে আবার সীমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে এর আগেই সীমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় তাজকীরের, যা অব্যাহত ছিল দেড় বছর। তাজকীরের চাচাতো ভাই একলাছুর রহমান রনির শ্যালিকা সীমা। রনির মাধ্যমে সীমার সঙ্গে তাজকীরের সম্পর্ক হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, সীমা একই সঙ্গে অভি ও তাজকীরের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অভি বিষয়টি জানতে পেরে সীমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যান। এর পর সীমার ফোন থেকে তাজকীরকে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে অভি জানান, সীমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে দ্রুত দেখা করতে বলা হয়। তাজকীর সীমার সঙ্গে দেখা করতে এসে প্রাণ হারান। 
তাজকীর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নওখোলা গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে। মুরাদ হোসেন বলেন, তাজকীর জানত না, সীমার আগে বিয়ে হয়েছিল। খালিশপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তাজকীরকে কোথায় কীভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে লাশ গুম করে, তা এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি

আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। 

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি নামের সংগঠনগুলোর পাঁচ প্রতিনিধিরা এ দাবি তুলে ধরেন।

আইন উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, নানাভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।

স্মারকলিপিতে দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান। আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা গত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন-তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর এবং গুমে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সকল মামলা বাতিল করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনসমূহকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে এ দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নবীনগরে হেফাজতের কমিটি নিয়ে মুখোমুখি দু’পক্ষ
  • ফেসবুক লাইভে এসে নিরাপত্তা চাইলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা
  • ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে জখম, থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পরিবারের
  • বাংলাদেশকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ দেখছে জিম্বাবুয়ে
  • লেনিন কেন এখনও জরুরি
  • মিয়ানমার জান্তার মরিয়া চেষ্টা
  • হাওরে হাওরে ধান কাটার ধুম
  • ৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি
  • বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস আজ
  • সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ