নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফ। বিচার বিভাগের প্রধানের ‘উপদেশ’ মেনে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের পদত্যাগপত্র পোস্ট করেন জারিফ।

পদত্যাগপত্রে গত ৯ মাস প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে নিবেদিতভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করে জারিফ লেখেন,  ছয় মাস ধরে ‘তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে জঘন্য অপমান, অপবাদ এবং হুমকি’ সহ্য করতে হয়েছে।

জারিফকে নিজের সরকারে কৌশলগতবিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। নির্বাচনী প্রচারে পেজেশকিয়ানের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন জারিফ।

জারিফ ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির আমলে আট বছর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে করা ইরানের পরমাণু চুক্তিতে তিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।

পদত্যাগপত্রে গত ছয় মাসকে নিজের ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ‘সবচেয়ে তিক্ত’ সময় বলে উল্লেখ করেছেন জারিফ। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিরোধীরা তাঁর সমালোচনা শুরু করেন।

জারিফের সমালোচকদের অনেকের অভিযোগ, তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। কারণ, তাঁর সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে। তাঁরা জন্মসূত্রে ওই দেশের নাগরিক।

পদত্যাগপত্রে জারিফ লেখেন, ‘জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে ছোটখাটো ভূমিকা রাখায় গত চার দশকে আমি অসংখ্য অপমান ও অভিযোগ সহ্য করেছি। আমার ছোটখাটো অবদানের মধ্যে আরোপিত যুদ্ধের অবসান থেকে শুরু করে সফল পরমাণু চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। বিরামহীন মিথ্যা ও বক্তব্য বিকৃতির মুখেও দেশের স্বার্থে আমি এত দিন চুপ ছিলাম।’

জারিফ জানান, বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই তাঁকে পদত্যাগ করতে ‘উপদেশ’ দিয়েছেন। দেশের চলমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে ‘সরকারের ওপর আরও চার তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে’ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন।

ইরানের সাবেক শীর্ষ এই কূটনীতিক লেখেন, ‘আশা করছি, আমার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছা ও সরকারের সফলতার পথে বাধা দূর হবে।’

জারিফ পেজেশকিয়ানের মন্ত্রিসভা ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদেরা তাঁকে অপসারণ করতে চাইছিলেন। তাঁকে অপসারণ করতে তাঁরা সম্প্রতি পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

পদত্যাগের ঘোষণার আগেও জারিফের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্যি নয় বলে সব সময় উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে জারিফের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের ওপর চাপ কমাতে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে।

এর আগে রোববার পার্লামেন্টের এক অনাস্থা ভোটে ইরানের অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মতিকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে দেশটির মুদ্রার মানের রেকর্ড পতন হয়েছে।

আরও পড়ুনইরানের অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করল পার্লামেন্ট২১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদত য গপত র র পদত য গ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ