নীতিমালায় বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কখনোই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয় না। এর দায় যেমন কোনো দিন নিজেদের কাঁধে নেন না সংশ্লিষ্টরা, তেমনি তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার মতোও কেউ নেই। এভাবেই কৃষকের ভাগ্য নিয়ে প্রতি বছরই চলে টানাহেঁচড়া।
এবারও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি বাঁধের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোর (পিআইসি) দাবি, ৯২ থেকে ৯৪ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবারও বাঁধের কাজ নিয়ে অভিযোগ আর আপত্তি রয়েছে স্থানীয়দের। সরেজমিন সুনামগঞ্জের ছাতক, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার হাওর অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে এমন তথ্যই জানিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক শাহ মো.

আখতারুজ্জামান এবং এনামুল হক।
ছাতকের বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২৮টি পিআইসির মধ্যে অন্তত ১৫টি বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপারের কৃষকরা। পিআইসির দায়িত্বশীলরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন কিছুর সুযোগ নেই। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পিআইসির কাজ নিয়মিতই মনিটর করা হচ্ছে। সেখানে মানহীন কাজের সুযোগ নেই।
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) প্রকল্পগুলোর অধিকাংশেরই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় বাঁধে ঘাস লাগানো শুরুই করতে পারেনি পিআইসি। এর মাঝে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজে নয়ছয়ের নজির রয়েছে।
চলতি বছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি পিআইসির অধীনে বোরো ফসল রক্ষার জন্য উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 
কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসিগুলো বাঁধের প্রকল্পে গড়ে ৯০ ভাগ কাজ শেষ করেছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। বাঁধ নির্মাণকাজের জন্য এলাকার স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও এবারও সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।
শুক্র ও শনিবার বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, চাউলি, ডেকার, নাইন্দার হাওর এবং মাছুখাল ও কুড়িবিলের ক্লোজারের বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন। ১  থেকে ৬ নম্বর পিআইসি পর্যন্ত বাঁধের কাজের মাটি ভরাট, ড্রেসিং ঠিক থাকলেও ঘাস লাগানো শেষ হয়নি। ৭ নম্বর পিআইসির কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের। চরমহল্লা ইউনিয়নের এই পিআইসির কাজে মাটি ভরাট সঠিকভাবে হয়নি। ড্রেসিং অসম্পূর্ণ, দুরমুস বাকি। বাঁধে কোনো ঘাসও লাগানো হয়নি। ৮ থেকে ১১ নম্বর পিআইসির কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। ১২ থেকে ২০ নম্বর পর্যন্ত পিআইসির কাজ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। ২১ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত পিআইসির বাঁধগুলোতে মাটি ভরাট করা হলেও বাঁধের কম্পেকশন ও স্লোভিং সঠিকভাবে হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিশাল ডেকার হাওরের বাঁধটি বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত। এর মুখ দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করলে গোটা অঞ্চলের বোরো ফসল নষ্টের আশঙ্কা প্রবল।
চরমহল্লা ইউনিয়নের ১৪ নম্বর পিআইসির সভাপতি কামাল উদ্দিন জানান, মাটির কাজ, ড্রেসিং ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। আশপাশের এলাকায় ঘাস না পাওয়ায় কাজ বিলম্ব হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। ৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি ছালিক আহমদ জানান, মাটির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন ঘাস লাগানো হচ্ছে।
১২ নম্বর পিআইসির কাজ শেষ হয়েছে সবার আগে। ১৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি ইলিয়াছ আহমদ জানান, ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। ১৫ নম্বর পিআইসির বাঁধে মাটির দুরমুস করা বাকি। জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬ নম্বর পিআইসির বুকার ভাঙা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানে ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে। বর্তমানে ঘাস লাগানোর কাজ চলমান। ১৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি জাবেরও জানান কাজ সম্পন্নের কথা।
এদিকে ১৯, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর পিআইসির মাটির ড্রেসিং শেষে সব ক’টিতে ঘাস লাগানো চলছে। ২৮টি পিআইসি নোয়ারাই ইউনিয়নের  নাইন্দার হাওরের মাছুখাল ক্লোজারে কাজ করছে। এখানে খালের মুখ দিয়ে হাওরে জমা পানি বেরিয়ে যাচ্ছে বলে কাজ দেরি হচ্ছে।  
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাবিকা কমিটির সদস্য সচিব মাসুম চৌধুরী জানান, বাঁধ নির্মাণের কাজ নিয়মিতই মনিটর করা হচ্ছে। সব ক’টি প্রকল্পে গড়ে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার এই মৌসুমের বাঁধের কাজের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকার বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা, সার্ভে কার্যক্রমে বিপত্তি, পিআইসি গঠনে বিলম্ব, প্রকল্পের বিপরীতে দেরিতে অর্থ ছাড়সহ নানা কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে।
রোববার দুপুর পর্যন্ত দুই উপজেলাতে পৃথকভাবে ৯৪ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এখনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশেরও বেশি কাজ বাকি। তাছাড়া কিছু স্থানে বাঁধের কাজ প্রত্যাশিত পর্যায়ে হয়নি। এসব পয়েন্টে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়ে গেছে। ফলে হাওরে আগাম পানি এলে সোনার ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৭ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার সব ক’টি হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। শতভাগ বোরো ফসলডুবির ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে যান হাওরের কৃষক। সে সময় ঠিকাদারি প্রথার মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতকাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও আলোচনায় আসে। ২০১৮ সাল থেকে কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ হয়ে আসছে। সেখানেও চলছে নানা কারসাজি। নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বোরো ফসল রক্ষায় ২৩০ কিলোমিটার সার্ভে করা হয়। এর মধ্যে ধর্মপাশায় ১৬০ কিলোমিটার ও মধ্যনগরে ৭০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ধর্মপাশায় ৮৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২৬ কিলোমিটার ও মধ্যনগরে ৩৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৩ কিলোমিটার বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য ধর্মপাশায় প্রায় ১৯ কোটি ১৫ লাখ ও মধ্যনগরে ৭টি কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মধ্যনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলম ও ধর্মপাশা উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সব মিলিয়ে ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি বাঁধ ও ক্লোজারে মাটি ফেলার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঘাস লাগানোসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে শেষ হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষের সময়সীমা থাকলেও, আরও ১০ দিন সময় বাড়ানোর জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ শ ষ হয় ছ প আইস র ক জ ৯০ ভ গ ক জ স ন মগঞ জ প রকল প র উপজ ল র অন য য় থ কল ও র জন য শ ষ কর র ফসল

এছাড়াও পড়ুন:

ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে এবারও ‘টাইমড আউট’

নীতিমালায় বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কখনোই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয় না। এর দায় যেমন কোনো দিন নিজেদের কাঁধে নেন না সংশ্লিষ্টরা, তেমনি তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার মতোও কেউ নেই। এভাবেই কৃষকের ভাগ্য নিয়ে প্রতি বছরই চলে টানাহেঁচড়া।
এবারও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি বাঁধের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোর (পিআইসি) দাবি, ৯২ থেকে ৯৪ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবারও বাঁধের কাজ নিয়ে অভিযোগ আর আপত্তি রয়েছে স্থানীয়দের। সরেজমিন সুনামগঞ্জের ছাতক, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার হাওর অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে এমন তথ্যই জানিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক শাহ মো. আখতারুজ্জামান এবং এনামুল হক।
ছাতকের বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২৮টি পিআইসির মধ্যে অন্তত ১৫টি বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপারের কৃষকরা। পিআইসির দায়িত্বশীলরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন কিছুর সুযোগ নেই। এখন দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পিআইসির কাজ নিয়মিতই মনিটর করা হচ্ছে। সেখানে মানহীন কাজের সুযোগ নেই।
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) প্রকল্পগুলোর অধিকাংশেরই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় বাঁধে ঘাস লাগানো শুরুই করতে পারেনি পিআইসি। এর মাঝে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজে নয়ছয়ের নজির রয়েছে।
চলতি বছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি পিআইসির অধীনে বোরো ফসল রক্ষার জন্য উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 
কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসিগুলো বাঁধের প্রকল্পে গড়ে ৯০ ভাগ কাজ শেষ করেছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। বাঁধ নির্মাণকাজের জন্য এলাকার স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও এবারও সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।
শুক্র ও শনিবার বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, চাউলি, ডেকার, নাইন্দার হাওর এবং মাছুখাল ও কুড়িবিলের ক্লোজারের বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন। ১  থেকে ৬ নম্বর পিআইসি পর্যন্ত বাঁধের কাজের মাটি ভরাট, ড্রেসিং ঠিক থাকলেও ঘাস লাগানো শেষ হয়নি। ৭ নম্বর পিআইসির কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের। চরমহল্লা ইউনিয়নের এই পিআইসির কাজে মাটি ভরাট সঠিকভাবে হয়নি। ড্রেসিং অসম্পূর্ণ, দুরমুস বাকি। বাঁধে কোনো ঘাসও লাগানো হয়নি। ৮ থেকে ১১ নম্বর পিআইসির কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। ১২ থেকে ২০ নম্বর পর্যন্ত পিআইসির কাজ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। ২১ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত পিআইসির বাঁধগুলোতে মাটি ভরাট করা হলেও বাঁধের কম্পেকশন ও স্লোভিং সঠিকভাবে হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিশাল ডেকার হাওরের বাঁধটি বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত। এর মুখ দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করলে গোটা অঞ্চলের বোরো ফসল নষ্টের আশঙ্কা প্রবল।
চরমহল্লা ইউনিয়নের ১৪ নম্বর পিআইসির সভাপতি কামাল উদ্দিন জানান, মাটির কাজ, ড্রেসিং ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। আশপাশের এলাকায় ঘাস না পাওয়ায় কাজ বিলম্ব হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। ৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি ছালিক আহমদ জানান, মাটির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন ঘাস লাগানো হচ্ছে।
১২ নম্বর পিআইসির কাজ শেষ হয়েছে সবার আগে। ১৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি ইলিয়াছ আহমদ জানান, ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। ১৫ নম্বর পিআইসির বাঁধে মাটির দুরমুস করা বাকি। জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬ নম্বর পিআইসির বুকার ভাঙা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানে ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে। বর্তমানে ঘাস লাগানোর কাজ চলমান। ১৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি জাবেরও জানান কাজ সম্পন্নের কথা।
এদিকে ১৯, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর পিআইসির মাটির ড্রেসিং শেষে সব ক’টিতে ঘাস লাগানো চলছে। ২৮টি পিআইসি নোয়ারাই ইউনিয়নের  নাইন্দার হাওরের মাছুখাল ক্লোজারে কাজ করছে। এখানে খালের মুখ দিয়ে হাওরে জমা পানি বেরিয়ে যাচ্ছে বলে কাজ দেরি হচ্ছে।  
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাবিকা কমিটির সদস্য সচিব মাসুম চৌধুরী জানান, বাঁধ নির্মাণের কাজ নিয়মিতই মনিটর করা হচ্ছে। সব ক’টি প্রকল্পে গড়ে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার এই মৌসুমের বাঁধের কাজের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকার বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা, সার্ভে কার্যক্রমে বিপত্তি, পিআইসি গঠনে বিলম্ব, প্রকল্পের বিপরীতে দেরিতে অর্থ ছাড়সহ নানা কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে।
রোববার দুপুর পর্যন্ত দুই উপজেলাতে পৃথকভাবে ৯৪ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এখনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশেরও বেশি কাজ বাকি। তাছাড়া কিছু স্থানে বাঁধের কাজ প্রত্যাশিত পর্যায়ে হয়নি। এসব পয়েন্টে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়ে গেছে। ফলে হাওরে আগাম পানি এলে সোনার ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৭ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার সব ক’টি হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। শতভাগ বোরো ফসলডুবির ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে যান হাওরের কৃষক। সে সময় ঠিকাদারি প্রথার মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতকাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও আলোচনায় আসে। ২০১৮ সাল থেকে কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ হয়ে আসছে। সেখানেও চলছে নানা কারসাজি। নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বোরো ফসল রক্ষায় ২৩০ কিলোমিটার সার্ভে করা হয়। এর মধ্যে ধর্মপাশায় ১৬০ কিলোমিটার ও মধ্যনগরে ৭০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ধর্মপাশায় ৮৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২৬ কিলোমিটার ও মধ্যনগরে ৩৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৩ কিলোমিটার বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য ধর্মপাশায় প্রায় ১৯ কোটি ১৫ লাখ ও মধ্যনগরে ৭টি কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মধ্যনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলম ও ধর্মপাশা উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সব মিলিয়ে ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি বাঁধ ও ক্লোজারে মাটি ফেলার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঘাস লাগানোসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে শেষ হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষের সময়সীমা থাকলেও, আরও ১০ দিন সময় বাড়ানোর জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ