সেচযন্ত্র চলবে, বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডেও
Published: 3rd, March 2025 GMT
চলতি বোরো ধান রোপণ মৌসুমের শুরুতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সচ্ছল কৃষকরা সৌরবিদ্যুতে তাদের মাঠে সেচের জন্য অগভীর নলকূপ পরিচালনা করছেন। উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের কৈবর্তগাঁতী গ্রামের মাঠে আবু সাঈদ ও সোহরাব মোল্লা নামের দুই কৃষক প্রথমবারের মতো সৌরবিদ্যুতে সেচ পাম্প চালানো শুরু করেছেন। সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা গ্রহণের জন্য এ কার্যক্রমে তাদের ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এ কর্মকাণ্ডে আগ্রহী কৃষকদের সীমিত আকার সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের দেখে সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপ পরিচালনায় অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগে বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও সুন্দর উদ্যোগ।
কৈবর্তগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবু সাঈদ জানান, তিনি তাঁর স্কিমে ৪০ বিঘা জমিতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে অগভীর নলকূপ পরিচালনার স্কিম করেছেন। সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ তাদের এই নয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রমে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও তার সিংহভাগ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ঋণ হিসাবে প্রদান করছে। তাঁর জমিতে তিনি সিমেন্টের খুঁটির ওপর লোহার ফ্রেম তৈরি করে মোট ১৬টি সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গে কিনেছেন ৫ হর্স পাওয়ারের মোটর। তিনি ইতোমধ্যে সৌরবিদ্যুতে তাঁর স্কিমে পানিসেচ দিতে শুরু করেছেন। এ সোলার প্যানেল বসানোর জন্য সব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
আবু সাঈদ আরও জানান, প্রতিদিন সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সৌরবিদ্যুতে সেচ পাম্প চালানো যাচ্ছে। সূর্যের আলো না থাকলে তাঁর পাম্পটি বন্ধ থাকছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সেচ মৌসুম ফুরিয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্কিমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে কিনে নেবে। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন।
একই এলাকার কৃষক সোহরাব মোল্লা অনুরূপ পদ্ধতিতে তাঁর জমিতে সৌরবিদ্যুতে সেচ প্রকল্প করেছেন। তিনি তাঁর প্রকল্পের জন্য ৩ হর্স পাওয়ারের মোটর বসিয়েছেন। তাঁর স্কিমে জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। সোহরাব মোল্লা আরও জানান, সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপ পরিচালনে তাঁর সব মিলে ব্যয় প্রায় ৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর অর্ধেক অর্থ তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করেছেন। বাকিটা কিস্তিতে ঋণ দিয়েছে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১। আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে তিনি এই ঋণের অর্থ শোধ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। সোহরাব মোল্লা বলেন, একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও মাসে মাসে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে তাঁর আর মাসিক বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে না। অথবা ডিজেলে মেশিন চালালে যে পরিমাণ তেল কিনতে হয়, সেটাও আর তাঁকে কিনতে হবে না।
এই দুই কৃষকের সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপের সেচ প্রকল্প দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার আরও অনেক কৃষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার পূর্ব সাতবাড়িয়া গ্রামের খোরশেদ আলম, সদাই গ্রামের হবিবুর রহমান, মোহনপুর গ্রামের সুরেশ্বর সরকার, বন্যাকান্দি গ্রামের সোনা উল্লাহসহ আরও অনেকে। তারা জানান, এ বছরই তারা তাদের ফসলি মাঠে সোলার প্যানেল বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো.
সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আবু আশরাফ মো. ছালেহ্ জানান, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি তাঁর এলাকার কৃষকদের সৌরবিদ্যুতে অগভীর সেচ মেশিন পরিচালনায় কৃষকদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে। কৃষকদের সোলার প্যানেল বসাতে যে অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে, তার মূল্য নিরূপণ করে ১০ শতাংশ টাকা ডাউন পেমেন্ট নিয়ে সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হচ্ছে। খুব সহজ ও স্বল্প অর্থের কিস্তিতে কৃষক এই নয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। সীমিত আকারে এই ব্যবস্থায় প্রাথমিকভাবে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে কৃষক নিজেরাই এ সোলার প্যানেলের মালিক হবেন। সেই সঙ্গে সেচ মৌসুমের সময় ছাড়া বাকি সময়ের উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত হারে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। এতে সংশ্লিষ্ট কৃষক নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন এই মহাব্যবস্থাপক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স রব দ য ত ক ষকদ র স সহয গ ত প রকল প র জন য কর ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাজা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। খবর- বাসস।
এদিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটি এবং মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার কথা জানিয়েছে ইইউ। সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইইউর এই কমিশনার বলেন, যদিও এই অর্থের পরিমাণ গত বছরের প্রাথমিক ইইউ অনুদানের চেয়ে বেশি, তবু এটি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তহবিল ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখনও কোনো সমাধান নেই। কখন সমাধান হবে, তার কোনো সময়সীমা নেই।
ইইউ কমিশনার বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি। আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও অন্তর্ভুক্ত।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউর সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে কমিশনার বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।
কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাই বেওয়ারিশ লাশ যেন না থাকে। আমরা এমন একটা সমাজ বানাই, যেখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাজ আর থাকবে না।’ রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দোয়া ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নতুন ভবন আঞ্জুমান জে আর টাওয়ারের উদ্বোধন করেন। ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি গোলাম রহমান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী বক্তব্য দেন।