স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য অপরাধীদের উৎসাহিত করবে: চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
Published: 3rd, March 2025 GMT
দুজন নারীর সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত উগ্রবাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মব তৈরি করে তাদের লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ করেছে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এমন ঘটনা একটি ফৌজদারি অপরাধ। অথচ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো কথা নেই। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হবে।
রাজধানীর লালমাটিয়ায় নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল দাস ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ওপেন স্পেসে (উন্মুক্ত স্থানে) সিগারেট না খাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সিগারেট খাওয়া–সংক্রান্ত আইনে টংদোকান ওপেন স্পেসের (উন্মুক্ত স্থান) মধ্যে পড়ে না, তিনি হয়তো আইনটি পড়ে দেখেননি।’
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, একটি চিহ্নিত উগ্র সাম্প্রদায়িক নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী ক্রমাগত নারীদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নারীদের নির্যাতন করতে দেখা গেছে। শুধু তা–ই নয়, এই গোষ্ঠী নারীদের খেলা বন্ধ করা, সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ করা, মাজারে আক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকার এসব বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে চরম ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে ক্রিমিনাল অফেন্সকে জাস্টিফাই করেন’৫ ঘণ্টা আগেআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সরে যাওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নারী লাঞ্ছনাসহ সব মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান নারী–পুরুষ সবার জন্য অপরাধ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা০২ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]