গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, হামলা, নারী ও নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ১৩৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামে একটি সংস্থা এই তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
  
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত কমপক্ষে ৭৫৫ জন। এসব সহিংসতার ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৫৮টি ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের ও আহত হয়েছে ৪৯৪ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন নিহত ও ১১৫ জন আহত হয়েছেন। 

রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯ জনের মধ্যে বিএনপির পাঁচজন, আওয়ামী লীগের একজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একজন নিহত হয়েছেন। অপর দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীর হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির পাঁচজন, জামায়াতের একজন নারী সদস্য ও চরমপন্থি দলের তিনজনসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।  

এতে বলা হয়, এ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ছয়টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হয়ে আবুল কাসেম নামে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল ও যুবদলের সংঘর্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।  

এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ মাসে সারাদেশে কারাগার ও হাজতে কমপক্ষে ১২ জন আসামি মারা গেছেন। গণপিটুনির ১৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন। এ ছাড়া ১৯টি হামলার ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাঁচটি মামলায় ১১ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ছয় মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০ জনকে।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিএসএফের সাতটি হামলার ঘটনায় একজন বাংলাদেশি নিহত, ছয়জন আহত ও ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তিনটি হামলার ঘটনায় ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। ২৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৭ জন। দুর্ঘটনায় ৯ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।

ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৭ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও ১৩ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। অন্যদিকে ১০৪ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯ জন। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৫ জন শিশু।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় ছ র হয় ছ ন র ঘটন য় কমপক ষ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

৭টি মৌলিক হক

আজ তৃতীয় তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা আল ইমরানের ৯২ থেকে সুরা নিসার ৮৭ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। চতুর্থ পারার পুরোটা ও পঞ্চম পারার প্রথম অর্ধেক—মোট দেড় পারা। আজকের তারাবিহতে বদর যুদ্ধ, ওহুদ যুদ্ধ, ইসলামের দাওয়াত, উত্তরাধিকার, এতিমের অধিকার, বিয়েশাদি, পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা, মৃত্যু, হাশর, আসমান-জমিন সৃষ্টি, দাম্পত্য জীবন, মুমিনদের বারবার পরীক্ষার কারণ, আমানত আদায়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জিহাদ পালনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

কারা শ্রেষ্ঠ মানুষ

আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, তারাই হবে শ্রেষ্ঠ মানুষ; যেমন এক. সৎ কাজের আদেশ করা। দুই. অন্যায় কাজে বাধা দেওয়া। তিন. আল্লাহর প্রতি ইমান রাখা। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১১০)

বদর যুদ্ধ বদলে দিল ইতিহাস

ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায় বদর যুদ্ধ। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনার উপকণ্ঠে বদর নামক স্থানে কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের এ যুদ্ধ হয়। এটি ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিশ্বাসের যুদ্ধ। পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর ১ হাজার সশস্ত্র সেনা, ১০০ ঘোড়া ও ৭০০টি উট ছিল। ৩১৩ জন মুসলমানদের সঙ্গে ছিল মাত্র ২টি ঘোড়া ও ৭০টি উট। আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দেন। কাফিররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এতে কুরাইশদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। মুসলিমদের ১৪ জন শহীদ হন। এ যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের নাম পড়ে। অবিশ্বাসীদের টনক নড়ে ওঠে। মদিনায় মুসলমানদের অবস্থান মজবুত হয়। সুরা আল ইমরানের ১২১ থেকে ১২৯ নম্বর আয়াতে বদর যুদ্ধের আলোচনা রয়েছে।

আরও পড়ুনআজান ও ইকামতে কী বলা হয়২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সফলতার চার মূলনীতি

এ সুরায় সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সফলতার চারটি মূলনীতির কথা বলেছেন। এক. ধৈর্য ধারণ করা। দুই. শত্রুর মোকাবিলায় শত্রুর চেয়ে বেশি অবিচলতা ও বীরত্ব অবলম্বন করা। তিন. শত্রুর মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত রাখা এবং চার. সর্বাবস্থায় আল্লাহর ভয় অন্তরে পোষণ করা।

 সুরা নিসায় নারীদের অধিকার

পবিত্র কোরআনের চতুর্থ সুরা নিসা। মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১৭৬। নিসা অর্থ নারী। এ সুরায় নারীর অধিকার, নারীর উত্তরাধিকার, দাম্পত্য জীবন, তালাক–সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা থাকায় এ সুরার নাম হয় সুরা নিসা।

সুরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্ত্রীকে খুশি মনে মোহর দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিয়ে করার জন্য স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা ফরজ। দেনমোহর একজন স্বামীর ওপর অর্পিত দায়িত্ব, একই সঙ্গে একজন স্ত্রীর অধিকার ও সম্মান। বিয়ের আগে মোহর দিতে হবে। তবে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে পরেও দেওয়া যেতে পারে। দুই পক্ষের আলাপের ভিত্তিতে মোহরানার পরিমাণ নির্ধারণ করা উত্তম। তবে বরের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে দেনমোহর ঠিক করা শ্রেয়। সর্বনিম্ন ১০ দিরহাম কিংবা সমপরিমাণ সম্পদ মোহরানায় ধার্য করতে হবে। উত্তরাধিকারীদের ঠকালে ইবাদত কবুল হয় না।

আরও পড়ুনআজানের দোয়া২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সুরা নিসার ১১ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মিরাসের বিধিবিধান বর্ণনার পাশাপাশি নারী ও শিশুর উত্তরাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। ইসলামের প্রায় বিধানের মূলনীতি আল্লাহ তাআলা নিজে কোরআনে বলে দিয়ে শাখাগত খুঁটিনাটি বিধান নবীর মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। কিন্তু মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের শাখাগত প্রায় সব খুঁটিনাটি বিধান আল্লাহ নিজে সরাসরি বলে দিয়েছেন। আত্মীয়ের নাম নিয়ে বলে দিয়েছেন, কে কতটুকু পাবে। জাহেলি যুগে নারী ও শিশুদের উত্তরাধিকার হিসেবে কিছুই দেওয়া হতো না। ইসলামের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের উত্তরাধিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো উত্তরাধিকারীদের সম্পদ থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা হয়। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদ থেকে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা, ঋণ আদায়, স্ত্রীর দেনমোহর আদায় এবং অসিয়ত তার প্রাপককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর তাঁর অবশিষ্ট সম্পত্তি ইসলামি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে কম–বেশি করা যাবে না। কাউকে ঠকানো যাবে না। মা, স্ত্রী ও কন্যাকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। ওয়ারিশ ঠকানো ও তাঁদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা ভয়াবহ পাপ। ওয়ারিশ ঠকালে ইবাদত কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে অন্যায়ভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬১০)

যে ১৪ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করা হারাম

১৪ শ্রেণির নারী আছেন, যাঁদের সঙ্গে রক্ত, দুধ কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে বিয়ে করা যায় না। সুরা নিসার ২৩ থেকে ২৫ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ১৪ শ্রেণির নারী হলো মা, দাদি ও নানি, কন্যা, সহোদর বোন, আপন ফুফু, আপন খালা, আপন ভাতিজি, আপন ভাগনি, দুধমা, দুধবোন, শাশুড়ি, স্ত্রী পক্ষের কন্যা, পুত্রবধূ এবং একসঙ্গে দুই বোন।

৭টি মৌলিক হক

সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সাতটি মৌলিক হক যথাযথভাবে পালনের আদেশ করেছেন; যেমন এক. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, দুই. মা-বাবা, তিন. নিকটাত্মীয়, চার, এতিম-মিসকিন, পাঁচ. প্রতিবেশী, ছয়. অসহায় মুসাফির ও সাত. নিজের অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচরণ করা। একজন প্রকৃত মুমিনের গুণ হলো, এই হক আদায় করা এবং তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। পাপী, দাম্ভিকেরা এই হক আদায় করে না। আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।

 রায়হান রাশেদ : লেখক ও আলেম

আরও পড়ুনরোজার প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন১২ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ৯ জন নিহত: এইচআরএসএস
  • শাহজাদপুরে আগুনে নিহত চারজনের মরদেহ ঢামেকে
  • অনিয়মের খোঁজ নেওয়ায় সাংবাদিকের চাকরি খাওয়ার হুমকি বেরোবি কর্মকর্তা
  • ইসরায়েলে ছুরি হামলায় নিহত ১, আহত ৩
  • ভোলায় চুরির অভিযোগে একজনের দুই চোখে গুরুতর জখম, কাটা হলো দুই আঙুল
  • ৭টি মৌলিক হক
  • পূবালী ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, বেতন স্কেল ৩৬,৫০০-৬৯,৫০০
  • মাগুরায় বিএনপির সদস্য ফরম সংগ্রহ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০
  • ইউক্রেনের চিকিৎসাকেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া