বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 3rd, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার কয়েকজন অবৈধ অভিবাসীকে কিউবার গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত কুখ্যাত বন্দিশিবিরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত শনিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দেশটিতে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন।
ওই সংগঠনের নাম দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)। তারা ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফেডারেল আদালতে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছে। গুয়ানতানামো বের কঠিন পরিস্থিতি এবং সেখানে অবস্থান করা অভিবাসীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইন লঙ্ঘন করা হবে।
আদালতে জমা দেওয়া এসিএলইউর নথিতে ১০ জন অবৈধ অভিবাসীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকেরা রয়েছেন। তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা টেক্সাস, অ্যারিজোনা ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে আটক রয়েছেন। তাঁদের কয়েকজনকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি আগে থেকেই দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। সেখানে এসিএলইউর এই আইনি পদক্ষেপকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন। তিনি জানান, এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে মিলে পদক্ষেপ নেবেন তারা।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প। এরপর ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকেই গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটির বন্দিশিবিরে অবৈধ অভিবাসীদের পাঠানো শুরু করা হয়। বিদেশি অপরাধীদের আটক রাখার জন্য এই বন্দিশিবিরের কুখ্যাতি রয়েছে। তবে ওই ১০ অভিবাসীর কেউ কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য বা অপরাধী নন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের ভাষ্য অনুযায়ী, আটক অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যাঁরা ‘সবচেয়ে খারাপ’ তাঁদের গুয়ানতানামো বের বন্দিশিবিরে পাঠানো হচ্ছে। তবে তাঁর মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যই বলছে, এর আগে ওই শিবিরে পাঠানো ভেনেজুয়েলার ১৭৭ অভিবাসীর এক–তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ ছিল না।
এসিএলইউর আবেদনে বলা হয়েছে, গুয়ানতানামো বের ওই বন্দিশিবিরে জানালাবিহীন কক্ষে অভিবাসীদের প্রতিদিন অন্তত ২৩ ঘণ্টা করে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয়। যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না পরিবারের সঙ্গে। বন্দিশিবিরের নিরাপত্তারক্ষীরা আটক ব্যক্তিদের ওপর মৌখিক ও শারীরিকভাবে আক্রমণও করেন। তাঁদের চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পান করতে দেওয়া হয় না পানি। নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নির্যাতনের এসব ঘটনার জেরে বন্দীদের মধ্যে আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভেনেজুয়েলার কয়েকজন অভিবাসীকে গুয়ানতানামো বেতে স্থানান্তর আটকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফেডারেল বিচারক। তাঁদের বিষয়েও আদালতে গিয়েছিল এসিএলইউ। পরে তাঁদের নিজ দেশ ভেনেজুয়েলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ শ ব র পদক ষ প অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্ক শিগগির দায়িত্ব ছাড়ছেন, বলেছেন ট্রাম্প
ইলন মাস্ক আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের জানিয়েছেন।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ককে নবগঠিত সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটা সরকারের সরাসরি কোনো অংশ নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় ও কর্মীবহর কমানো ছিল এই বিভাগের কাজ।
ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর পর মাস্কের পরামর্শে অনেকগুলো বড় বড় সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডি বন্ধ করা এবং লাখ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে অবসরে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত দেশটিতে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল।
ইলন মাস্কের সরে যাওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্য সম্পর্কে অবগত তিনটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইলন মাস্ক এখন তাঁর ব্যবসায়িক কাজে ফিরে যাবেন। পাশাপাশি তিনি সরকারকে সহায়তার একটি ভূমিকা পালন করবেন।
মাস্ক ও তাঁর বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন ট্রাম্প। তবে সম্প্রতি দুজনেই এই বিষয়ে একমত হন যে, মাস্কের সরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে।
ডিওজিইর দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে মাস্ক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। কিন্তু চঞ্চল মনোভাবের কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরের লোকজন এবং প্রশাসনের বাইরের অনেক মিত্র মাস্ককে অপছন্দ করা শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ভারী হতে থাকে। অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ এই ধনীকে সম্পদের পরিবর্তে রাজনৈতিক দায় হিসেবে দেখতে শুরু করেন ট্রাম্পের দলের রাজনীতিবিদরা।
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও মাস্ক সম্ভবত প্রেসিডেন্টের অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন। মাঝে–মধ্যে তাঁকে হয়তো হোয়াইট হাউসে দেখা যাবে।