পরিবেশবান্ধব ভেগান লেদার উদ্ভাবন করে সাড়া জাগালেন নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী সাদিয়া
Published: 3rd, March 2025 GMT
নিজের গবেষণায় পরিবেশবান্ধব ভেজিটেবল লেদার (চামড়া) তৈরি করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন ইসরাত জাহান সাদিয়া নামে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাকৃতিক নানা উপাদানে নিজের হাতে তৈরি এই চামড়া দিয়ে মানসম্মত আধুনিকমানের আকর্ষণীয় জুতো, স্যান্ডেল, ঘড়ির বেল্ট ও ব্রেসলেট বানিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সাদিয়া।
বহির্বিশ্বের কিছু দেশে স্বল্পমাত্রায় ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক এ ধরণের কাজ হলেও বাংলাদেশে এই ধরণের গবেষণামূলক অর্জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে এই প্রথম। পরিবেশবান্ধব ভেজিটেবল লেদার (চামড়া) উদ্ভাবনকারি ইসরাত জাহান সাদিয়া নারায়ণগঞ্জ শহরের আর.
সাদিয়ার এই উদ্ভাবন দেশের চামড়া শিল্পে যুগান্তকারি অবদান রাখতে পারে এবং এই চামড়া পশুর চামড়ার বিকল্প হিসেবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে মনে করছেন তার শিক্ষকবৃন্দ। শিক্ষার্থী সাদিয়ার গবেষণামূলক এই সাফল্যের মাধ্যমে দেশে টেকসই চামড়া শিল্পে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন হয়েছে বলেও মনে করছেন তার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে ইসরাত জাহান সাদিয়া তার এই গবেষণার বিষয়টি প্রকাশ করেন। একই সাথে তার উদ্ভাবিত ভেজিটেবল লেদার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকর্ষণীয় সামগ্রী উপস্থাপন করেন। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন সাদিয়ার সহপাঠী সহ শিক্ষকবৃন্দ।
এসময় ইসরাত জাহান সাদিয়া জানান, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের আওতায় ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত এর তত্ত্বাবধানে ও অনুপ্রেরণায় গবেষণা করে তিনি এই ভেগান লেদার তৈরি করছেন।
এই ভেজিটেবল লেদার তৈরি করতে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক সবজি, ফলের এক্সট্রাক্ট ও কেমিক্যাল এর মিশ্রণ সহ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেছেন, যা সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য। মূলত ঘরোয়াভাবেই বিটরুট, কফি ও কয়লার থেকে বিভিন্ন অনুপাতের রাসায়নিক মিশ্রণ সৃষ্টি করে এই ভেগান লেদার তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
গবেষণার বিষয়ে ইসরাত জাহান সাদিয়া বলেন, আমি সবসময়ই পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। এই ভেজিটেবল লেদার প্রকৃতির ক্ষতি না করেই উচ্চমানের বিকল্প দিতে সক্ষম। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সবজি ও ফলের রস থেকে চেষ্টা করে অবশেষে বিটরুট, কফি ও কয়লা আমার কাঙ্খিত ফল পেয়েছি।
এই তৈরিকৃত লেদার নিয়ে আমার ভবিষ্যতে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে। এই তৈরিকৃত লেদার থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন এক্সেসরিস ও জুতা প্রাথমিকভাবে তৈরি করার প্রয়াস করেছি। আমার উদ্দেশ্য লক্ষ্য হচ্ছে, এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা এবং বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়িত্বশীল পরিবর্তন আনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত বলেন, "আর.পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগ বরাবরই শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করে। প্রতিটি কোর্সে টেক্সাইলের ব্যাসিক, ফ্যাশন ও ডিজাইন এর মূল বিষয়গুলো শিক্ষকরা যত্ন সহকারে পড়ানোর চেষ্টা করেন।
আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার ফলেই এমন চমৎকার আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, এটি শুধু পরিবেশের জন্যই উপকারি নয়। বরং চামড়া শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এই গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ফলে দেশের ফ্যাশন ও টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের এই সাফল্যময় প্রেজেন্টেশনের দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ এর ডিজাইনার ও প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস। তিনি সাদিয়ার এই ধরণের গবেষণার প্রসংশা করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণায় উদ্যোগি হওয়ার আহবান জানান।
আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগের প্রসংশা করে সৌমিক দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিটি বিভাগ যদি শিক্ষার্থীদের এভাবে অনুপ্রেরণা দেয় তবে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে ও গবেষণায়য় ভালো সাফল্য অর্জন করবে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশনের দিন আরও উপস্থিত ছিলেন আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি আর আই এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সহকারী অধ্যাপক ড.মো. তরিকুল ইসলাম। গবেষণার মান ও কাজের প্রসংশা সহ বিভাগের সাফল্য কামনা করেন তারা।
এছাড়া আর.পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের এমন সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে উৎসাহিত করবেন বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইসর ত জ হ ন স দ য় ভ জ ট বল ল দ র পর ব শ স ফল য ধরণ র
এছাড়াও পড়ুন:
আ’লীগের ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে জাকির খানের মিছিল ও সমাবেশ
আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপি নেতা জাকির খানের অনুসারীরা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকালে শহরে ২নং রেলগেটস্থ মহানগর বিএনপির সাবেক কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিশাল মিছিল বের করে তারা। মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে এ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলে প্রায় সহস্রাধীক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশগ্রহণ করে।
মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়াস্থ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। মিছিলে থাকা প্রায় সহস্রাধীক নেতাকর্মীরা ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো’ আওয়ামী লীগের আস্তানা বাংলাদেশে রাখবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এসময় তাদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা শহর।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিগত দিনের খুনি সরকার দেশের বাইরে ভারতে অবস্থান করে এ সোনার বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের জানমালের ক্ষতি করার নীলনকশা তৈরি করেছেন।
আজকে রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে এবং আমাদের নেতা জাকির খানের পক্ষে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে মাঠে নেমেছি। ইনশাআল্লাহ্ যতদিন না জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাবো না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বক্তারা আরও বলেন, যারা এ ঝটিকা মিছিল করছেন আপনাদের সাবধান করে দিচ্ছি কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। যদি বাংলাদেশের জনগণের জানমালের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা কেউ ঘরে বসে থাকবো না।
আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে জাকির খানের পক্ষে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বো। আপনাদের প্রতিরোধ করতে যা যা করা দরকার, আমরা তাই করতে প্রস্তুত আছি।
বক্তারা শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ভারতে বসে আপনার মোষ্টিম কিছু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ আর কুত্তালীগ দিয়ে দেশের আঠারো কোটি মানুষের শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আপনাকে বলে দিচ্ছি, এর পরিনাম শুভ হবে না।
দেশ নায়ক তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এবং নারায়ণগঞ্জের আপামর জনসাধারনের নেতা আমাদের নেতা আমাদের অহংকার জাকির খানের নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
দেশের আঠারো কোন মানুষের শান্তির জন্য যদি আমাদের বুকের তাজা রক্তেরও প্রয়োজন হয়, আমরা রাজপথে তা ঢেলে দেবো। তবুও কোন অবস্থাতেই দেশের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হতে দেবো না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির অন্যতম নেতা ও জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম টুলু, মহানগর বিএনপি নেতা সলিমুল্লাহ্ করিম সেলিম, আমিনুল ইসলাম, ফরিদ আহমেদ, মহানগর মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রতন, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন খান, জেলা যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি এইচ এম হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম হানিফ, মহানগর মৎস্যজীবী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রী ঋষিকেশ মন্ডল মিঠু, যুগ্ম আহ্বায়ক মীর মোহাম্মদ রাজীব, শাহীন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক লিমন ভূঁইয়া, মহানগর কৃষকদলের সহ সভাপতি সালেহ আহমেদ রনি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ, বন্দর উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়ন, ফতুল্লা থানা শহীদ জিয়া পরিষদের সভাপতি নয়ন তালুকদার, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিংরাজ খান, সরকারি তোলারাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য ফাহিম আহমেদ প্রমূখ।