রামনগর স্কুলে ৩টি কক্ষেই চলছে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান
Published: 3rd, March 2025 GMT
বন্দরে ২৬নং ওয়ার্ডের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২২ নং রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশের হার কিংবা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাটির বিশেষ সুনাম থাকলেও এটির অভ্যন্তরে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা ও নানামুখী সমস্যা।
এক সময় ৫শ’রও অধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করলেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসলীলায় অবতীর্ণ হতে থাকায় বর্তমানে মাত্র ৩শ’ জন শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে এর কার্যক্রম। যেন দিনে দিনে হ্রাস পেতে যাচ্ছে এখানকার শিক্ষার হার।
সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে উঠে আসে নানা তথ্য-উপাত্ত। বিদ্যালয়ের জনৈক অভিভাবক আকবর আলী জানান, বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলিত। এটির প্রতি কারো কোন খেয়াল নেই। সরকারিভাবেও এটি উন্নয়নের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
স্কুলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে অথচ একটা ভবনের কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খুব কষ্ট করে লেখা-পড়া করছে। বর্ষা মওসুমেতো বাচ্চারা ক্লাসই করতে পারে না কারণ পুরো ক্লাসরুম পানিতে ডুবে যায়।
অপরাপর অভিভাবক আকলিমা বেগম জানান,২৬নং ওয়ার্ডে একটি মাত্র স্কুল সেটির কোন পরিবর্তণ দেখছি না। ৩টা রুমে কিভাবে ৩০০ বাচ্চা পড়া-লেখা করে আমার বুঝে আসে না।
আমাদের আশে পাশের ওয়ার্ডগুলো অনেক স্কুল রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম থাকার পরও নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক দিন ধরেই বাচ্চারা কষ্ট করে পড়া-লেখা করার পরও কারো চোখে পড়ছে না। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমসিম খেলেও চাকুরীর স্বার্থে এখনো হাল ছাড়েননি মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা।
তারা মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই তাদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূরীকরণে এগিয়ে আসবে। এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা বেগম।
নাসিমা বেগম আরো জানান, এলাকাবাসী শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়টি চিন্তা করে ১৯৩০ সালে তার পিতা আব্দুল জব্বার বিদ্যালয়ের জন্য ১০ শতাংশ সম্পত্তি দান করেন। সেই থেকে তারা বিদ্যালয়ের পিছনে নানাভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
নিজেদের কষ্ট হলেও শিক্ষার মান বজায় রেখে তারা বিদ্যালয়টি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
৩টি কক্ষের মধ্যে প্রতিটি কক্ষে ১শ’রও অধিক শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করানো হয়। কিছুই করার নেই আমরা নিরুপায়। এক কক্ষে ১শ’রও অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান করানো হয় সেটা কোন সমস্যা নয় বর্ষা মওসুমে প্রতিটা ক্লাসরুম হাটু পানিতে ডুবে যায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয়। তার উপরে ক্লাসরুমগুলো এতোটাই অন্ধকার বাতি না জ্বালিয়ে সেখানে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আর বিদ্যুত বিভ্রাট হলেতো কোন কথাই নেই একেবারে অন্ধকারে গরমে ভিজে ভিজে মোমবাতি কিংবা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস করতে হয়। ওই মুহুর্তটাকে মনে হয় আমরা যেন এখনো আদিম যুগে রয়ে গেছি।
বিদ্যালয়ের করুন পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল করিম জানান, ২২নং রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বন্দরের ৪টি স্কুলের ভবন জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ডিডি মহোদয়ের নিকট গতবছরের ২০ ডিসেম্বর চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি।
আমরা আশাবাদী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ভবনগুলো পেয়ে যাবো। চারটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেলে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজটাই আগে ধরা হবে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র মনগর স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাঁকোই ভরসা ১৭ গ্রামের মানুষের
বাঞ্ছারামপুরে তিতাস নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই উপজেলার ১৭ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষের। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার মানুষ। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্থানে খেয়া নৌকা চলাচল করেছে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তিতাস নদীর এই স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরদাবাদ ইউনিয়নের চরলহনিয়া ওয়াই সেতুর নিচ থেকে তিতাস নদীর একটি শাখা কলাকান্দি, পূর্বহাটি, ফরদাবাদ, পিঁপিড়িয়াকান্দা, দুবাচাইল, বাজে বিশারা, ভিটিবিশারা, গোকুলনগর গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইমামনগর পর্যন্ত গিয়েছে। দড়িকান্দির ইমামনগর এলাকার আনন্দবাজার সংলগ্ন তিতাস নদীতে পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এ এলাকার অনেক জায়গা দিয়ে মানুষ হেঁটেই নদী পারাপার হতে পারে। ইমামনগর আনন্দবাজার থেকে নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের মধ্যে একটি খেয়া নৌকা চলাচল করত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসী নিজেদের টাকায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে। এই সাঁকো ব্যবহার করে নবীনগর উপজেলার রতনপুর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভিটিবিশারা বাজেবিশারা, শাগদা, শ্রীকাইল, পেন্নাই, চন্দ্রনাইল, দুবাচাইল, রতনপুর, সাহাপুর, সাতমোড়া, মোল্লা, ভাউচাইল গ্রামের লোকজন বাঞ্ছারামপুরের কড়িকান্দি ফেরি পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। অন্যদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ইমামনগর, দড়িকান্দি, গোকুলনগর, খাল্লা, ফরদাবাদ গ্রামের লোকজন নবীনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা, চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে।
সাঁকো এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইমামনগর গ্রামের আনন্দবাজার থেকে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকোটি নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের বাংলাবাজার পর্যন্ত গেছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুটের মতো। এই সাঁকো ব্যবহার করে এ এলাকার মানুষ প্রতিদিন দুই বাজারে ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, মুরাদনগর, নবীনগরে যাতায়াত করে। বাঁশের পিলারের ওপর কাঠ দিয়ে এ সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তির আড়াই লাখ টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে।
স্কুল শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলে, ‘এ সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি কখন যেন পড়ে যাই। এ জায়গায় পাকা সেতু নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী মুসা মিয়া জানান, নদীতে সেতু না থাকার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে অনেকেই এখান থেকে বাজার করতে আগ্রহী হন না।
রতনপুর গ্রামের চুন্নু মিয়া বলেন, ‘আমরা ঢাকায় গেলে সচরাচর এ পথটা ব্যবহার করি। কিন্তু নদীতে সাঁকোর কারণে সরাসরি গাড়ি দিয়ে যেতে পারি না। এতে আমরা ভোগান্তির শিকার হই।’
ভিটিবিশারা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, তাদের গ্রামের সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এই অংশে যদি সেতু নির্মাণ হয় তবে অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা যাবে।
গোকুলনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা জরুরি প্রয়োজনে নবীনগর উপজেলায় যেতে চাইলে বিকল্প পথ হিসেবে এটা (সাঁকো) ব্যবহার করি। কিন্তু সাঁকো থাকার কারণে হেঁটে যেতে হয়, যানবাহন ব্যবহার করতে পারি না। এতে সময় ও পরিবহন খরচ দুটোই বেড়ে যাচ্ছে।’
দড়িকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিমের ভাষ্য, এই জায়গা দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। বিশেষ করে নবীনগর উপজেলার মানুষ ঢাকায় যেতে এই সড়ক ব্যবহার করে। এতে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যায়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে নবীনগর উপজেলার মানুষের উপকার হতো। পাশাপাশি এলাকার মানুষ এ পথ ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যেতে পারবে।
উপজেলার প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য কয়েকবার সার্ভে করা হয়েছে। বিষয়টি দুই উপজেলায় হওয়ার কারণে সময় লাগছে।