রাজনৈতিক সহিংসতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৬ জনসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আর এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০৪টি। তবে গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতার ঘটনা কিছুটা কমেছে।

আজ সোমবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।

সংস্থাটি বলছে, ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক সহিংসতায় বিএনপির ৫ জন, আওয়ামী লীগের ১ জন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন নিহত হয়েছেন। অপর ২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। আর এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০৪টি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৭৫৫ জন।

গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, গত জানুয়ারি মাসে ১২৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৫ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৯৮৭ জন।

ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ১০৪টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের ঘটনা ঘটেছে ৫৮টি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৯৪ জন ও নিহত হয়েছেন ৫ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১১৫ জন ও নিহত হয়েছেন ২ জন। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬ জন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের জেরে তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে তিনটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভিকটিমের পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিরাজ হোসেন ও মো.

জুম্মন নামের দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারে বিমানবাহিনী ঘাঁটিসংলগ্ন সমিতিপাড়ার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামের একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে অন্তত ১৯টি হামলার ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ব এনপ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ১৩৪ জনের 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, হামলা, নারী ও নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ১৩৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামে একটি সংস্থা এই তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
  
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত কমপক্ষে ৭৫৫ জন। এসব সহিংসতার ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৫৮টি ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের ও আহত হয়েছে ৪৯৪ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন নিহত ও ১১৫ জন আহত হয়েছেন। 

রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯ জনের মধ্যে বিএনপির পাঁচজন, আওয়ামী লীগের একজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একজন নিহত হয়েছেন। অপর দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীর হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির পাঁচজন, জামায়াতের একজন নারী সদস্য ও চরমপন্থি দলের তিনজনসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।  

এতে বলা হয়, এ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ছয়টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হয়ে আবুল কাসেম নামে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল ও যুবদলের সংঘর্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।  

এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ মাসে সারাদেশে কারাগার ও হাজতে কমপক্ষে ১২ জন আসামি মারা গেছেন। গণপিটুনির ১৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন। এ ছাড়া ১৯টি হামলার ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাঁচটি মামলায় ১১ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ছয় মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০ জনকে।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিএসএফের সাতটি হামলার ঘটনায় একজন বাংলাদেশি নিহত, ছয়জন আহত ও ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তিনটি হামলার ঘটনায় ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। ২৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৭ জন। দুর্ঘটনায় ৯ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।

ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৭ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও ১৩ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। অন্যদিকে ১০৪ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯ জন। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৫ জন শিশু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ১৩৪ জনের