যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে ‘মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে’ উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান
Published: 3rd, March 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিতে ‘মৌলিক পরিবর্তনের ঘটনায়’ গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, জনগণকে ‘বিভক্ত ও প্রতারিত’ করতেই নানা বিভাজনমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে।
আজ সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এক বক্তৃতায় ফলকার টুর্ক এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়ে গত কয়েক দশকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের সমর্থন পেয়েছিলাম।.
ফলকার টুর্কের অভিযোগ, ‘মানুষকে বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে যেসব নীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল, এখন সেই সব নীতিকেই বৈষম্যমূলক তকমা দেওয়া হচ্ছে।...জনগণকে বিপর্যস্ত, প্রতারিত এবং বিভক্ত করতেই এসব বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলা হচ্ছে। এসব কিছু অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করছে।’
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর অনেক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এসব আদেশের মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও বেসরকারি খাতের নানা কর্মসূচি বাতিল, স্থগিত বা সংকুচিত করেছেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় এই কাউন্সিল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা নিয়ে আজ জোরালো মন্তব্য করেছেন ফলকার টুর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ে তাঁর প্রশাসন ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবার আগে’ নীতির সঙ্গে সংস্থাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফলক র ট র ক কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন হয়নি: ফরহাদ মজহার
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমরা মনে করি, এই সরকার আমরা যেমন করে প্রত্যাশা করেছিলাম, তেমন করে হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের তার যে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সরকার দরকার ছিল, সেটি আমরা পাইনি। না পাওয়ার ফলে আমরা অনেক কিছু নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এবং গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি।
শুক্রবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘শহরের গরিব শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিনা মূল্যে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশুদ্ধ পানির’ দাবিতে মানববন্ধন এবং গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ আয়োজন করে ভাববৈঠকি, জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর ও গণঅভ্যুত্থান সুরক্ষা মঞ্চ।
ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা ড. ইউনূসকে বলতে চাই, তার যে সীমাবদ্ধতা এবং বাংলাদেশের রাজনীতির যে সীমাবদ্ধতা এটা আমরা বুঝতে পারি এবং আমরা তার সঙ্গে ১০০ ভাগ রয়েছি। কিন্তু কিছু কিছু কাজ তাকে অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এইখানে আপনার কোনো রকম তালবাহানের সুযোগ নেই। তার মধ্যে একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে পানি। বাংলাদেশের জনগণকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা, এটা তার প্রথম একটা কর্তব্য। কারণ পানির সঙ্গে আমাদের জীবন রক্ষার সম্পর্ক জড়িত।
তিনি বলেন, সরকারকে প্রথম কাজ করতে হবে জনগণের সুপেয় পানি নিশ্চিত করার। ফলে আমরা এই সরকারকে সর্বোচ্চভাবে সহায়তা করব, যেন ঢাকা শহরে অবিলম্বে মানুষ বিনা পয়সায় সুপেয় পানি পায়। অত্যন্ত কম মূল্য পানি সরবরাহ করুন, যারা গরিব তারা যেন কিনতে পারে এবং একেবারেই যাদের সামর্থ্য নাই বা যারা শ্রমজীবী মানুষ তাদের বিনা পয়সায় পানি সরবরাহ করুন। আমরা মনে করি পানি পাওয়ার অধিকার গরিব মানুষের রয়েছে, পাবলিক প্লেসে বিনা পয়সায় পানি পাওয়ার অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। ফলে আমরা অতিসত্বর এটা বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, নদীমাতৃক দেশের সম্পদ পানি। পানি আমাদের অর্থনৈতিক বিকাশের ভিত্তি। ফলে বাংলাদেশে আগামী উন্নয়নের যে নীতি, সে উন্নয়নের নীতিরও গোড়াতে (মূলে) থাকবে পানি। বাংলাদেশ মাত্রই এটা পানিভিত্তিক সংস্কৃতি, নদী ভিত্তিক সংস্কৃতি ফলে পানি আমাদের জীবন রক্ষা করে, প্রতিটি জীবের প্রাণ রক্ষা করে। এই নীতির ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অবিলম্বে একটি পানি কমিশন গঠন করতে হবে এবং জনগণকে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এখানে তালবাহানা করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এই যে পানির মতো সম্পদ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। এই মিস্টি পানির দাম বিভিন্ন দেশে জ্বালানির দামের চেয়েও বেশি, দুধের দামের চেয়েও বেশি। এই সম্পদ সুরক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো ধনী দেশের কাতারে পৌঁছাতে পারি। এটা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পদ। ফলে সুপ্রিয় পানি যারা নষ্ট করছে, বিষ দিয়ে, টক্সিক রাসায়নিক দ্রব্য নদীতে, সাগরে ফেলে দিয়ে, তাদের ক্রিমিনাল (অপরাধী) হিসেবে গণ্য করতে হবে। তার জন্য অবিলম্বে আমাদের ফৌজদারি আইন দরকার এবং যেসব বিষ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ, পানি নষ্টের জন্য দায়ী সেই সব বিষ বন্ধ করার নির্বাহী আদেশ আমরা চাই।
মানববন্ধন ও গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, রিকশাচালক স্বপন মিয়া, উবিনীগের গবেষক সীমা দাস সীমু, লেখক ও প্রকৌশলী সাদিক মোহাম্মদ আলম, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ, সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ. মেজর আহমেদ ফেরদৌস, অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদুল ইসলাম নাহিদ, ছাত্র সমন্বয়ক ফরহাদ হোসেন, গণ আকাঙ্ক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর প্রমুখ।