দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এবং জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। মজুদদারির বিরুদ্ধে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই অভিযান পরিচালনা করেন তারা। অভিযানে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ দেখতে না পেয়ে তারা ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের উপর ক্ষুদ্ধ হন। 

এ ব্যাপারে আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ভোজ্যতেলের আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও আড়তদারদের নিয়ে জরুরি সভা আহ্বান করেছেন।

আজ সোমবার (৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে খাতুনগঞ্জে যৌথভাবে বাজার তদারকি ও বিভিন্ন পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ কার্যক্রম দেখতে অভিযানে নামেন চট্টগ্রামের মেয়র ডা.

শাহাদাত ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তারা খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করেন এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি, জড়িতদের ৫৩.২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড

নড়াইলে বাজার মনিটরিং শুরু

অভিযানকালে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত সাংবাদিকদের বলেন, “সাধারণ মানুষ বেশ কয়েক দিন ধরে কমপ্লেইন করছিল, ভোজ্যতেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এবং যেগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা, ২০০ টাকার উপরে চলে গেছে। সে কারণে আজ আমরা এখানে এসেছি। এখানে দেখতে পাচ্ছি ভোজ্যতেল মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না। দুয়েকটা জায়গায় যে তেলগুলো দেখেছি, ল্যাব টেস্টের জন্য অলরেডি নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। পরীক্ষা করে দেখব, আদৌ এগুলো ভোজ্য তেলের মতো কি-না। আমরা মনে করি রমজান মাসে নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত।’’

মেয়র জানান, গত প্রায় এক মাস ধরে চট্টগ্রামের বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। রোজা শুরুর আগের সপ্তাহ থেকে সেই সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

মেয়র বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আগামীকাল ব্যবসায়ীদের সার্কিট হাউজে ডেকেছি। তেলের ব্যবসায়ী যারা আছে, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক সবার সঙ্গে বসব। কেন তারা দাম বাড়াল? দাম কমানোর জন্য তাদের ডাকছি। অন্যথায় আমাদের হয়ত আইনগত ব্যবস্থায় যেতে হবে।’’ 

জেলা প্রশাসক বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে বাজারে তেল সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এবং নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে সক্রিয় আছে। 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ ত নগঞ জ ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

এবারের রোজায় পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, আলুসহ কিছু ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের স্বস্তি দিলেও তাঁরা বিপাকে রয়েছেন ভোজ্যতেল নিয়ে। ভোজ্যতেল, বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছিল কয়েক মাস আগে থেকে। রোজা চলে এলেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রমজানে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে কোনো সংকট হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম স্থিতিশীল আছে বলেও তারা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু রোজার শুরুতে এসে দেখা গেল বোতলজাত সয়াবিন বাজার থেকে প্রায় উধাও।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে শুক্রবার দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। বিশেষ করে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই সংকট চলছে। এই সুযোগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকা লিটার দরে। এই দর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাহিদার তুলনায় দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, তাহলে ক্রেতারা কেন বাজারে গিয়ে বোতলজাত তেল পাচ্ছেন না?

ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল উৎপাদন ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর দাবি, তারা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছে; কিন্তু ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। আবার খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ কম বলে তাঁরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না।

কয়েক দিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০ কার্টন ভোজ্যতেল উদ্ধার করেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ অভিযানে ২০২৩ সালের মে থেকে অক্টোবর উৎপাদিত পাঁচ লিটারের ছয় কার্টন সয়াবিন তেলও জব্দ করা হয়, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের মে থেকে অক্টোবরে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ তেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মনে রাখতে হবে, মজুত প্রবণতা তখনই শুরু হয়, যখন সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা থাকে। কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করলে বোতলের তেল মজুত করার ঝুঁকি কেউ নিত না। যেমন এবার চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়নি, কারণ সরবরাহ ভালো।

অন্যান্য দেশে ব্যবসায়ীরা রোজা, ঈদ, নববর্ষ ও বড়দিন উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেন; কিন্তু আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে নেন মওকা হিসেবে।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে থাকে; এই শাস্তি গুরু পাপে লঘু দণ্ডই মনে হয়। বাজারে সরবরাহব্যবস্থায় কী সমস্যা তৈরি হলো, কী উপায়ে তার সমাধান করা যায়, সরকারকে সেটার ওপর জোর দিতে হবে। বোতলজাত তেল সরবরাহের সংকটটি অনেক দিন ধরেই চলছিল। সেটা কেন সমাধান করা গেল না, খোলা তেল সরবরাহ করা গেলে বোতলের তেল সরবরাহ কেন বাড়ানো যাবে না, ব্যবসায়ীরা কি এবার অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভোজ্যতেলকে বেছে নিয়েছিলেন—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে যাঁরা ক্রেতাদের পকেট কাটছেন, তঁাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এমন যাতে না হয়, সেই বাজার কৌশল খুঁজে বের করা সরকারেরই দায়িত্ব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম, স্বীকার করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • কৃষকের ৮ টাকার লেবু কয়েক হাত বদলের পর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়
  • দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • দুইদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ২ মাস চলে গেল, আর কবে বই পাবে শিক্ষার্থীরা
  • বিকাশ–রকেট–ডেবিট কার্ডে কেন মেট্রোরেলের রিচার্জ সুবিধা চালু হচ্ছে না
  • গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা
  • অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
  • বগুড়ায় রোজা শুরুর আগেই সবজির বাজার চড়া, লেবুর হালি ৬০ টাকা