পুলিশকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়া, তিনজনকে গুলি করে খুন, ওসিকে পেটানোর হুমকি—এত অপরাধ করার পরও এখনো ধরা পড়েননি চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। পুলিশ এক মাস আগে তাঁকে ধরতে পুরস্কারও ঘোষণা করে। কিন্তু এরপরও হদিস পাচ্ছে না। পুলিশ ধরতে না পারলেও টিকটক ও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজের সরব উপস্থিতি।

এই সন্ত্রাসীকে কেন ধরতে পারছে না সেই প্রশ্ন উঠে আসে আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনেও। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সাজ্জাদ অত্যন্ত কৌশলী। তাঁকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামি তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো.

জামালের ছেলে তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

পলাতক সাজ্জাদ ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া এলাকায় জড়ো হলে গত রোববার পুলিশ সেখানে গিয়ে হাজির হয়। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ মিল্লাত (২৪), মোহাম্মদ আবুল হাসনাত ফাহিম (২০), মো. রুবেল (২৬)। তাঁদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, ছুরি, কাঁচি, মুঠোফোনসহ কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মিজান ও সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সন্ত্রাসী সাজ্জাদ সেখানে অবস্থান করছেন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত অভিযান শুরু করে। কিন্তু আগেই পালিয়ে যান তাঁরা।

এই ঘটনার পর আজ দুপুরে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ। সেখানে পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিরা বায়েজিদ এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে লিপ্ত আছে। মিজানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ছোট সাজ্জাদের বিরোধ আছে। তাঁরা এলাকায় ছোট–বড় দালান থেকে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি করে থাকেন। আমাদের কাছে তথ্য ছিল ছোট সাজ্জাদ সেখানে আসতে পারেন। আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৭টি এবং মিজানের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ ১০টি মামলা রয়েছে।’

পুরস্কার ঘোষণার পরও সাজ্জাদকে কেন গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না প্রশ্নের উত্তরে উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাজ্জাদ অত্যন্ত কৌশলী। আমরা জানতে পেরেছি দেশে রয়েছে। তাঁকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

চট্টগ্রাম নগরের পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম। আজ দুপুরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

বাউফলে তরমুজভর্তি ট্রলার ছিনতাইয়ের মামলায় যুবদল কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৩

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে চাঁদার দাবিতে কৃষকের তরমুজভর্তি ট্রলার ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে হওয়া মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি ছিনতাই হওয়া পাঁচ শ তরমুজ উদ্ধার করে ওই কৃষকের ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের যুবদল কর্মী মো. সাইফুল, মো. মেহেদী হাসান (২০) ও গোলাম মুর্তজা (৪০)। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে গত বুধবার রাতে এবং মেহেদী ও মুর্তজাকে আজ শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাইফুল নাজিরপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁকে উপজেলা ছাত্রদল বহিষ্কার করেছে। বর্তমানে তিনি যুবদলের সক্রিয় কর্মী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ, স্থানীয় চাষি ও ভুক্তভোগী কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার খেত থেকে ৮৬০টি তরমুজ কেটে ট্রলারে উঠিয়ে বরিশাল নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কৃষক মো. মানিক ব্যাপারী। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতা এনায়েত হোসেনের ছেলে মো. সাইফুল (৩৫) দেশি অস্ত্রসহ ২০-২৫ জনের একটি দল নিয়ে ট্রলারের চালককে মারধর করেন। এরপর চর রায়সাহেব থেকে তরমুজভর্তি ট্রলারটি ছিনিয়ে নিয়ে নিমদী লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে ইটভাটার কাছে নিয়ে নোঙর করে রাখেন তাঁরা। খবর পেয়ে কৃষক মানিক ব্যাপারী সেখানে গিয়ে ট্রলারসহ তরমুজ ফেরত চাইলে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাইফুল ও তাঁর লোকজন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মানিক ব্যাপারী ও তাঁর ছেলে সাগরকে মারধর করে তরমুজ অন্য ট্রলারে উঠিয়ে নিয়ে যান সাইফুল। পরে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে ট্রলার ফেরত দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় বুধবার রাত ১২টার দিকে মো. মানিক ব্যাপারী বাদী হয়ে মো. সাইফুল ইসলামসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে বাউফল থানায় মামলা করেন। ওই রাতেই পুলিশ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাইফুলের বিরুদ্ধে আগে থেকে দুটি মাদক মামলা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ছয়টি মামলা আছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লুট হওয়া পাঁচ শ তরমুজ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাউফলে তরমুজভর্তি ট্রলার ছিনতাইয়ের মামলায় যুবদল কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৩