‘পরিবারে পাগলি (মানসিক প্রতিবন্ধী) মা ছাড়া আমার আর কেউ নাই। আমিই রান্না করে মাকে খাওয়াই। মানুষের জমিতে কাজ না করলে ভাত জোটে না। অথচ ওরা (আসামিরা) আমার চোখ নষ্ট করে দিছে, পায়ের রগ কাটি দিছে। তিন দিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়িতে আসি শুয়ে আছি। পেটে খাব কী, ওষুধই–বা কী দিয়ে কিনব?’

আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের রাওতা গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩০)।

মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী গত বুধবার মধ্যরাতে রুবেল হোসেনকে একটি বইমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যান। দুষ্কৃতকারীরা তাঁর ডান চোখে চাকু ঢুকিয়ে দেন এবং ডান পায়ে জখম করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি ওই চোখে দেখতে পারছেন না।

এ ঘটনায় রোববার দুপুরে রুবেলের চাচা হাসান আলী বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দিলে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজ দুপুরে রুবেল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরের ভেতরে বয়স্ক কয়েকজন নারী রুবেলকে ঘিরে আর্তনাদ করছেন। তিনি নিজেও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। রুবেল জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলির সঙ্গে লাগোয়া দুটি গ্রাম রাওতা ও নটাবাড়িয়া। এখানে মাদকের ছড়াছড়ি। মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকাবাসীর সঙ্গে নটাবাড়িয়ার বাসিন্দা সাধু, মামুন, তারিকুল এবং মুলাডুলির বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (২২), মো.

শিহাব (২০) ও চ্যাপা সজীবের (২১) বিরোধ আছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মুলাডুলি থেকে সাধুর বাড়িতে মাদক কিনতে এলে গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া দেন এবং আশরাফুলকে মারধর করেন। এর জের ধরে তাঁরা রুবেল ও তাঁর চাচাতো ভাই সোহেলকে মারার হুমকি দেন।

রুবেল হোসেন বলেন, গত বুধবার তিনিসহ গ্রামের কিছু যুবক পাশের রাজাপুরের বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যান। সেখানে রাত ১২টার কিছু পরে তারিকুল ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে একটি দোকানের পেছনে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা রুবেলের ডান চোখে চাকু ঢুকিয়ে মণি উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে ধস্তাধস্তির কারণে চোখের দুটি রগ কেটে যায়। এ সময় তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যান।

রুবেলের ভগ্নিপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রক্তাক্ত রুবেলকে আমি বৃহস্পতিবার ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই দিন তাঁর ডান চোখে অপারেশন করা হয়।’

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আলমগীর বলেন, চোখের ভেতরের দুটি রগ কেটে গেছে। দুটি পাইপ লাগানো হয়েছে। এক মাস পর আবার অপারেশন করতে হবে। তখন চিকিৎসক বলবেন রুবেল আদৌ আর ওই চোখে দেখতে পারবেন কি না।

রুবেল হোসেনের হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে ‘ডান চোখের ওপর আঘাত’। এ ছাড়া তিনি ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্টের’ কারণে ‘মাইনর হেড ইনজুরি’ নিয়ে ভর্তি ছিলেন বলে প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে।

হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত সাধু ও তারিকুলের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তাঁরা আত্মগোপন আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি বিভাগের কাগজপত্র অনুসারে রুবেলকে গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়িতে পাঠানো হয়। তাঁর চোখের ও পায়ের চিকিৎসার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। ১৫ দিন পর সেলাই কাটার জন্য রুবেলকে আবার হাসপাতালে আসতে হবে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবর রহমান বলেন, রুবেলের চোখে ও পায়ে গুরুতর আঘাতের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আশর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।

এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ