সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে একটি চিংড়ির ঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে আটুলিয়া ইউনিয়নের বায়ারসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত শনিবার ১৯ বিঘার ঘেরটি দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অভিযোগকারী বাবুরাম হাউলী। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম তৈয়বুর রহমান। তিনি উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

জিডিতে বাবুরাম হাউলী উল্লেখ করেন, শ্যামনগরের তালবাড়িয়া মৌজার ৬ দশমিক ৪৮ একর জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য চাষ করে আসছেন তাঁরা। সম্প্রতি আলাউদ্দীন সরদার, যতী সরদার, তৈয়বুর রহমান ও মিজানুর রহমান নামের ব্যক্তিরা জোর করে ঘেরটি দখলের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। এরই জেরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জমিতে কাজের সময় ওই ব্যক্তিরা ঘেরে উপস্থিত হন। তাঁরা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এ সময় প্রতিবাদ করলে বাদী বাবুরামকে মারতে উদ্যত হন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁকে নানা হুমকিও দেওয়া হয়।

বাবুরাম জানান, থানায় জিডি করার এক দিন পরই গতকাল সন্ধ্যায় তৈয়বুরের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২২ জন তাঁর ওই ঘের দখল করেছেন।

এ বিষয়ে তৈয়বুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ওই জমি এত দিন আওয়ামী লীগের লোকজন বাবুরাম হাউলীর মাধ্যমে দখল করেছিলেন। যাঁদের জমি তাঁরা (মিজানুর রহমান ও দেবল হাউলী) এখন দখলে গেছেন। মৎস্যঘের কিংবা দখলের প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি জানান, মিজানুর রহমান ও দেবল হাউলী তাঁকে ডেকেছেন। আজ সোমবার তাঁদের সঙ্গে ঘেরে যাবেন তিনি।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান ও দেবল হাউলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ওই জমি তাঁদের দখলে ছিল। এখন বাবুরাম হাউলীরা ওই জমি দখল করতে চাচ্ছেন। ওই জমি যাতে বাবুরাম হাউলীরা দখল নিতে না পারেন, এ জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা। এ সময় ছাত্রদলের সাবেক নেতা তৈয়বুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, দুই দিন আগে থানায় জিডি হয়েছে। গতকাল ঘের দখল হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। দখল করে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন র রহম ন ও শ য মনগর ঘ র দখল ছ ত রদল দখল র

এছাড়াও পড়ুন:

সাঁকোই ভরসা ১৭ গ্রামের মানুষের

বাঞ্ছারামপুরে তিতাস নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই উপজেলার ১৭ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষের। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার মানুষ। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্থানে খেয়া নৌকা চলাচল করেছে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তিতাস নদীর এই স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরদাবাদ ইউনিয়নের চরলহনিয়া ওয়াই সেতুর নিচ থেকে তিতাস নদীর একটি শাখা কলাকান্দি, পূর্বহাটি, ফরদাবাদ, পিঁপিড়িয়াকান্দা, দুবাচাইল, বাজে বিশারা, ভিটিবিশারা, গোকুলনগর গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইমামনগর পর্যন্ত গিয়েছে। দড়িকান্দির ইমামনগর এলাকার আনন্দবাজার সংলগ্ন তিতাস নদীতে পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এ এলাকার অনেক জায়গা দিয়ে মানুষ হেঁটেই নদী পারাপার হতে পারে। ইমামনগর আনন্দবাজার থেকে নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের মধ্যে একটি খেয়া নৌকা চলাচল করত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসী নিজেদের টাকায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে। এই সাঁকো ব্যবহার করে নবীনগর উপজেলার রতনপুর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভিটিবিশারা বাজেবিশারা, শাগদা, শ্রীকাইল, পেন্নাই, চন্দ্রনাইল, দুবাচাইল, রতনপুর, সাহাপুর, সাতমোড়া, মোল্লা, ভাউচাইল গ্রামের লোকজন বাঞ্ছারামপুরের কড়িকান্দি ফেরি পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। অন্যদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ইমামনগর, দড়িকান্দি, গোকুলনগর, খাল্লা, ফরদাবাদ গ্রামের লোকজন নবীনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা, চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে।
সাঁকো এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইমামনগর গ্রামের আনন্দবাজার থেকে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকোটি নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের বাংলাবাজার পর্যন্ত গেছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুটের মতো। এই সাঁকো ব্যবহার করে এ এলাকার মানুষ প্রতিদিন দুই বাজারে ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, মুরাদনগর, নবীনগরে যাতায়াত করে। বাঁশের পিলারের ওপর কাঠ দিয়ে এ সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তির আড়াই লাখ টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে।
স্কুল শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলে, ‘এ সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি কখন যেন পড়ে যাই। এ জায়গায় পাকা সেতু নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী মুসা মিয়া জানান, নদীতে সেতু না থাকার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে অনেকেই এখান থেকে বাজার করতে আগ্রহী হন না।
রতনপুর গ্রামের চুন্নু মিয়া বলেন, ‘আমরা ঢাকায় গেলে সচরাচর এ পথটা ব্যবহার করি। কিন্তু নদীতে সাঁকোর কারণে সরাসরি গাড়ি দিয়ে যেতে পারি না। এতে আমরা ভোগান্তির শিকার হই।’
ভিটিবিশারা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, তাদের গ্রামের সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এই অংশে যদি সেতু নির্মাণ হয় তবে অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা যাবে।
গোকুলনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা জরুরি প্রয়োজনে নবীনগর উপজেলায় যেতে চাইলে বিকল্প পথ হিসেবে এটা (সাঁকো) ব্যবহার করি। কিন্তু সাঁকো থাকার কারণে হেঁটে যেতে হয়, যানবাহন ব্যবহার করতে পারি না। এতে সময় ও পরিবহন খরচ দুটোই বেড়ে যাচ্ছে।’
দড়িকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিমের ভাষ্য, এই জায়গা দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। বিশেষ করে নবীনগর উপজেলার মানুষ ঢাকায় যেতে এই সড়ক ব্যবহার করে। এতে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যায়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে নবীনগর উপজেলার মানুষের উপকার হতো। পাশাপাশি এলাকার মানুষ এ পথ ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যেতে পারবে।
উপজেলার প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য কয়েকবার সার্ভে করা হয়েছে। বিষয়টি দুই উপজেলায় হওয়ার কারণে সময় লাগছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রামনগর স্কুলে ৩টি কক্ষেই চলছে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান 
  • সাঁকোই ভরসা ১৭ গ্রামের মানুষের