সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও তাঁর স্ত্রী ঊষা রাণী চন্দের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়েছে।

নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী থাকার সময় দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দের নামে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ১৬৬ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৩ কোটি ৫০ হাজার ২ হাজার ৫৬৬ টাকা মূল্যের সম্পদ পাওয়া যায়। এ সময়ে তাঁর গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৩ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৮ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯ টাকা। ব্যয় ছাড়া সম্পদ অর্জনের জন্য নিট আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৯ টাকা। এ হিসাবে নারায়ণ চন্দ্র চন্দের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকা।

এ ছাড়া পৃথক আরেকটি মামলা করেছেন দুদকের একই কার্যালয়ের আরেক সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। এই মামলার প্রধান আসামি নারায়ণ চন্দ্র চন্দের স্ত্রী ঊষা রাণী চন্দ, আর দুই নম্বর আসামি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, ঊষা রাণী চন্দের নামে ১ লাখ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। একই সময়ে তাঁর দায়-দেনার পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দায়-দেনা বাদ দিয়ে ঊষা রাণী চন্দের নিট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার ২৩৮ টাকা। একই সময়ে তাঁর গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৬০ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৯ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ ১২ লাখ ৩২ হাজার ২২২ টাকা। ব্যয় বাদে তাঁর নিট আয়ের পরিমাণ ৪৮ লাখ ৭ হাজার ২৭ টাকা। সেই মোতাবেক উষা রাণী চন্দের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ২১১ টাকা। এ কারণে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঊষা রাণী চন্দ্র ও তাঁর স্বামী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্তের একপর্যায়ে দেখা যায়, নারায়ণ চন্দ্রের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী ঊষা রাণী চন্দও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। এ কারণে নারায়ণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে পৃথক একটি এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। তদন্তের সময়ে যদি আরও সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়, সেই বিষয়েও অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ম ণ জ ঞ ত আয় কর ছ ন স থ বর তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ