কালো দেয়াল মানেই একটি সমাজের নীরবতার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের তরুণেরা সেই দেয়াল রাঙিয়ে দিয়েছেন। তরুণদের সেই শিল্পগুলো নীরবতা পালনে অস্বীকৃতির সাক্ষ্য। প্রতিটি শিল্পকর্মই স্বাধীনতার সপক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। তাই গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

আজ সোমবার সকালের রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ইইউর সমতা, প্রস্তুতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার আদজা লাবিব এ মন্তব্য করেন। ঢাকায় ইইউ দূতাবাস ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আদজা লাবিব বলেন, ‘শিল্প মানেই স্বাধীনতা। কালো দেয়াল একটি সমাজের নীরবতার প্রতিফলন। সেই দেয়ালকে আপনারা রাঙিয়ে দিয়েছেন। দেয়ালগুলো বলছে: আপনারা নীরবতা পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। প্রতিটি শিল্পকর্মই স্বাধীনতার সপক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর।’

গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বেলজিয়ামের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদজা লাবিব বলেন, সংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তিনি ও ইইউ পাশে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের মূল ভিত্তি। গত বছর জুলাই-আগস্টে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা সবাই দেখেছি। কিন্তু আমি এটা আবিষ্কার করেছি যে জুলাই মাসে ৩১ দিনে শেষ হয়নি, তা শেষ হয়েছে ৩৬-এ। এই বইয়ের শক্তিশালী শিল্পকর্মগুলো ৫ আগস্ট বা ৩৬ জুলাই শুরু হওয়া রাজনৈতিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে ধারণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, তরুণেরা সৃজনশীলভাবে তাদের দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করতে গিয়ে বলছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন অর্জিত হওয়ার আগে জুলাইয়ের পরিসমাপ্তি সমীচীন হবে না। বইয়ের শক্তিশালী শিল্পকর্মগুলো দমন-পীড়নের ভয়াবহতা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে দেশের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে।

আদজা লাবিব বলেন, স্ট্রিট আর্টগুলোতে ট্র্যাজেডির প্রতিচ্ছবি রয়েছে। বিচার ও জবাবদিহির জন্য গর্ব ও আকাঙ্ক্ষাও আছে। এর আবেদনকে নির্দিষ্ট সময়ে আটকে রাখা যাবে না। কারণ, এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের অধিকার, মানুষের জীবনের মূল্যবোধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই শিল্পকর্মগুলোর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের মানুষের সাহস ও প্রত্যয়কে উদ্‌যাপন করি।’

বাংলাদেশের প্রতি ইইউর সমর্থনের কথা উল্লেখ করে আদজা লাবিব বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য মানবিক উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর অংশীদারত্ব একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং দুই পক্ষের অভিন্ন মূল্যবোধের কারণে গড়ে উঠেছে। ফলে বাংলাদেশে ইইউর সমর্থনের ওপর আস্থা রাখতে পারে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ব ব বল ন শ ল পকর ন রবত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ