স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নারীর ওপর আক্রমণের ঘটনা জাস্টিফাই (যৌক্তিকতা দেওয়া) করার অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ দাবি করেছে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’।

আজ সোমবার রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় আড়ংয়ের পেছনে লালমাটিয়া এলাকায় অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। গত শনিবার লালমাটিয়া বি ব্লক এলাকায় ‘মব’ তৈরি করে দুই নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ সময় এক নারীকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে একই স্থানে আজ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘মবের’ উস্কানিদাতায় পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার নারীরা যা করেছেন তা অপরাধ হলে সর্বোচ্চ সিভিল অফেন্স হয়। কিন্তু তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনা একটি ক্রিমিনাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ)। একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে একটা ক্রিমিনাল অফেন্সকে জাস্টিফাই করেন?’

শনিবার সন্ধ্যায় দুই তরুণী আক্রান্ত হয়েছিলেন ধূমপান করা নিয়ে। ধূমপান করায় তাঁদের ওপর চড়াও হওয়া এবং এক পর্যায়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার ফেসবুকে অনেকে প্রতিবাদ জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি তাঁরা (দুই তরুণী) নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তাঁরা (লোকেরা) বাধা দেওয়ায়, তাঁদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল।’ তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করে।’

এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অধীনে নারীরা নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন আজকের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়া নারীরা। অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেন তাঁরা।

সমাবেশের আগে আড়ংয়ের পেছনের সড়ক থেকে একটি মিছিল লালমাটিয়ার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘মবের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালাও এক সাথে’, ‘অবিলম্বে জাহাঙ্গীরকে, পদত্যাগ করতে হবে’, ‘বাধা আসবে যেখানে, লড়াই হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নারীরা।

অনেকের হাতে ‘স্লাটশেমিং বন্ধ করতে হবে’, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি, নিপীড়কের রাজনীতি’, ‘আমার দেশ, আমার রাস্তা, আমার অধিকার’, ‘নারীর বেলায় আইন দেখায়, পুরুষের বেলায় আইন কোথায়?’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল অফ ন স র ওপর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু

হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।

মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ