পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ফোরকান বিশ্বাস (৭০) নামের এক কৃষককে বাড়িতে ঢুকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকালে উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়ীয়া গ্রামে এ হামলা হয়। এ ঘটনার জন্য স্বজনেরা ভিটাবাড়ীয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরদার ও তাঁর লোকজনকে দায়ী করেছেন। বর্তমানে আহত ফোরকান বিশ্বাস ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। 

ফোরকান বিশ্বাসের নাতনি লামিয়া বেগম বলেন, সোমবার সকাল ১০টার দিকে ৮-১০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হঠাৎ তাদের বাড়িতে হামলা করে। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা সুমন সরদার, তার ভাতিজা ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফি সরদার, রাসেল গাজী, মহিবুল্লাহ গাজীকে চিনতে পেরেছেন। তারা বাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে এতে বাধা দেন ফোরকান বিশ্বাস। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। 

লামিয়ার বোন পিয়ারা বেগমের ভাষ্য, হামলা করেই থামেনি সন্ত্রাসীরা। তাঁর ঘর থেকে নগদ ১ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়েছে। হামলার পর ফোরকান বিশ্বাস অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেন ভিটাবাড়ীয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরদার। তাঁর দাবি, তিনি বা তাদের কোনো লোক এ হামলার সঙ্গে জড়িত নন।

ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ আনওয়ারের ভাষ্য, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি; পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য বল গ ন ত য বল গ সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে

পান থেকে চুন খসলেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ থানার মল্লিকপুর গ্রামের আঁখি দাস। তাঁর স্বামী অতুল দাস কয়েক দিন পরপরই যৌতুকের দাবি করতেন। একদিন শাস্তি হিসেবে আঁখিকে গৃহবন্দি করে ফেলেন। ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন অতুল। আঁখির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। গৃহবন্দি আঁখিকে রক্ষায় স্থানীয় এক ব্যক্তি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে কল দেন। তাৎক্ষণিক সুনামগঞ্জ দক্ষিণ থানা পুলিশে কর্তব্যরত কর্মকর্তা বিষয়টি জানতে পেরে ফোর্স নিয়ে আঁখিকে উদ্ধার করেন। পরে তাঁকে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার ২০ বছরের সোনিয়াকেও উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ থানা পুলিশ। জেলার রূপগঞ্জের তারাব ইউনিয়নে স্বামী সোহেল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনি থাকতেন। যৌতুকের দাবিতে সোহেল প্রায়ই সোনিয়াকে মারধর করতেন। হেল্পলাইনে কল দিয়ে সবকিছু জানালে স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে।
শুধু পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীই নন, বাল্যবিয়ের শিকার কন্যাশিশুও জাতীয় এ হেল্পলাইনে কল করে সেবা পেয়েছে। তাদের মধ্যে মিরসরাইয়ের মেহি (১৬), চাঁদপুরের কচুয়ার বিলকিস (১২), নওগাঁর পত্নীতলার আইরিন (১৫), মানিকগঞ্জের জুঁ‌ই (১৩), চট্টগ্রামের নিপা আক্তার (১৬), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জিরতলী ইউনিয়নের মুনিয়া (১৪), কক্সবাজারের শাহীনুর (১৭), সিলেটের গোরাইনঘাট উপজেলার হাবিবা (১৪), রংপুরের শোভা রানী (১৪), জামালপুরের সাজনী (১৪), মুন্সীগঞ্জের সাদিয়া আক্তার (১৭), নোয়াখালীর ফারহানা আকতার (১৫), পাবনার তিন্নি (১৩) ও ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার ঝুমুরসহ (১৩) অসংখ্য কন্যাশিশু তাদের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়েছে। ১০৯ নম্বরে দিনে দিনে ভুক্তভোগীসহ সেবাগ্রহীতার কলের সংখ্যাও বাড়ছে।

প্রতিদিন এ সেন্টারে গড়ে সাত হাজার কল আসে। কেউ উদ্ধারের সহযোগিতা চেয়ে, কেউ কল দেন তথ্য পেতে। আবার অনেক কিশোরীই বাল্যবিয়ে রোধে সহযোগিতা পেতে কল দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতাকেন্দ্রিক। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ হেল্পলাইন পরিচালনা করে থাকে।
জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১০৯ হেল্পলাইনে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৬ ফোনকল আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল আসে জুলাইয়ে– ৮২ হাজার ৭১টি। জাতীয় এ হেল্পলাইনের মাধ্যমে ২০২৪ সালে স্বাস্থ্যসেবা পান ৮ হাজার ৩০৮ জন, কাউন্সেলিং করানো হয় ১৪ হাজার ৬৬৫ জনকে, ১৮ হাজার ১১৭ জন পুলিশি সহায়তা পান, আইনি সহায়তা পান ৫৬ হাজার ১৬৯ জন, তথ্যসেবা পান ১৮ লাখ ১৬ হাজার ১৪ জন। ৩২ হাজার ১৫৩ জন অন্যান্য সেবা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালে পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ফোনকল ছিল। বাকি কলগুলো ছিল শারীরিক হেনস্তা, অপহরণের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, যৌন হেনস্তা, বাল্যবিয়ে, অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, মানসিক নির্যাতন, পাচার, এসিডদগ্ধের ঘটনা এবং অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কিত। অর্থাৎ গত বছর সবচেয়ে বেশি কল আসে পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের। দিনে গড়ে এ সম্পর্কিত কল এসেছে ১ হাজার ২৬১টি। চলতি বছরের প্রথম মাসেই সহযোগিতা চেয়ে কল আসে ৭৯ হাজার ৭১৭টি। এর মধ্যে তথ্য সহযোগিতা পেয়েছেন ৬৯ হাজার ২৫৬ জন।

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রোগ্রাম অফিসার ও হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘সহযোগিতা চেয়ে পরিবারের সদস্যরা বেশি কল দেন। বেশির ভাগ কল আসে পারিবারিক সহিংসতাকে কেন্দ্র করে। প্রতিদিন চাঞ্চল্যকর কেসগুলো, অর্থাৎ বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা হেল্পলাইন সেন্টার থেকেই তদারকি করা হয়। দৈনিক গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার কল আসে।’ তিনি জানান, জনবলের সংকট রয়েছে। বর্তমানে তিন শিফটে ৪০ জন ২৪ ঘণ্টা কাজ করলে প্রয়োজন ৮০ জনের।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নারীর প্রতি অর্থনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। গত চার বছরের মধ্যে এ সহিংসতা সম্পর্কিত কল বেশি এসেছে ২০২৪ সালে। বছরটিতে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি কল আসে। এর আগে ২০২১ সালে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১টি, ২০২২ সালে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৬০টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৭টি কল আসে।  
উই ক্যান অ্যালায়েন্সের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক সমকালকে বলেন, পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে, যে ভাবনা নিয়ে পারিবারিক কাঠামোগুলো তৈরি হয়, সেগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে না। ছেলেরা বাইরে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কিংবা ক্লান্ত থাকলে ঘরে এসে বউকে নির্যাতন করে। আবার কোনো কোনো ছেলের বউকে ভালো লাগলেও তাঁর পরিবারের মানুষকে পছন্দ করে না। এসব কারণে সহিংসতা বাড়ছে। 
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক মনে করেন, পারিবারিক সহিংসতাসহ নারীর প্রতি সব বৈষম্য প্রতিরোধে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ