বড় বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পুরো পৃথিবীর রহস্য লুকিয়ে আছে গণিতের মধ্যে। খ্যাতনামা গণিতজ্ঞদের প্রবর্তিত রাশিমালাকে কেন্দ্র করেই কাজ করছে বিজ্ঞানের সব সূত্র, প্রকৃতি এমনকি আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমও।

গণিত নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভীতি কাজ করে। আবার অনেকেই গণিতের কথা শুনলেই আগ্রহের সঙ্গে কাগজ–কলম নিয়ে বসে পড়ে। একেবারে শিশু অবস্থা থেকেই আমাদের গণিত শেখানো হয়, যাতে মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ ঘটে, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে। যে শিশু যত বেশি একাগ্র বা মনোযোগী, তার গণিতের দক্ষতা তত বেশি বলে মনে করা হয়।

শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ‘মেন্টাল অ্যারিথমেটিক’ বা ‘মানসিক গণনাপদ্ধতি’ শিখিয়ে থাকে আলোহা ইন্টারন্যাশনাল। মালয়েশিয়ান এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সাল থেকে শিশুদের মেন্টাল অ্যারিথমেটিক শেখাচ্ছে। এটি গণিতের এমন একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা শিশুরা কাগজ, কলম বা ক্যালকুলেটরের সাহায্য ছাড়াই বড় ধরনের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে। এতে শিশুদের গাণিতিক দক্ষতা তো বাড়েই, সঙ্গে এই পদ্ধতি সাহায্য করে মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের ক্ষেত্রেও।

বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক শাখা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যেগুলোতে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আলোহা লার্নিং সিস্টেম, যা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪২টি দেশের ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করে।  

শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে মেন্টাল অ্যারিথমেটিকের ভূমিকা নিয়ে আলোহা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, উন্নত বিশ্বের তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই আমরা কাজ করছি।’

প্রতিবছর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আলোহা বাংলাদেশ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর গণ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় অকাল সন্ধ্যা

সরকারি হাসপাতালের বৈকালিক বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ হইবার বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ প্রথমত, এই ব্যবস্থার অধীনে একজন রোগীকে বিশেষত চিকিৎসা পরামর্শ ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ যেই অর্থ ব্যয় করিতে হইত, উহা বেসরকারি খাতের সমমানের সেবা ব্যয় অপেক্ষা অনেক কম ছিল। ফলে বিশেষত সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য উহা ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি প্রশ্নে দেশে ধনী-দরিদ্রের দৃষ্টিকটু বৈষম্য হ্রাসের যেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা বন্ধ হইয়া গেল। সেই হিসাবে ইহাকে গরিবের হক মারিবার আয়োজনও বলা যাইতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে দুই দফায় রাজধানীসহ দেশের ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে এই স্বল্পমূল্যের সেবা চালু করে সরকার। এক পর্যায়ে উহাতে রোগ নির্ণয়ের সুবিধাও যুক্ত হয়। প্রতিদিন বেলা ৩টা হইতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পালাক্রমে রোগী দেখিবার বিধান চালু করা হয়। নির্ধারিত ফি ধরা হয় ৫০০ টাকা, যাহার মধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারীর ভাতা এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারিত ছিল।

বলিয়া রাখা প্রয়োজন, একই সেবার জন্য বেসরকারি কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে শুধু চিকিৎসকের ফি বাবদ ৮০০ হইতে ১৫শ টাকা অবধি দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেবাটি ব্যাপক প্রচার না থাকিবার পরও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শুরু হইতে গত বৎসরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ১৮৩টি হাসপাতালে ২ লক্ষ ৩০ সহস্রাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করিয়াছেন। এই রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ১২ লক্ষাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হইয়াছে। অস্ত্রোপচার হইয়াছে প্রায় আট সহস্র। 
সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, এই বৈকালিক সেবায় নিয়োজিত অধিকাংশ চিকিৎসক অদ্যাবধি কোনো ভাতা পান নাই। ইহার সহিত যুক্ত হইয়াছে অন্যান্য খাতের ন্যায় স্বাস্থ্য খাতেও উদ্ভূত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিল পরিস্থিতি। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ঘোষণা না দিয়াই হঠাৎ সেবাটি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। উদ্বেগজনক হইল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, নূতন করিয়া উক্ত বৈকালিক চিকিৎসা সেবা চালু হইতেছে না।

তাহাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার সমগ্র স্বাস্থ্য খাতকে নববিন্যাসের দিকে অগ্রসর হইতেছে। উহারই অংশরূপে সমগ্র দেশে রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে সেবাদানের পরিকল্পনা চলিতেছে। এই পদ্ধতিতে রোগীকে তাহার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এক চিকিৎসা কেন্দ্র হইতে অপর চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। ইহাতে একদিকে রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত হয় বিধায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক প্রকার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পায়। অপরদিকে হরেদরে সকল প্রকার রোগী দেখিতে হয় না বলিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সময় বাঁচে এবং তাহারা রোগীর প্রতি অধিকতর মনোযোগ দিতে সক্ষম হন। অতএব, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতি চালু অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু ইহার জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বল্প ব্যয়ে বিশেষজ্ঞ সেবাপ্রাপ্তি বন্ধ হইবে কেন? এই ব্যবস্থা বরং উক্ত রেফারেল পদ্ধতির পরিপূরক হইতে পারিত। কারণ নিছক রেফারেল পদ্ধতি স্বল্প ব্যয়ে মানসম্মত চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে না।
বিগত সরকার চালু করিয়াছিল বলিয়া বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবাটি বন্ধ হইল কিনা, আমরা জানি না। তবে এই কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনেকে একই সময়ে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সেবা দিয়া থাকেন। অভিযোগ রহিয়াছে, তাহাদেরই একটা অংশ পকেট ভারী করিবার সুযোগ হ্রাস পাইবার কারণে উক্ত বৈকালিক সেবা বন্ধের সহিত যুক্ত থাকিতে পারেন। যাহাই হউক, আলোচ্য সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। যখন রেফারেল পদ্ধতি চালু হইবে তখন প্রয়োজনে বৈকালিক সেবা কার্যক্রম লইয়া ভিন্ন ভাবনা ভাবিবার অবকাশ সৃষ্টি হইলেও হইতে পারে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ