দল না পাওয়া সেই রাহানে কেকেআরের অধিনায়ক
Published: 3rd, March 2025 GMT
আইপিএলের গত মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ফর্ম দেখাতে পারেননি আজিঙ্কা রাহানে। ১৩ ম্যাচে ২০.১৭ গড়ে করেছিলেন মাত্র ২৪২ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৪৫। যে কারণে এবারের আইপিএলের মেগা নিলামে শুরুতে দল পাননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
অবিক্রিত থাকার তালিকা থেকে ভিত্তিমূল্য দেড় কোটি রুপিতে রাহানেকে দলে নেয় গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। এবার ওই রাহানেকেই অধিনায়ক ঘোষণা করেছে দলটি। রাহানের ডেপুটি করা হয়েছে কলকাতার সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার ভেঙ্কেটেশ আইয়ারকে। তাকে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে নিলাম থেকে পুনরায় দলে নিয়েছে কেকেআর।
তিনবারের চ্যাম্পিয়ন দলের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে রাহানে বলেন, ‘এটা আমার জন্য গর্বের। কেকেআর আইপিএলের সফলতম ফ্র্যাঞ্চাইজি। আমি মনে করি, আমাদের দলটা ভারসাম্যপূর্ণ। সবার সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি এবং শিরোপা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো।’
রাহানে সম্প্রতি সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। ৫৮.
গত মৌসুমে শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছে কেকেআর। তিনি এবার ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে পাঞ্জাব কিংসে খেলবেন। গত মৌসুমে কেকেআরের মেন্টর ছিলেন গৌতম গম্ভীর। তিনি এখন ভারতের কোচ। ২২ মার্চ শুরু হওয়া আইপিএল মৌসুমে কলকাতার তাই নতুন করে শুরু করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ক আর গত ম স ম ক ক আর
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ কী?
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের নজিরবিহীন উত্তপ্ত বাক্য বিনিয়ম নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব ও অতীত আচরণ বিবেচনায় এই ঘটনা কি অস্বাভাবিক কিছু?
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর মার্কিন অংশীদারিত্ব নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ারও কথা ছিল। জানা গিয়েছিল, এই চুক্তির সঙ্গে ইউক্রেন তার দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তার আশ্বাস পাবে। কিন্তু তার কোনোটাই হয়নি।
জেলেনস্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ‘অসম্মানজনক’ আচরণ করে সভা ত্যাগ করেছেন। ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ওভাল অফিসকে ‘অপমান করেছেন’… তিনি যখন ‘শান্তির জন্য’ প্রস্তুত হবেন, আশা করি তখন ফিরে আসবেন।”
অন্যদিকে জেলেনস্কি ফক্স মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘প্রকাশ্যে যে বাদানুবাদ হলো, সেটা ঠিক ছিল না। তবে ট্রাম্প ও তাঁর সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্ক শুধু দু’জন প্রেসিডেন্টের মধ্যকার সম্পর্কের চেয়েও বেশি কিছু। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ও আছে এখানে।’
প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন শাসকদের এমন রূঢ় আচরণ, আক্রমণ এটিই প্রথম? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শাসকদের উৎখাত, এমনকি হত্যা করেছে; দেশ দখল করেছে। সেসব বর্বর ঘটনার তুলনায় জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা তেমন কিছুই নয়। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব স্পষ্টত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে ট্রাম্পবিরোধী শিবির আজ মিডিয়াকে উত্তপ্ত রাখছে।
বিশেষত ইউক্রেনের ওপর এই ঘটনার প্রভাব নিয়ে সাবেক মার্কিন মেরিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা স্কট রিটার আরটিকে বলেছেন, ‘জেলেনস্কির প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ইউক্রেন আর তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে তিনি যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেবেন সেটাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’ স্কট রিটার আরও বলেন, ‘ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সম্পর্ক আসলে ভেতর থেকে ভেঙে গেছে। শান্তিচুক্তি নিয়ে তাদের মধ্যে এখনও কোনো পরিষ্কার বোঝাপড়া হয়নি। জেলেনস্কিকে শান্তিচুক্তির পথে একটি বড় বাধা বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে এটা ইউক্রেনের জন্য খারাপ কিছু হলেও যুদ্ধটা থামানো যাবে, এটাই যা স্বস্তি।’
ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের বিরোধী শিবির, সরকার-প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মধ্যে জেলেনস্কিবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকায় ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচারী শাসক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মূল্যবান খনিজ সম্পদের ওপর মার্কিন মালিকানা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ইউক্রেনবাসীকে ক্ষুব্ধ করছে। আবার এ অবস্থার জন্য তারা জেলেনস্কিকে দায়ী করছেন। তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের রাজনৈতিক অধিকারের কথা বলছেন। সেখানে মতপ্রকাশের অধিকার কারও নেই।
ইউরোপের নেতারা এ পরিস্থিতিতে জেলেনস্কিকে সমর্থন করছেন। কিন্তু ইউরোপের পক্ষে কি সম্ভব আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকিয়ে রাখা? কেননা, পুরো ইউরোপই মার্কিন সামরিক ছাতার নিচে অবস্থান করছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে এ ঘটনার পর কি তাহলে জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হতে পারে? এই প্রশ্ন এখন প্রধান হয়ে উঠেছে। কারণ মার্কিন প্রশাসন যদি মনে করে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হচ্ছেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের পথে সবচেয়ে বড় বাধা, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে বিকল্প পথের সন্ধান করবেই। ট্রাম্প যেহেতু রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করছেন, সে ক্ষেত্রে জেলেনস্কির জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হওয়ারই কথা।
ইউক্রেন প্রশ্নে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের যে মনোভাব ও নীতি, তাতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের সৈনিকদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার কথা। কেননা, তারা হয়তো বুঝতে পারছে এই যুদ্ধের পরিণতি কী। মার্কিন সামরিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া এই যুদ্ধ তাদের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ন্যাটোও তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না; ন্যাটোর প্রধান শক্তিই তারা। ইউক্রেন প্রশ্নে ইউরোপও দ্বিধাবিভক্ত। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেছেন– ইউক্রেনকে ন্যাটোর আশা ছাড়তে হবে। হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া আগে থেকেই ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের বিরোধী।
এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি কি পারবেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে? অথবা কী হতে পারে তাঁর ভবিষ্যৎ? ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জেলেনস্কির অত্যন্ত তিক্ত ও অবিশ্বাসের সম্পর্কের পর হয়তো তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে হতে পারে; ক্যু বা সমঝোতার মাধ্যমেও হতে পারে। মার্কিনিরা ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করলে তাদের স্বার্থেই সেখানে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ ও শান্তিচুক্তি দরকার। তার শেষটা কীভাবে হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
ড. মঞ্জুরে খোদা: লেখক-গবেষক ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক