‘শুধু এহানেই ৬৫০ টাকায় গরুর গোস্ত পাবেন’
Published: 3rd, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি কর্মসূচির আওতায় বিক্রি করা গরুর মাংসের মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি ও আক্ষেপ দুটোই রয়েছে।
কেউ কেউ মাংস কিনে বলছেন, শুধু এই জায়গাতেই (অধিদপ্তরের পণ্য বিক্রির গাড়ি) ৬৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যায়। ঢাকার কোথাও এই দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হয় না।
কেউ আবার আক্ষেপ করে বলছেন, এক কেজিতে প্রায় আধা কেজি পরিমাণই হাড্ডি, কলিজা কিংবা অন্য কিছু। শুধু মাংসের পরিমাণ আরও বেশি হলে মানুষ সত্যিকারভাবেই উপকৃত হতো।
আজ সোমবার খামারবাড়ি গোলচত্বরসংলগ্ন ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালের সামনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে দুধ-ডিম-মাংস বিক্রির কর্মসূচি থেকে পণ্য কিনতে যাওয়া মানুষেরা গরুর মাংস নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে ডিম ও দুধ নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি দেখা গেছে। বাজার থেকে কিছুটা কম দামে পেয়ে বাড়তি ডিম-দুধও কিনে নিচ্ছেন কেউ কেউ।
রিকশাচালক বাবুল মিয়া খালি রিকশা নিয়ে পণ্য বিক্রির গাড়ির কাছে এসে রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে সারিতে দাঁড়ালেন। তখন মানুষ কম থাকায় পণ্য কেনার সারি খুব বেশি লম্বা ছিল না। প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় তিনটি পণ্য গাড়িতে থাকা বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে বুঝে নিলেন বাবুল মিয়া। পণ্যগুলো পেয়ে তাঁর মুখে হাসি হাসি ভাব।
কাছে গিয়ে কী কী কিনলেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, গরুর মাংস এক কেজি, এক লিটার দুধ আর এক ডজন ডিম কিনেছেন। পকেটে আর টাকা না থাকায় মুরগি আর কেনা হয়নি বলেও জানালেন বাবুল মিয়া।
বাবুল মিয়া বলেন, তিনটা পণ্য কিনতে তাঁর প্রায় সাড়ে আট শ (৮৪৪ টাকা) টাকা লেগেছে। পকেটে এর বেশি আর টাকা ছিল না। আজকে সকাল থেকে রিকশা চালিয়ে প্রায় ৩০০ টাকা রোজগার করেছেন। এ ছাড়া আগের কয়েক দিনের কিছু টাকা জমানো ছিল।
বাবুল মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় লাইনে দাঁড়ানো অন্যরা তাঁকে পাশ থেকে জিজ্ঞেস করছিলেন, গরুর গোশত নাকি বেশি ভালো না। কেনা কী ঠিক হবে? তাঁদের উদ্দেশ্যে বাবুলের জবাব, ‘শুধু এহানেই ৬৫০ টাকায় গরুর গোস্ত পাবেন। আর কোথাও না।’
সাড়ে ১০টার দিকে গাড়ি থেকে পণ্য কেনা এক নারীকে দুইবার বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে গরুর মাংসের প্যাকেট বদলে নিতে দেখা গেছে। তবুও ওই নারী অধিদপ্তরের বিক্রি করা মাংস নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শেষে ওই নারীকে অধিদপ্তরের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গেছে, ‘হাড্ডি, কলিজা আর ছাবা দিয়াই ভরাই রাখসেন, আসল মাংস তো একেবারে কম। মাংস কম দিয়া গরিব মাইনসেরে ঠকাইয়া লাভ কী?’ পরে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি নাম পরিচয় জানাতে রাজি হননি।
তবে গরুর মাংস নিয়ে ওই নারীর অসন্তুষ্টি দেখে এবং ওই নারীর হাতের মাংসের প্যাকেট দেখে প্রায় ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস কেনার সুযোগ পেয়েও আর কেনেননি আয়েশা বেগম নামের এক নারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাড়ে ছয় শ টাকা এ মাংস কিনলে পোষাবে না। মাংসের চাইতে অন্য কিছুই বেশি। তাই আর কিনলাম না।’ তবে মুরগি, ডিম আর দুধ নিয়ে সন্তুষ্টি জানান তিনি।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে তেমন মানুষের ভিড় দেখা যায়নি। মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় সারিও খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। লোকজন আসছিলেন, ১০-১৫ মিনিট সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছিলেন। কম থাকায় কেউ কেউ দুই ডজন ডিম কিংবা তিন লিটার পর্যন্ত দুধ কিনে নেন।
ওই জায়গায় বিক্রি তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বিক্রি শুরু করা হয়। আজ তাঁরা খামারবাড়িতে সাড়ে ৯টায় বিক্রি শুরু করেছেন। সেখানে আজ ৬০ কেজি গরুর মাংস, ৮৮ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, ২১১ লিটার দুধ ও ১৮৩ ডজন ডিম (বাড়তি এক হালিসহ ২২০০পিস) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুরুতে মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল বলেও জানান তিনি। ওই জায়গায় সাড়ে ১১টার দিকে গরুর মাংস শেষ হয়।
ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে ১ রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত সুলভ মূল্যে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকাগুলো হচ্ছে সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), ষাটফুট রোড (মিরপুর), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), বনশ্রী, হাজারীবাগ (সেকশন), আরামবাগ (মতিঝিল), মোহাম্মদপুর (বাবর রোড), কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), শাহাজাদপুর (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি- বনানী, কামরাঙ্গীরচর চর, খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), নাখালপাড়া (লুকাস মোড়), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), বসিলা (মোহাম্মদপুর), উত্তরা (হাউজ বিল্ডিং), রামপুরা (বাজার), মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) ও কাকরাইল।
ঢাকার বাইরেও অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা শহরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ২৮ রমজান পর্যন্ত এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। একজন ভোক্তা প্রতিটি গাড়ি থেকে ৬৫০ টাকায় ১ কেজি গরুর মাংস, ২৫০ টাকায় চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি, ৮০ টাকায় ১ লিটার পাস্তুরিত দুধ ও ১১৪ টাকায় ১ ডজন ডিম কিনতে পারছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ডজন ড ম ৬৫০ ট ক ওই ন র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘শুধু এহানেই ৬৫০ টাকায় গরুর গোস্ত পাবেন’
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি কর্মসূচির আওতায় বিক্রি করা গরুর মাংসের মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি ও আক্ষেপ দুটোই রয়েছে।
কেউ কেউ মাংস কিনে বলছেন, শুধু এই জায়গাতেই (অধিদপ্তরের পণ্য বিক্রির গাড়ি) ৬৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যায়। ঢাকার কোথাও এই দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হয় না।
কেউ আবার আক্ষেপ করে বলছেন, এক কেজিতে প্রায় আধা কেজি পরিমাণই হাড্ডি, কলিজা কিংবা অন্য কিছু। শুধু মাংসের পরিমাণ আরও বেশি হলে মানুষ সত্যিকারভাবেই উপকৃত হতো।
আজ সোমবার খামারবাড়ি গোলচত্বরসংলগ্ন ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালের সামনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে দুধ-ডিম-মাংস বিক্রির কর্মসূচি থেকে পণ্য কিনতে যাওয়া মানুষেরা গরুর মাংস নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে ডিম ও দুধ নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি দেখা গেছে। বাজার থেকে কিছুটা কম দামে পেয়ে বাড়তি ডিম-দুধও কিনে নিচ্ছেন কেউ কেউ।
রিকশাচালক বাবুল মিয়া খালি রিকশা নিয়ে পণ্য বিক্রির গাড়ির কাছে এসে রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে সারিতে দাঁড়ালেন। তখন মানুষ কম থাকায় পণ্য কেনার সারি খুব বেশি লম্বা ছিল না। প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় তিনটি পণ্য গাড়িতে থাকা বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে বুঝে নিলেন বাবুল মিয়া। পণ্যগুলো পেয়ে তাঁর মুখে হাসি হাসি ভাব।
কাছে গিয়ে কী কী কিনলেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, গরুর মাংস এক কেজি, এক লিটার দুধ আর এক ডজন ডিম কিনেছেন। পকেটে আর টাকা না থাকায় মুরগি আর কেনা হয়নি বলেও জানালেন বাবুল মিয়া।
বাবুল মিয়া বলেন, তিনটা পণ্য কিনতে তাঁর প্রায় সাড়ে আট শ (৮৪৪ টাকা) টাকা লেগেছে। পকেটে এর বেশি আর টাকা ছিল না। আজকে সকাল থেকে রিকশা চালিয়ে প্রায় ৩০০ টাকা রোজগার করেছেন। এ ছাড়া আগের কয়েক দিনের কিছু টাকা জমানো ছিল।
বাবুল মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় লাইনে দাঁড়ানো অন্যরা তাঁকে পাশ থেকে জিজ্ঞেস করছিলেন, গরুর গোশত নাকি বেশি ভালো না। কেনা কী ঠিক হবে? তাঁদের উদ্দেশ্যে বাবুলের জবাব, ‘শুধু এহানেই ৬৫০ টাকায় গরুর গোস্ত পাবেন। আর কোথাও না।’
সাড়ে ১০টার দিকে গাড়ি থেকে পণ্য কেনা এক নারীকে দুইবার বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে গরুর মাংসের প্যাকেট বদলে নিতে দেখা গেছে। তবুও ওই নারী অধিদপ্তরের বিক্রি করা মাংস নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শেষে ওই নারীকে অধিদপ্তরের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গেছে, ‘হাড্ডি, কলিজা আর ছাবা দিয়াই ভরাই রাখসেন, আসল মাংস তো একেবারে কম। মাংস কম দিয়া গরিব মাইনসেরে ঠকাইয়া লাভ কী?’ পরে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি নাম পরিচয় জানাতে রাজি হননি।
তবে গরুর মাংস নিয়ে ওই নারীর অসন্তুষ্টি দেখে এবং ওই নারীর হাতের মাংসের প্যাকেট দেখে প্রায় ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস কেনার সুযোগ পেয়েও আর কেনেননি আয়েশা বেগম নামের এক নারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাড়ে ছয় শ টাকা এ মাংস কিনলে পোষাবে না। মাংসের চাইতে অন্য কিছুই বেশি। তাই আর কিনলাম না।’ তবে মুরগি, ডিম আর দুধ নিয়ে সন্তুষ্টি জানান তিনি।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে তেমন মানুষের ভিড় দেখা যায়নি। মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় সারিও খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। লোকজন আসছিলেন, ১০-১৫ মিনিট সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছিলেন। কম থাকায় কেউ কেউ দুই ডজন ডিম কিংবা তিন লিটার পর্যন্ত দুধ কিনে নেন।
ওই জায়গায় বিক্রি তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বিক্রি শুরু করা হয়। আজ তাঁরা খামারবাড়িতে সাড়ে ৯টায় বিক্রি শুরু করেছেন। সেখানে আজ ৬০ কেজি গরুর মাংস, ৮৮ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, ২১১ লিটার দুধ ও ১৮৩ ডজন ডিম (বাড়তি এক হালিসহ ২২০০পিস) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুরুতে মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল বলেও জানান তিনি। ওই জায়গায় সাড়ে ১১টার দিকে গরুর মাংস শেষ হয়।
ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে ১ রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত সুলভ মূল্যে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকাগুলো হচ্ছে সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), ষাটফুট রোড (মিরপুর), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), বনশ্রী, হাজারীবাগ (সেকশন), আরামবাগ (মতিঝিল), মোহাম্মদপুর (বাবর রোড), কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), শাহাজাদপুর (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি- বনানী, কামরাঙ্গীরচর চর, খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), নাখালপাড়া (লুকাস মোড়), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), বসিলা (মোহাম্মদপুর), উত্তরা (হাউজ বিল্ডিং), রামপুরা (বাজার), মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) ও কাকরাইল।
ঢাকার বাইরেও অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা শহরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ২৮ রমজান পর্যন্ত এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। একজন ভোক্তা প্রতিটি গাড়ি থেকে ৬৫০ টাকায় ১ কেজি গরুর মাংস, ২৫০ টাকায় চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি, ৮০ টাকায় ১ লিটার পাস্তুরিত দুধ ও ১১৪ টাকায় ১ ডজন ডিম কিনতে পারছেন।