নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শান্তিবাগ এলাকায় বিস্ফোরণে দুটি পরিবারের আটজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ঘরের নিচে গ্যাসের পাইপলাইন আছে। ওই লাইন থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, এক বছর আগে সেখানকার দুটি কক্ষে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার পরও গ্যাসের লিকেজ মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী শান্তিবাগ এলাকায় ইব্রাহিম খলিলের বাড়িতে ওই বিস্ফোরণ হয়। এতে সেখানকার ভাড়াটিয়া দুটি পরিবারের আটজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা হলেন সোহাগ আলী (২৪), তাঁর স্ত্রী রূপালী (২০) এবং এ দম্পতির দেড় বছরের মেয়ে সুমাইয়া; আবদুল হান্নান (৪০), তাঁর স্ত্রী লাকী বেগম (৩০), ছেলে সাব্বির (১২), দুই মেয়ে সামিয়া (৯) ও জান্নাত (৩)। সোহাগ ও রূপালী গার্মেন্টস শ্রমিক। হান্নান পেশায় দিনমজুর আর লাকী বেগম গার্মেন্টস শ্রমিক। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, আধা পাকা ওই কক্ষের নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন গেছে। কক্ষের দেয়ালের চারপাশে পানি ঢেলে দিয়ে দেখা গেছে, এক কোনা দিয়ে বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে।

আরও পড়ুনসিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৮ জন দগ্ধ৫ ঘণ্টা আগে

সরেজমিন দেখা যায়, ইব্রাহিম খলিলের বাড়িতে দুই সারিতে আধা পাকা আটটি টিনের ঘর। ঘরের টিনের চালার দেয়াল ভেঙে গেছে; ঘরের আসবাব পুড়ে গেছে। সেখানে দুটি কক্ষে সোহাগ আলী ও আবদুল হান্নান স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন।
তাঁদের প্রতিবেশী সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে বিকট শব্দে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন পাশের দুটি ঘরের ভেতরে আগুন জ্বলছে। দরজা ভেঙে দগ্ধ আটজনকে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আরও কয়েকজন ছুটে এসে পানি দিয়ে আগুন নেভান। দগ্ধ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যান প্রতিবেশী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত বছর ইব্রাহিম খলিলের বাড়ির ওই দুই কক্ষে আগুন লেগেছিল বলে জানান ভাড়াটিয়া সাবিনা ইয়াসমিন ও স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। তাঁরা জানান, গত বছর আগুনে কক্ষের মালামাল পুড়ে গিয়েছিল, তবে কেউ দগ্ধ হননি। গ্যাসের লাইন মেরামত করা হলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।

এদিকে আজ ১১টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলে যান তিতাস গ্যাসের কর্মীরা। তবে তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান।
আগুন লাগার কারণে সর্ম্পকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাসের লিকেজ রয়েছে। গ্যাস লিকেজ হয়ে পুরো রুমের ভেতরে গ্যাস চেম্বার হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে মশাল কয়েল অথবা সাহ্‌রি খাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক সুইচ অন-অফ করতে গিয়ে কোনো একপর্যায়ে স্পার্কে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বাড়ির মালিক ইব্রাহিম খলিল মুঠোফোনে বলেন, ‘রাত থেকে দগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আছি। সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। মিস্ত্রিরা কাজ করেছেন; রুমের নিচ দিয়ে পাইপলাইন থাকার কথা নয়। এর আগে আগুন লেগেছিল কি না, সেটি আমার জানা নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে যুবদল নেতার হুমকি

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে ঈদের নামাজের পর এক দোয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় এক ইমামকে বরখাস্তের হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় যুবদল নেতা।

সোমবার (৩১ মার্চ) কাশিপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন চর কাশিপুরের আঞ্জুবাহার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল হক।

তিনি অভিযোগ করেন, নামাজের দোয়ায় খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় ফতুল্লা থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সৈকত হাসান ইকবাল তাকে হয়রানি করেছেন।

ইমদাদুল হক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক। তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন যে তাকে “হয়রানি করা হয়েছিল এবং চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”

“ঈদের দিন ঈদগাহ থেকে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম.. “শিরোনামের তার পোস্টে, ইমদাদুল ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। স্থানীয় অনেকেই যুবদল নেতার আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং এরই মধ্যে পোস্টটি শতাধিক মানুষ শেয়ার করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কাশিপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে দ্বিতীয় জামাত সকাল পৌনে টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়। আখেরি মোনাজাতের সময়, ইমাম দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং সকল অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করেন। তবে তিনি কোনও নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করেননি।

নামাজের পর, যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ইমাম ইমদাদুল হকের মুখোমুখি হন। অনুরোধ সত্ত্বেও ইমাম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় ইকবাল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ইমামের সাথে তর্ক শুরু করেন, তবে অন্যান্য মুসলিম ব্যক্তিদের তীব্র আপত্তির মুখে তিনি স্থান ত্যাগ করেন।

মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নামাজের আগে স্থানীয় বিএনপি সমর্থক এবং ঈদগাহ কমিটির সদস্য তাকে খালেদা জিয়ার আরোগ্যের জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে, তিনি কোনও নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ না করে সকল অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করার সিদ্ধান্ত নেন।

“আমি যথারীতি নামাজ আদায় করেছি এবং কারও নাম উল্লেখ করিনি কারণ এটি সকল রাজনৈতিক পটভূমির লোকদের নিয়ে একটি জনসমাবেশ ছিল। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেছি, কিন্তু নামাজের পরে যুবদল নেতা ইকবাল আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। তিনি আমার সাথে আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলেন, আমি কেন তার নাম নেই নি তা জানতে চান। 

ইমদাদুল হক স্থানীয় বিএনপি নেতাদের যুবদল নেতার অসদাচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবালকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করি নি। আমি কেবল জিজ্ঞাসা করেছি, অনুরোধ করার পরেও খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি কেনো। 

তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, যে তিনি তা করতে বাধ্য নন। তারপর আমি তার চাকরি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি এবং পরে জানতে পারি তার মসজিদ কমিটির সভাপতি আমাদের ছোট ভাইদের একজন। ইমামকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজিসহ সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সভা
  • সিদ্ধিরগঞ্জে  চাঁদাবাজিসহ সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সভা
  • সিদ্ধিরগঞ্জে  চাঁদাবাজীসহ সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সভা
  • নারায়ণগঞ্জে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
  • ম্যারাডোনাকে হত্যা করা হয়েছে
  • নারায়ণগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেরে যুবককে গুলি করে হত্যা
  • ঈদের স্পিরিট ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো : ডিসি জাহিদুল
  • ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম আর নেই, মামুন মাহমুদ’র শোক
  • ঐতিহ্যবাহী সনমান্দী বড় ঈদগাহ এর সভাপতি হলেন সাংবাদিক মনির
  • ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে যুবদল নেতার হুমকি