প্রায় ৩০ বছর ধরে লেবু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত মতিন মিয়া (৫৪)। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে লেবু বিক্রি করেন। কিন্তু এখন এক হালি (চারটা) লেবুর যে দাম চাইছেন, তাতে নিজের কাছেই বিস্ময় লাগছে। লেবুবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মতো গরিবে অখন লেবু খাইত পারত নায়। আমি বেচি, নিজে খাইতাম পারি না।’

গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনায় মতিন মিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ফুটপাত ঘেঁষে কয়েকটি টুকরিতে লেবু সাজিয়ে বসে ছিলেন। সেখানে খুব বেশি লেবু অবশিষ্ট নেই। অধিকাংশ লেবুর ত্বক হলুদ হয়েছে। অন্য সময় সবুজ লেবুর তুলনায় এগুলো প্রায় অর্ধেক কম দামে বিক্রি হতো। তবে মাঝারি আকারের এই হলুদ লেবুর দামই এখন চাওয়া হচ্ছে, ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি।

লেবুর এই অস্বাভাবিক দামের কারণ জানতে চাইলে জেলার একাধিক লেবু উৎপাদক ও বিক্রেতা বলেন, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবেই লেবুর উৎপাদন কম। বাজারে তাই সরবরাহও কম। এ ছাড়া অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে লেবুর চাহিদা বাড়ে। এসব কারণে খুচরা পর্যায়ে দামটা দ্বিগুণের বেশি চাওয়া হচ্ছে। উৎপাদন এলাকা মৌলভীবাজারে লেবুর এমন দাম অনেককেই বিস্মিত করছে। দাম শুনেই বেশির ভাগ ক্রেতা লেবু না কিনে বাড়ি ফিরছেন।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোকামবাজারে বাসিন্দা ব্যবসায়ী মতিন মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে এক বস্তা লেবু এনেছিলেন আড়াই হাজার টাকায়। এতে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারে ২৪২টি লেবু পেয়েছেন। এখন আকার অনুযায়ী ৪০-৮০ টাকা হালি দরে এসব বিক্রি করছেন। অথচ এক সপ্তাহ আগেও বড় আকারের লেবু হালিপ্রতি বিক্রি করেছেন ১৫-২০ টাকায়। এবার লেবুর দাম তাঁর কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে।

এই দাম কেন বেড়েছে, অনেকক্ষণ ধরে তার ব্যাখ্যাও দেন মতিন। তিনি বলেন, ‘এমলান (এ রকম) এত দাম আগে অইছে না (হয়নি)। গত রোজায় মানুষ লেবু হস্তায় (সস্তায়) খাইছে, আমদা (প্রচুর) খাইছে। আর আমিও এতা (হলুদ রঙের) বেচছি না। ভালাতা (সবুজ রঙের) বেচছি। আসলে গাছে ফল (লেবু) নাই। কেউর বাগানে (লেবু বাগানে) আছে, কেউর বাগানে নাই। অখন বেচিয়া পোষায় না। এগুইন (বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা লেবু) বেচিয়া আর আনতাম নায় (আনব না)। আর কমলে আনমু (আনব)।’

গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজার শহরের বড় দুই খুচরা বাজার ‘পশ্চিমবাজার’ ও ‘টিসি মার্কেট’ ঘুরে দেখা গেছে, যাঁরা অন্য সবজির সঙ্গে নিয়মিত লেবু বিক্রি করেন, তাঁদের অনেকের কাছেই লেবু নেই। কয়েকজনের কাছে আছে, তা–ও অল্প পশ্চিমবাজারেও একই অবস্থা। আগে রাস্তার পাশে, মূল বাজারে প্রচুর লেবু সাজিয়ে রাখতেন বিক্রেতারা। এখন মাত্র কয়েকজনের কাছে লেবু আছে। তাঁদের কাছে আবার দাগঅলা ও ছোট আকারের লেবু আছে।

বিক্রির জন্য ফুটপাত ঘেঁষে লেবু নিয়ে বসেছেন একজন বিক্রেতা। গতকাল রাতে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অনশন প্রত্যাহার করলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা  

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার। 

এই সিদ্ধান্তের পর বুধবার দিবাগত রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। পরে শিক্ষার্থীরা অনশনস্থল থেকে নিজ নিজ হলে ফিরে যান।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ জানান, কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের অপসারণের এক দফা দাবিতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর গত সোমবার থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ