অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে আর্থিক সাক্ষরতা
Published: 3rd, March 2025 GMT
আজ ৩ মার্চ আর্থিক সাক্ষরতা দিবস। আর্থিক সাক্ষরতা বলতে বোঝানো হয় সেই ক্ষমতা বা জ্ঞান, যা মানুষকে ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির অর্থ–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন ব্যক্তিগত আর্থিক বাজেট তৈরি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার সমষ্টি। এটি অর্থ ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতি শেখানোর মাধ্যমে ব্যক্তির আর্থিক নিরাপত্তা, প্রতারণার ঝুঁকি হ্রাস ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। বৈচিত্র্যপূর্ণ আর্থিক পণ্য ও পরিষেবার আধুনিক সময়ে আর্থিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরাই আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, বিপদ এড়াতে ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন।
আর্থিক সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এটি ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে পরিচালনা করার কৌশল। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে অনেক মানুষ এখনো অনানুষ্ঠানিক অর্থব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে, সেখানে সুচিন্তিত আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষকে অবশ্যই প্রভাবিত করে এবং জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে। বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আমাদের সহায়তা করবে:
সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
আর্থিকভাবে শিক্ষিত ব্যক্তি জরুরি অবস্থার জন্য সঞ্চয় করে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
একজন আর্থিকভাবে শিক্ষিত ব্যক্তি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারেন। যাঁরা আর্থিক ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করতে পারেন, তাঁদের আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে মানুষ সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হয়।
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন
সঠিক আর্থিক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ আর্থিক সম্পদ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে ও ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে পারেন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
আর্থিক সাক্ষরতা মানুষকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং–ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। এতে যেমন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসে।
বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতার অবস্থা
গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ একটি অংশ এখনো আর্থিক সাক্ষরতার আওতার বাইরে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, দেশে আর্থিক সাক্ষরতার হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনসাইটস শীর্ষক কর্মসূচির তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থিক সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ২৮ শতাংশ, অর্থাৎ ৭০ শতাংশের বেশি মানুষেরই এই মৌলিক ধারণার অভাব আছে। এর মধ্যে আবার গ্রামীণ এলাকায় নারীদের আর্থিক সাক্ষরতার হার পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই কম।
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাত আর্থিক সাক্ষরতার গুরুত্ব অনুধাবন করতে শুরু করেছে। আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে, কিন্তু অগ্রগতি এখনো উল্লেখ্যযোগ্য নয়। এই সমস্যা মোকাবিলা ও আর্থিকভাবে শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত আর্থিক আচরণের জন্য আদর্শ মডেল
ব্যক্তিগত আর্থিক আচরণ ঠিকঠাক করতে আমরা ৫০–৩০–২০ মডেল অনুসরণ করতে পারি। ৫০–৩০–২০ মডেল হলো ব্যক্তিগত আর্থিক বাজেট ও ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। এটি আমাদের মাসিক আয়কে তিনটি ভাগে ভাগ করে:
মৌলিক চাহিদার জন্য ৫০ শতাংশ
আমাদের মাসিক আয়ের অর্ধেক খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য নৈমিত্তিক মৌলিক চাহিদার জন্য ব্যয় করা উচিত। এগুলো প্রয়োজনীয় ব্যয় ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার জন্য আবশ্যক।
ঐচ্ছিক চাহিদার জন্য ৩০ শতাংশ
আমাদের আয়ের ৩০ শতাংশ ঐচ্ছিক ব্যয় বা চাহিদা পূরণের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে, যেমন বিনোদন, শখ বা ইচ্ছা পূরণ, ভ্রমণ অথবা আমাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতির জন্য।
চ্যারিটি বা বদান্যতার জন্য মোট আয়ের ১ শতাংশ এবং ঐচ্ছিক চাহিদার ২৯ শতাংশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ছোট কাজটি অন্যদের জীবনে অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শক্তিশালী ও সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য ২০ শতাংশ
ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগে আয়ের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত। এর মধ্যে আছে জরুরি তহবিল তৈরি ও অবসরকালীন সঞ্চয়ে অবদান রাখা। এই নিয়ম অনুসরণ করে মানুষ আর্থিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে পারেন এবং নিশ্চিত করতে পারেন প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করেও ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখা যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মধ্যবয়সী মানুষের জন্য ২০ শতাংশ আদর্শ মানদণ্ড হলেও যাঁরা প্রাথমিক কর্মজীবনে সঞ্চয় শুরু করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের হার ১০ শতাংশ থেকে শুরু করা যেতে পারে। এতে সহজেই সঞ্চয়ের মানসিকতা গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতা উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো
বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতা উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন, যার মধ্যে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতসহ বিভিন্ন অংশীজনদের অংশগ্রহণ আবশ্যক। দেশে আর্থিক সাক্ষরতার উন্নয়নে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারের প্রয়াস চালাচ্ছে। আর্থিক সাক্ষরতার গুরুত্ব বিবেচনা করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালায় ব্যক্তির সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং পরিষেবার ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষিত করার পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ‘স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম’-এর লক্ষ্য হলো, তরুণ শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শেখানো। এ ছাড়া আর্থিক সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপন ও আর্থিক সাক্ষরতা সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম
বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের আর্থিক সাক্ষরতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সাক্ষরতাবিষয়ক নীতিমালার আলোকে এই কর্মসূচি সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে গুরুত্বারোপ করে। কিছু ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা শেখানোর জন্য বিনা মূল্যে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো এসএমএস, ই–মেইল, সামাজিক মাধ্যমে বিপণন ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রমাগত আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছে, যেমন বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত প্রচারগুলো নিয়মিত করে আসছে।
‘অ্যাপের পাসওয়ার্ড, পিন, একবার ব্যবহারযোগ্য পিনের মতো গোপনীয় তথ্যগুলো কখনোই কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। অ্যাপ থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে লেনদেন সম্পন্ন করুন এবং ব্যবহার শেষে লগআউট নিশ্চিত করুন।’
মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) কার্যক্রম
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটর ও ব্যাংকগুলো এসএমএস, মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর্থিক সাক্ষরতা তৈরিতে কাজ করছে। এই পরিষেবাগুলোর লক্ষ্য হলো, ব্যবহারকারীদের মৌলিক আর্থিক ধারণা ও কীভাবে ঝুঁকিমুক্ত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া, যেমন গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত প্রচারণা নিয়মিত করা হচ্ছে।
‘গ্রাহকদের পিন নম্বর বা সিক্রেট কোড কখনোই কারও সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। কর্তৃপক্ষ কখনোই আপনার পিন নম্বর, সিক্রেট কোড বা সিকিউরিটি কোড জানতে চাইবে না।’
বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কার্যক্রম
বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ শক্তি ফাউন্ডেশন নারীদের আর্থিক শিক্ষা দিয়ে থাকে; তাঁদের গৃহস্থালির আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার পরামর্শ দেয়। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সহায়তা করছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম
গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, সিওসহ বিভিন্ন এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই মানুষের, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় মানুষের অর্থের আরও ভালো ব্যবস্থাপনায় ও তাঁদের দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে ঋণের পাশাপাশি আর্থিক শিক্ষা দিচ্ছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আর্থিক সাক্ষরতা ব্যক্তিগত ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশে যেখানে অনেক ব্যক্তির এখনো মৌলিক আর্থিক জ্ঞানের অভাব আছে, আর্থিক সাক্ষরতার উন্নতি জনগণের অর্থনৈতিক জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি আনতে পারে; অবদান রাখতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। চলমান উদ্যোগ, সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বনয ত র র ম ন ত আর থ ক স ন শ চ ত কর স হ য য কর দ র আর থ ক ও আর থ ক ন আর থ ক র জন য ব আর থ ক প ক আর থ ক ব যবহ র পর ষ ব সরক র ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বাংলাদেশির সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডির ২ কোটি ৯০ লাখ (২৯ মিলিয়ন) ডলারের প্রকল্প দুই বাংলাদেশির মালিকানাধীন সংস্থাকে দেওয়ার দাবি সত্য নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকল্পটি নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা নিয়ে জনমনে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অনুসন্ধান করেছে।
অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে (ডিআই) নির্বাচিত করে। প্রকল্প প্রস্তাবনা আহ্বানের পর অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে ইউএসএআইডি সিদ্ধান্তটি নেয়। ২০১৭ সালের মার্চে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিআই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং এর অর্থ আসে ধাপে ধাপে।
এসপিএল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করে শান্তি ও সম্প্রীতি বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি, দলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার উন্নয়ন ও প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের বিকাশে উৎসাহ দেওয়া। প্রকল্পের অধীনে ডিআই বাংলাদেশে জরিপ কার্যক্রমও চালায়।
শুরুতে এসপিএল প্রকল্পটি ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি এবং বাজেট ছিল ১৪ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনায় ছিল ইউএসএআইডি এবং অর্থায়নে ছিল ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি (বর্তমানে এফসিডিও)। এই প্রকল্পে ডিএফআইডির অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।
মন্ত্রণালয় বলছে, ইউএসএআইডির প্রকল্পের ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক। এতে আর্থিক নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও এ-সংক্রান্ত নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে পুনর্নিরীক্ষণ করা হয়।