আপনার আচরণ এমন হবে ভাবিনি: জামিলকে নূনা আফরোজ
Published: 3rd, March 2025 GMT
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে এখন আলোচনায় ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ অবস্থায় অনেকেই তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। তবে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেত্রী নূনা আফরোজ সদ্য পদত্যাগের ঘোষণা করা জামিল আহমেদের উদ্দেশে ছুড়ে দিলেন একগাদা প্রশ্ন।
রোববার রাতে নিজের ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন নূনা। শুরুতেই লিখেছেন, আপনার চারটি শর্ত মেনে নিলে নাকি আপনি মহাপরিচালকের পদে থাকবেন, তাতে হাতে গোনা আপনার প্রিয় বা অনুগত কয়েকটি থিয়েটার দল ছাড়া অন্য দলগুলোর কী হবে?
নূনা আফরোজ লেখেন, আপনি তো শুরু থেকেই বৈষম্য শুরু করেছেন। চলাকালীন প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন, অমুকে অভিনয় করলে প্রদর্শনী করতে দেওয়া যাবে না।অমুক, অমুক দলকে হল বরাদ্দ দেওয়া হবে না। হল ফাঁকা থাকলেও দেননি, কেন? কোনো কোনো দলকে আবার মাসে ৩/৪ দিনও হল বরাদ্দ দিয়েছেন,কেন? ৮৫টি দল মিলে 'মহানগর নাট্যোৎসব' করবে বলে ৩৬টি দলের নামে হল বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিল, হল ফাঁকা থাকার পরও আপনি বরাদ্দ দেননি, কেন?
আরও বলেন, দলগুলোর পক্ষ থেকে আপনার সাথে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছিল, আপনি সেই সৌজন্যটুকুও করেননি, কেন? মহানগর নাট্য পর্ষদের পক্ষ থেকে নাট্যোৎসবের একটি সংবাদ সম্মেলন করার জন্য সেমিনার কক্ষের বরাদ্দ চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিল, উল্লেখিত তারিখে সেমিনার কক্ষটি খালি থাকলেও আপনি বরাদ্দ দেননি, কেন?
তার কথায়, আপনি অনেকগুলো দলকে হল বরাদ্দ দেন না, কী কারণে, বলবেন কী? কোন স্বার্থে, কাদের প্ররোচনায়? বলা যেহেতু শুরু করেছেন তাদের নামগুলো এখন বলতে পারবেন কি? আপনি যখন মহাপরিচালক পদে বসেছিলেন আমি খুশি-ই হয়েছিলাম। অভিনন্দনও জানিয়েছিলাম ফেসবুকের মাধ্যমে। সেই আপনার এমন বৈষম্যমূলক আচরণ হবে ভাবিনি!
সবশেষে নূনা লিখেছেন, আপনি মহাপরিচালক পদে থাকেন না থাকেন আমার কোনো কথা নেই কিন্তু আপনি থাকেন আর না থাকেন আমার অনুরোধ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিটি দল সম্পর্কে কারণগুলো ব্যাখ্যা করে যাবেন যে, অনেকগুলো দলকে আপনি হল বরাদ্দ কেন দেননি?
গেল বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান জামিল আহমেদ। দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই পথ থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান হাসনাত আবদুল্লাহর
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
সেখানে তিনি লেখেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করার পরিণতি কী হতে পারে, তা চব্বিশের জুলাইয়ে দেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও আমরা এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখতে চাই না।”
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
সোমবার (২১ এপ্রিল) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।
গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।
ঢাকা/ইভা