কাঁদতে কাঁদতে কামাল মজুমদার বলেন, ‘আর রাজনীতি করব না, আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি’
Published: 3rd, March 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে বলেছেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তিনি আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাছে এ কথাগুলো বলেন কামাল মজুমদার।
রাজধানীর কাফরুল থানায় দায়ের করা আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় কামাল মজুমদারসহ ছয়জনকে আজ সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়।
অন্যরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও এ কে এম শহিদুল হক। এই মামলায় তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে পুলিশ আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত।
‘আজ থেকে রাজনীতি করব না’
আজ ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ২ মিনিট। তখনো বিচারক এজলাসে আসেননি। তখন রাগান্বিত স্বরে কামাল মজুমদার তাঁর আইনজীবীকে বলছিলেন, কেন তাঁর জামিন জজকোর্ট ও হাইকোর্টে চাওয়া হচ্ছে না?
এ বিষয়ে আইনজীবী কিছু বলার চেষ্টা করলেও কামাল মজুমদার রাগান্বিত স্বরে কথা বলে চলছিলেন। এর মধ্যে বিচারক এজলাসে আসেন।
তখন কামাল মজুমদার কাঠগড়ার দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্তের দিকে চলে যান। তিনি বিচারকের দিকে চেয়েছিলেন।
এর মধ্যে পুলিশের একজন কর্মকর্তা আনিসুল হক, সালমান এফ রহমানের নাম ডাকেন। আনিসুল ও সালমান দুজনই বিচারকের দিকে চেয়েছিলেন। এ সময় কামাল মজুমদার তাঁর হাত উঁচু করে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলেন। তখন কামাল মজুমদার, কামরুল ইসলাম, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও এ কে এম শহিদুল হকের নাম ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ সময় কামাল মজুমদারসহ অন্যরা বিচারকের দিকে চেয়েছিলেন। বিচারক তখন একমনে মামলার নথিপত্র পড়ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর বিচারক আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কাফরুল থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলার এজাহারের আপনাদের নাম রয়েছে।’
কথা শেষ না হতেই কামাল মজুমদার বিচারকের উদ্দেশে বলতে শুরু করেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বয়স এখন ৭৬ বছর। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডায়াবেটিক মাপার মেশিনও নিতে দিচ্ছে না।’
কামাল মজুমদার এ কথা বলার পর কাঁদতে থাকেন। পরে আবেগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে তিনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘এই আদালতে আসার পরও আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’
কামাল মজুমদার আবার কাঁদতে থাকেন। তিনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আর রাজনীতি করব না। আমি আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে। এই বয়সে আমাদের নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলা করার কথা।’
এ সময় কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কারাগারে ডায়াবেটিক মাপার মেশিন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। ডিজিটাল কোরআন শরিফ সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হোক।’
‘আমরা চাই, নতুন যুব নেতৃত্ব আসুক’
পরে আদালত কামাল মজুমদারকে এ বিষয়ে নিয়মিত আদালতে আবেদন করতে বলেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি শেষ হলে কামাল মজুমদারসহ অন্যদের এজলাস কক্ষ থেকে বের করে আদালতের বারান্দায় নেওয়া হয়।
সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক চুপ থাকলেও কামাল মজুমদার সাংবাদিক দেখেই কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। কোনো দলীয় পদে নেই। আমি রাজনীতি থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি।’
তখন একজন সাংবাদিক কামাল মজুমদারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কবে থেকে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন?’
জবাবে কামাল মজুমদার বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন, আজ থেকেই আমি রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি আর রাজনীতি করব না।’
তখন আরেকজন সাংবাদিক কামাল মজুমদারকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন আপনি রাজনীতি করবেন না?’
জবাবে কামাল মজুমদার বলেন, ‘এই দেশে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। ৭৬ বছর বয়সে রাজনীতি করা যায় না। আমরা চাই, নতুন যুব নেতৃত্ব আসুক।’
কামাল মজুমদার এ কথা বলতে বলতে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানার ভেতরে ঢুকে যান।
কামাল মজুমদার টানা ১৫ বছর ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। রাজধানীর মিরপুর এলাকার প্রভাশালী এই নেতা সালিশের নামে প্রচলিত আইনের বাইরে বিশেষ একধরনের বিচারব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কথিত সামাজিক বিচার কমিটি গঠন করেছিলেন।
সালমানের পেছনে দুই হাত, পরানো হাতকড়া
আজ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের পর আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদারদের আদালতের হাজতখানা থেকে বাইরে আনা হয়।
তখন দেখা যায়, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদার, কামরুল ইসলাম, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও এ কে এম শহিদুল হকের দুই হাত পেছনে। সালমান এফ রহমান ছাড়া প্রত্যেকের এক হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তবে প্রত্যেকেই নিজেদের দুই হাত পেছনের দিকে রেখেছিলেন।
সালমান এফ রহমানের দুই হাতে পেছনে ছিল। দুই হাতেই হাতকড়া পরানো ছিল। তাঁকে দুজন পুলিশ সদস্য হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাস কক্ষে ওঠান।
শুনানি শেষ হলে সালমান এফ রহমানকে একইভাবে আদালতকক্ষ থেকে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর মাথা ছিল নিচু করা।
একই সঙ্গে কাঠগড়ায় থাকলেও আনিসুল ও সালমান কোনো কথা বলেননি। তবে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুনআনিসুল-সালমান-নুরুজ্জামানের পেছনে দুই হাত, পরানো হাতকড়া২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আসামির দুই হাত পেছনে রেখে উভয় হাতে হাতকড়া পরানোর বিষয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল হক দিদার প্রথম আলোকে বলেন, সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের কীভাবে আদালতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।
এর আগে গত বুধবার সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে ঢাকার আদালতে তোলা হয়েছিল। সে সময় তাঁদের পেছনে ছিল দুই হাত। তাঁদের দুই হাতেই পরানো ছিল হাতকড়া।
আরও পড়ুনকাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু পেপারে পাঁচ মিনিট ধরে চিঠি লিখলেন দীপু মনি২০ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনকাঠগড়ায় কাঁদতে কাঁদতে কামাল মজুমদার বললেন, ‘শেখ হাসিনাকে ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছিলাম’০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম হ জতখ ন আইনজ ব সদস য এ সময় হ তকড় আওয় ম এজল স ক ঠগড় করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল
আদালতের আদেশ অনুসরণ না করে ‘মিলেনিয়াম সিটি’ প্রকল্পের মাটি ভরাট অব্যাহত রাখায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার অভিযোগে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন। অপর তিনজন হলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আদালত অবমাননার অভিযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।
আদেশের বিষয়ে পরে আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, মাটি ভরাটসহ মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের। আদেশ অনুসারে তা প্রতিপালন না হওয়ায় চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন।
এর আগে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত টোটাইল মৌজায় বিদ্যমান টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জনস্বার্থে গত বছর একটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাট কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সঙ্গে টোটাইল খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
বেলা জানায়, হাইকোর্টের আদেশে টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা তদন্ত, মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক মাটি ভরাটের ফলে টোটাইল খালের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা নিরূপণ এবং হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক টোটাইল মৌজায় অবস্থিত জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও নিচু কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিরোধ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসককে আদালতের আদেশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড আপিল বিভাগে আবেদন করে। বেলা জানায়, আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৯ এপ্রিল পক্ষগুলো মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাটি ভরাটের সব কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। এর ফলে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে নতুন করে মাটি ভরাটসহ কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ নেই। আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে মাটি ভরাটসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং প্লট তৈরি করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চটকদার বিজ্ঞাপন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার আকারে প্রচার করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদনটি করে।
আরও পড়ুনখাল ভরাট ও মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা২২ জানুয়ারি ২০২৪