আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন না তিনি। চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণার একদম শেষ দিনে গিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। সেই বরুণ চক্রবর্তীই এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পথে বড় ভরসা!

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গত রাতে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন বরুণ, যা মাত্রই ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করা এই রহস্য-স্পিনারের সেরা বোলিং। গত চার মাসে আরও দুবার ৫ উইকেট করে নিয়েছেন; দুটিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স আর দুবাইয়ের মন্থর পিচের কথা মাথায় রেখে তাঁকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নেওয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ বছর বয়সী বরুণ একাদশে ছিলেন না। কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাড়তি একজন স্পিনার খেলানোর ভাবনা থেকে একাদশে রাখা হয় তাঁকে। কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজার পর চতুর্থ স্পিনার হিসেবে খেলা বরুণই হয়ে ওঠেন দলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। অথচ এই বরুণের পেশাদার ক্রিকেটারই হওয়ার কথা ছিল না!

বরুণ ছিলেন স্থপতি, অভিনয় করেছেন ‘জিভা’ নামে একটি তামিল চলচ্চিত্রে। এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ২৬ বছর বয়সে আবারও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। সব ছেড়ে ছুড়ে ক্রিকেটেই মনোনিবেশ করেন।  

বরুণের জন্ম ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বিদার জেলায়। বেড়ে উঠেছেন চেন্নাইয়ের শহরতলি আদিয়ারে। সেখানে সেন্ট প্যাট্রিক’স অ্যাংগো ইন্ডিয়ান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।

স্কুল ও কলেজজীবনে উইকেটকিপার ছিলেন বরুণ। কিন্তু লেখাপড়ায় আরও মনোযোগী হতে খেলা ছেড়ে দেন। এরপর ভর্তি হন তামিলনাড়ুর এসআরএম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। একটি কোম্পানিতে স্থপতি হিসেবে চাকরিও শুরু করেন। কিন্তু ২৬ বছর বয়সে এসে মনে হলো আবার ক্রিকেটে ঝুঁকবেন। তাই চাকরিটা ছেড়ে দেন।

স্কুল-কলেজে উইকেটকিপার থাকলেও এবার বরুণ ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন পেসার হিসেবে। কিন্তু ২০১৭ সালের শুরুর দিকে হাঁটুর চোটে ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান। পুরোপুরি সেরে উঠে ফেরার পর বনে যান স্পিনার!  

৩৩ বছর বয়সী বরুণ গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে দেরিতে পেশাদার ক্রিকেটে আসার সেই গল্পই শুনিয়েছেন, ‘ক্যারিয়ার নিয়ে আমার নানা ধরনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। ২৬ বছর বয়সে এসে ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তার আগে ছিলাম স্থপতি, চেয়েছি সিনেমা বানাতে। ভিন্ন পথে হেঁটেছি তখন।’

ভারতের জার্সিতে বরুণের অভিষেক ২০২১ সালে। সে বছর এই দুবাইয়েই খেলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ। কিন্তু ছিলেন উইকেটশূন্য। এরপর সেই যে দল থেকে বাদ পড়েন, ফেরেন গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। সেই সিরিজের সব ম্যাচই হয়েছে ব্যাটিং-স্বর্গে। এরপরও বরুণের ইকোনমি রেট ছিল ৬.

০৮, শিকার ৫ উইকেট। তখন থেকেই তিনি নির্বাচকদের সুনজরে ছিলেন।

যে দুবাই ২০২১ সালে বরুণকে খালি হাতে ফিরিয়েছিল, চার বছর পর সেই দুবাইয়ে ভারতের হয়ে আবারও খেলতে নেমেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় মঞ্চে অভিষেকের দিনে কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগেছেন, তা স্বীকার করেছেন বরুণ।

এটাও জানিয়েছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অভিজ্ঞরা স্নায়ুচাপ কাটিয়ে উঠতে তাঁকে অনেক সহায়তা করেছেন, ‘সত্যি বলতে, শুরুর দিকে আমি নার্ভাস ছিলাম। কারণ, ভারতের হয়ে আমি বেশি ওয়ানডে খেলিনি। তবে খেলা কিছু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর ভালো বোধ করতে থাকি। তারা (কোহলি, রোহিত ও পান্ডিয়া) বলের পর বল আমার সঙ্গে কথা বলেছে এবং উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করেছে।’

সতীর্থরা অনেক সাহায্য করলেও কালকের পিচ থেকে খুব বেশি সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন বরুণ, ‘বল খুব বেশি বাঁক খাচ্ছিল না। তবে সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছিল। কুলদীপ, জাড্ডু (জাদেজা) এবং অক্ষর যেভাবে বল করেছে, এমনকি পেসাররাও...আসলে এই জয় পুরোপুরি দলীয় প্রচেষ্টার ফসল।’

আগামীকাল দুবাইয়েই ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে রোহিত শর্মার দল। এর আগে কাল ম্যাচসেরা হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও একাদশে রাখার জোরালো দাবি জানিয়ে রাখলেন বরুণ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স ৫ উইক ট কর ছ ন বর ণ র ন বর ণ স থপত

এছাড়াও পড়ুন:

ফিতরা কীভাবে হিসাব করব

 রমজান পরবর্তী ঈদের অন্যতম ইবাদত হলো ‘ফিতরা’ দেওয়া; মানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা খাদ্য দান করা। পরিভাষায় একে বলে, ‘সদাকাতুল ফিতর’, অর্থাৎ ‘ফিতরের সদকা’। কখনো ‘যাকাতুল ফিতর’ও বলা হয়। ফিতর মানে নাশতা বা সকালের খাবার, বা যা খেয়ে রোজার সমাপ্তি করা হয়। রোজাদার ব্যক্তি দীর্ঘ এক মাস পরে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতো খাবার খাচ্ছেন, হতে পারে রোজা পালনের সময় কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটে গেছে, একই সঙ্গে সমাজের দরিদ্র মানুষও যেন ঈদ উৎসবে অংশ নিতে পারেন, ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, এ-কারণেই ‘ফিতরার’ বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি এই ঈদের নামকরণ করা হয়েছে ‘ঈদুল ফিতর’ বা ফিতরের ঈদ নামে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষ এবং ছোট-বড় সবার জন্য নির্বিশেষে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ‘ফিতরা’ বাধ্যতামূলক করেছেন।

 ফিতরা যেভাবে পরিমাপ করা হয়

 ফিতরা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে-পাঁচটি খাদ্য-পণ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়, তা হলো, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির। এসব পণ্যের যে-কোনো একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যাবে। ফিতরার পরিমাপ হলো, গম ও চালের ক্ষেত্রে ‘অর্ধ সা’ এবং বাকি চারটি পণ্যের ক্ষেত্রে ‘এক সা’ নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘সা’ হলো প্রাচীন আরব পরিমাপের একক। কেজি ও গ্রাম হিসেবে ‘এক সা’ সমপরিমাণ ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম এবং ‘অর্ধ সা’ সমপরিমাণ ১ কেজি ৬শ ৫০ গ্রাম।

আরও পড়ুনরমজানে ৬টি অভ্যাস১০ মার্চ ২০২৫

ফিতরা কার জন্য বাধ্যতামূলক

 প্রতিটি সচ্ছল মুসলিম ব্যক্তি, যার ওপর জাকাত ওয়াজিব, ফিতরা তার ওপর ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক। তবে এটি নিজের জন্য দেওয়ার পাশাপাশি তার ওপর কেউ যদি নির্ভরশীল থাকে তাদের জন্যও দিতে হবে। যেমন, মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান। এমনকি তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও ফিতরা দেবেন।

 ফিতরা কখন দিতে হবে

ফিতরা প্রদান করতে হয় ঈদুল ফিতর নামাজের আগে। পরে দিলেও তা ‘সদকা’ হিসেবে আদায় হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সওয়াব তুলনামূলক কম বলা হয়।

আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫

জাকাত ও ফিতরার পার্থক্য

জাকাত ও ফিতরার মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। জাকাতের বিধানের সঙ্গে রমজান বা ঈদের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ফিতরার সঙ্গে রমজান ও ঈদের বিশেষ সম্পর্ক আছে। সম্পদের পরিমাণ যত বেশি থাকে জাকাতের পরিমাণও তত বেশি হয়। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে বিষয়টি সে রকম নয়। ফিতরা নির্ধারিত একটি অঙ্ক, সম্পদের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে ফিতরার পরিমাণ ওঠা-নামা করে না।

ফিতরা কারা পাবে

ইসলামের দৃষ্টিতে যিনি জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত তিনি ফিতরা পাওয়ার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত হবেন।

বাংলাদেশে চলতি বছর জনপ্রতি সর্বোচ্চ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১০ টাকা। এই ফিতরা নির্ধারণ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগ থেকে আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির এই পাঁচটি পণ্যের বাজারমূল্য সংগ্রহ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এরপর এসব মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 ১. গম বা আটা ফিতরা দিলে ১ কেজি ৬শ ৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১০ টাকা দিতে হবে।

২. যব দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৫৩০ টাকা।

৩. কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১৯৮০ টাকা।

৪. খেজুর দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২৩১০ টাকা।

৫. পনির দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২৮০৫ টাকা।

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল-শেখ বলেছেন, ফিতরায় খাদ্যপণ্য দেওয়া উচিত। অর্থ আকারে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সৌদি গেজেট পত্রিকায় তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যাকাত-আল-ফিতর’ খাদ্য হিসেবে দেওয়া নবীজি (সা.) এর সুন্নত।

আরও পড়ুনযাদের জাকাত দেওয়া যাবে০৭ মার্চ ২০২৫

রোজা পালন করার সময় মানুষ এমন কিছু ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি করতে পারে যার জন্য তার রোজাকে মাকরুহ করে ফেলে, যেমন কোনো অশ্লীল কথা বলে ফেলেছে। ফিতরার মাধ্যমে রোজা পরিশুদ্ধ হয়। ফিতরার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈদের আগে দরিদ্র মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা করা বা তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা। যাতে তারা এই অর্থ দিয়ে ঈদের দিন উদ্‌যাপন করতে পারে।

আরও পড়ুনজীবনজুড়ে রমজান২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিতরা কীভাবে হিসাব করব