ইউক্রেন যুদ্ধের আলোকে ইউরোপ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আলোচনার নেতৃত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন ইউরোপীয় নেতারা। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একে ‘ইতিহাসের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেই সঙ্গে শুধু আলোচনা নয়, বরং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান স্টারমার।

ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির এক কৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন। এই চেষ্টা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ঘটে যাওয়া কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় ত্বরান্বিত হয়েছে।

মার্কিন ও ইউক্রেইন প্রেসিডেন্টের মধ্যে এ বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র ভাষায় জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেন। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় নেতারা নিজেদের ভূমিকাকে আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেন। স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ মিলে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাঁদের আশা, এ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে যুদ্ধের উত্তেজনা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি তৈরি হতে পারে। মাখোঁ ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে ফিগারোকে জানান, প্রস্তাবিত এ পরিকল্পনার প্রথম ধাপে এক মাসব্যাপী আকাশ, সমুদ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর যুদ্ধবিরতি থাকবে। এরপর শুরু হবে স্থল পর্যায়ে আলোচনা।

এই ইউরোপীয় প্রচেষ্টা ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনাপ্রক্রিয়ার একটি বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষিত হতে পারে। তবে স্টারমার স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে এ–ও বলেছেন, পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, ইউরোপ তার প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইউরোপীয় নেতারা নিশ্চিত করতে চান যে রাশিয়া যেন একতরফাভাবে কোনো চুক্তির শর্ত নির্ধারণ করতে না পারে। তারা এ–ও নিশ্চিত করতে চান, সব আলোচনার কেন্দ্রে যেন থাকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব।ইউরোপীয় দেশগুলোর এ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট’ গঠন। এই জোটের দেশগুলো একটি শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের জন্য সামরিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করবে। স্টারমার জোর দিয়ে বলেন, কোনো চুক্তি হলে তা অবশ্যই কার্যকরভাবে রক্ষা করাও সমান জরুরি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপের ঐক্য বর্তমানে এক ঐতিহাসিক উচ্চতায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির সূচনা হওয়া উচিত মানবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। যেমন বন্দী বিনিময়, রাশিয়ার দ্বারা অপহৃত ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। এ পদক্ষেপগুলোয় রাজি হলে তা রাশিয়ার শান্তির প্রতি সদিচ্ছার প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।

এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন পশ্চিমা বিশ্বে বিভক্তির শঙ্কা বেড়েছে। ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা জেলেনস্কিকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করছেন। তাঁরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অকৃতজ্ঞ বলে অভিহিত পর্যন্ত করেছেন। এ ঘটনায় ইউরোপীয় নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্টারমার দ্রুত ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউক্রেনের প্রতি তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এই দ্রুত পদক্ষেপের প্রতিফলন দেখা যায় সম্মেলনের ফলাফলে। সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে একাধিক আর্থিক ও সামরিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়। যেমন যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের জন্য ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি আরও দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য অর্থায়নের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে সম্মেলনে।

জেলোনস্কি ও স্টার্মার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র পদক ষ প ইউর প য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচতলা বাড়ির মালিকও টিসিবির কার্ড নিয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

পাঁচ-সাততলা বাড়ি রয়েছে এমন লোকও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে দেশে এত দুর্বৃত্তায়ন তৈরি হয়েছিল যে, এর থেকে টিসিবি ও বাজার ব্যবস্থাপনা রেহাই পায়নি। এই দুর্বৃত্তায়ন সামাজিক এবং সামগ্রিকভাবে দেশকে পিছিয়ে রেখেছে। সেসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে টিসিবির কাজে স্বচ্ছতা ও গতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় আর্মি গলফ ক্লাবে ‘টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি আয়োজিত এ সভায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। সরকারি কাজকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কার্ড পায়নি। পাঁচ-সাততলা বাড়ি রয়েছে এমন লোকও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছেন। যাচাই করে দেখা গেছে, প্রশাসনে চাকরি করেন এমন ব্যক্তির পরিবারে তিনটি কার্ড রয়েছে। এভাবে যাচাই করে ভুয়া ৪০ লাখ কার্ডধারীকে টিসিবির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল টিসিবিতে। বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট ছিল। সেগুলো থেকে উত্তরণে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। টিসিবি প্রতি বছর ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য কিনে। এই টাকায় কীভাবে আরও বেশি পণ্য কেনা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হচ্ছে। রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি বন্ধের কারণে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে। টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে পণ্য কিনতে গেলে বাজারে প্রভাব পড়ে। সেজন্য কিছু পণ্য টিসিবি নিজেরা আমদানি করবে।

এ সময় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-অনুযোগের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পণ্য সরবরাহকারীদের লেনদেনে কীভাবে আরও স্বচ্ছতা ও গতিশীল করা যায় সে ব্যাপারে কাজ চলছে।

সভায় টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফয়সল আজাদ বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। যার জন্য নতুন আবেদনকারী ও পুরাতন ডিলারদের ডিসি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। ১ জুলাই থেকে এসব ডিলারের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে টিসিবি।

ভোজ্যতেলসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য টিসিবি সরাসরি আমদানি করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।

টিসিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রকৃত উপকার ভোগীরাই যেন ফ্যামিলি কার্ড পায় সেজন্য কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এক কোটি পূরণে বাকি ৪০ শতাংশ কার্ড জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।

এর আগে মুক্ত আলোচনায় টিসিবির সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন এবং ব্যবসা করতে চান এমন অনেক ব্যবসায়ী তাদের অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ