তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা আস্থাশীল।

দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।

জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।

শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র র বড় চ য ল ঞ জ শ মত মত ল নদ ন বল ছ ন সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

যে পরীক্ষায় অংশ নিলে শুয়ে শুয়ে মিলবে ৪১০০ পাউন্ড

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি একটি গবেষণার অংশ হিসেবে ভিন্ন ধরনের পরীক্ষা পরিচালনা করছে। ১০ দিনের জন্য পানির নিচে থাকা একটি বিছানায় শুয়ে থাকার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি। ভিভাল্ডি থ্রি নামক এই পরীক্ষাটি ফ্রান্সের টুলুজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মেডিস স্পেস ক্লিনিকে পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষের শরীরে মহাকাশযানের প্রভাব জানতে এই পরীক্ষা ডিজাইন করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ১০ জন স্বেচ্ছাসেবককে পানিরোধী কাপড় দিয়ে আবৃত করে বাথটাবের মতো যন্ত্রে শুয়ে থাকতে হবে। এই কাপড়ে তাঁরা একইভাবে শুষ্ক থাকেন ও সমানভাবে পানিতে ভেসে থাকেন। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা শারীরিক সমর্থন ছাড়াই ভাসমান অনুভূতি অনুভব করবেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীরা যেমন অনুভব করেন তেমনিই অনুভূতি থাকবে পরীক্ষার সময়। এই পরীক্ষায় নির্বাচিত হলে ৪ হাজার ১০০ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে।

এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় বিশেষভাবে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। টয়লেট বিরতির জন্য অংশগ্রহণকারীদের সাময়িকভাবে একটি ট্রলিতে স্থানান্তরিত করে টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে। মানবদেহে ওজনহীনতার প্রভাব বুঝতে এই পরীক্ষা পরিচালনা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষা ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরিচালিত হবে। শুধু পুরুষ অংশগ্রহণকারীরা এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের মোট ২১ দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। ২১ দিনের মধ্যে ১০ দিন পানির মধ্যে থাকা বিশেষ বিছানায় শুয়ে কাটাতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা বিস্তৃত চিকিৎসা–সংক্রান্ত পরীক্ষায় ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ হিসেবে কাজ করবেন।

খাওয়ার সময় তাঁদের একটি ভাসমান বোর্ডে খাবার দেওয়া হবে। ঘাড় বালিশ ব্যবহার করে তাঁরা খাবার গ্রহণ করবেন। অংশগ্রহণকারীরা এ সময় ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। গবেষণায় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষেরা অংশ নিতে পারবেন। ভালো স্বাস্থ্যের অধূমপায়ী অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করা হবে। মহাকাশের ভারহীনতায় মহাকাশচারীদের দেহ মাধ্যাকর্ষণের অভাবে বিস্তৃত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সেখানে মহাকাশচারীরা পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব হারায়। চোখের মণির আকার পরিবর্তন হতে পারে ও শরীরের তরল মস্তিষ্কে জমা হতে পারে। নতুন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ওজনহীনতার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোঘল আমলের কায়দায় ঢাকায় ঈদ আনন্দ মিছিল
  • যে পরীক্ষায় অংশ নিলে শুয়ে শুয়ে মিলবে ৪১০০ পাউন্ড