কেয়া গ্রুপে শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 3rd, March 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপের নীট কম্পোজিট ডিভিশন, এমপি সোয়েটারস লিমিটেড কারখানা বন্ধ ঘোষণার দুই মাস আগেই ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোমবার (৩ মার্চ) সকালে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা জানায়, গত ২ জানুয়ারি মহানগীর জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপের চারটি কারখানা আগামী ১ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। সে সময় বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কারণ দেখিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দেয়। কারখানাটিতে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছে। বেতনসহ শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনাদি আগামী মে মাসের পরিশোধ করার কথা ছিল কর্তৃপক্ষের। তবে, হঠাৎ করেই সোমবার সকালে কারখানার চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দিয়ে ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাটাই করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, “এতদ্বারা কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড (নীট কম্পোজিট ডিভিশন), এমপি সোয়েটারস লিমিটেড, জরুন, কোনাবাড়ী, গাজীপুর এর সব শ্রমিক ও কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গত ৩১/১২/২০২৪ ইং তারিখে ১২০ দিনের নোটিশ প্রদান করে আগামী ০১/০৫/২০২৫ ইং তারিখ হতে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন না হওয়ায় নিম্নে উল্লেখিত শ্রমিক ও কর্মচারীগণকে পূর্ব ঘোষিত (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং) তারিখের নোটিশ এর প্রেক্ষিতে ২ (দুই) মাস পূর্বেই আগামী ০১/০৩/২০২৫ ইং তারিখ হতে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”
আরো পড়ুন:
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, গাড়িতে আগুন
বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের ঢাকা-আরিচা সড়ক অবরোধ
নোটিশে আরো বলা হয়, “উপরোক্ত সমস্যার কারণে সব অব্যাহতিকৃত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ধারা (২৬) এবং শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী সব পাওনাদী অব্যাহতির পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করা হবে। [বি: দ্র: অব্যাহতিকৃত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তীতে ব্যাংক জটিলতা নিরসন হলে অব্যাহতিকৃত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হবে। নোটঃ সব প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মহিলা এই নোটিশের বহির্ভূত থাকবেন।”
শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে শ্রমিক ছাটাই করার কারণে শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় শ্রমিকরা কেয়া কসমেটিকস কারখানার প্রাধান ফটকে গিয়েও বিক্ষোভ কারতে থাকে। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। তবে, শ্রমিকরা তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “কারখানা বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু আপনারা জানেন এখানে প্রায় এক হাজার বধির শ্রমিক রয়েছে। তারা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল, তারা কর্মসংস্থান চায়। পরে তাদের কথা চিন্তা করে বধির ও অসহায়দের দিয়ে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা একটি নোটিশ করেছি, যেহেতু বেতন দিতে পারছি না এজন্য ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাটাইকৃতদের পাওনা সব পরিশোধ করা হবে যথাসময়ে। আইনে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও আমরা আগামী ২৪ মার্চ পাওনা পরিশোধ করব।”
তিনি আরো বলেন, “আপনারা জানেন মালিক এখন জেলে, তার মেয়ে বলছে, সময় মতো সব পরিশোধ করা হবে। এখন কারখানার সব শ্রমিকদের দাবি, কারখানা চললে সবাই কাজ করবে, না করলে কেউ না। এখন ম্যানেজমেন্ট কি করবে বলেন। তারা এই মুহূর্তে তাদের বেতন চায়, এটা কিভাবে সম্ভব।”
কোনাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ত প ট ই কর
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলার বিচার শুরু, পরবর্তী শুনানি রোববার
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। এর মাধ্যমে আলোচিত এ ঘটনার বিচার শুরু হয়।
আজ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন চার আসামি শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, বোনের স্বামী ও ভাশুর। ২৭ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুলসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তিনি শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও অন্যান্য নথির ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্ট) অভিযোগ গঠন করা হয়।
আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর ১০ মার্চ ২০২৫শুনানি শেষে কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে বিচারক আসামিদের বলেছেন, তাঁরা চাইলে নিজেদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। আইনজীবী নিয়োগ করতে হলে কারাবিধি অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করছেন কি না, বিচারক জানতে চাইলে আসামিরা অপরাধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় চার আসামির রিমান্ডের আবেদন, আদালতের ফটকে বিক্ষোভ০৯ মার্চ ২০২৫তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল রয়েছে। এজাহারে বলা হয়, ঘটনা ঘটেছিল রাতে এবং শিশুটির স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তার বাবা শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। গত ১ মার্চ শিশুটি নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হেলিকপ্টারে করে মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। জানাজার পর উত্তেজিত জনতা শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে তাঁরা সবাই কারাগারে।
আরও পড়ুনমাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করা হবে: আইজিপি১৩ মার্চ ২০২৫