মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি না করার কথা আদালতকে জানিয়েছেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা- ১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।

সোমবার (৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালতে কাফরুল থানায় আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানিতে তিনি একথা জানান। 

কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার সাব-ইন্সপেক্টর জুয়েল ইসলাম। অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, কামরুল ইসলাম, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক দুই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ ৩ মার্চ রাখেন।

এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে বলেন, “আমি কিছু বলবো।” 

এরই মাঝে মোহাম্মদপুর থানার আরেক হত্যা মামলায় আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। আদালত আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

পরে আদালতে কামাল আহমেদ মজুমদারকে বলেন, “আপনি কিছু বলবেন?”

এরপর তিনি কথা বলেন। কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “আমার ৭৬ বছর বয়স। আমার চোখে সমস্যা। ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কারা কর্তৃপক্ষ ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিচ্ছে না। কোরআন বা ডিজিটাল কোরআনও দিচ্ছে না। একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছি। আপনার কাছে আবেদন, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দেওয়ার যেন অনুমতি দেওয়া হয়। পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি না। কি অবস্থায় আছে তাও জানি না।”

তিনি বলেন, “আমার বয়স ৭৬ বছর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি করবো না। আপনার (আদালত) কাছে সুবিচার চাই, প্রার্থণা করছি।”

তিনি বলেন, “একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বয়সে নাতি-নাতনীদের সাথে খেলার সময়। এই বয়সে আমার ওপরে জুলুম চালানো হচ্ছে। আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।  আছি কারাগারে। আপনার কাছে অনুরোধ, কারাগারে ডায়াবেটিস চেক করার জন্য ডিজিটাল কোনে যন্ত্র বা ওষুধ দেওয়া হয়। পবিত্র কোরআন শরীফও যেন দেওয়া হয়।”

আইনজীবীদের সাথেও কথা বলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

এসময় বিচারক বলেন, “আপনার সবগুলো দাবি আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করুন। পরে আদালত এজলাস থেকে নেমে যান।”

শুনানি শেষে আদালত থেকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্যদের কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “কথাও বলতে দিচ্ছেন না।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “রাজনীতি থেকে একদম অব্যাহতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। আর কোনো দলীয় পদে নাই। অব্যাহতি নিয়েছি বলতে পারেন। আজকে থেকে অব্যাহতি। আর রাজনীতি করবো না। কারাগার থেকে আর রাজনীতি করবো না।”

তিনি বলেন, “এদেশে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। ৭৬ বছর বয়স। এ বয়সে রাজনীতি করার করা সম্ভব না। যার কারণে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমরা চাই, নতুন যুব নেতৃত্ব আসুক।”

পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর কাফরুল থানাধীন বিআরটিএ অফিসের পেছনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল ইসলাম। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর তার স্বজন ব্যবসায়ী আহসান হাবীব রাজধানীর কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আনিসুল হক ৪, সালমান এফ রহমান ৬, কামরুল ইসলাম ৮, কামাল আহমেদ মজুমদার ১০, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ১১, শহীদুল হক ২৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

ঢাকা/মামুন/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ফর ল থ ন ল ইসল ম আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

কাতারকে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যবহারের প্রস্তাব প্রধান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মূহাম্মদ ইউনূস কাতারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি কাতারি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উৎসর্গ করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির কারখানাও স্থাপন করা যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. সাওদ বিন আবদুলরহমান আল থানির আমন্ত্রণে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও প্রীতিভোজে অংশ নেন তিনি। সেখানে তিনি কাতারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সহজতর করার এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের প্রস্তুতির কথা জানান।

তিনি কাতারের নিরাপত্তা বাহিনীতে ৭২৫ জন বাংলাদেশি সৈন্য নিয়োগের সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ভবিষ্যতে এ নিয়োগ আরো সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।

পরে লুসাইল সিটিতে কাতারের বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ ফয়সাল বিন আল থানির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পরিবহন, ব্যাংকিং এবং আতিথেয়তা খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক ও উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।”

বিকেলে উপ-প্রধানমন্ত্রী হামাদ বিন আব্দুলআজিজ আল-কাওয়ারীর আমন্ত্রণে চা-চক্রে যোগ দেন তিনি। সেখানে মানবসম্পদ সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

সকালে তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বিগুণ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

বৈঠকে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখা হিন্দ বিনত হামাদ আল থানি বক্তব্য দেন এবং শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ