Samakal:
2025-04-06@16:45:54 GMT

ঘুরেফিরে তারাই খেলে সেমিতে

Published: 3rd, March 2025 GMT

ঘুরেফিরে তারাই খেলে সেমিতে

‘ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে ফুটবলের ব্রাজিল; তারা যত অফফর্মেই থাকুক না কেন, আইসিসি টুর্নামেন্ট এলেই তারা ফেভারিট। তা সে যেমন মানের দলই হোক না কেন। হলুদ জার্সিটা গায়ে জড়ালেই তারা ভয়ংকর’। 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে এক টেলিভিশন টকশোতে এভাবেই স্টিভ স্মিথের দলকে নিয়ে ভবিতব্য করেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার অজয় জাদেজা। তখন সঞ্চালক বলেছিলেন, ভারত তাহলে কি ক্রিকেটের আর্জেন্টিনা? আকাশি-নীল জার্সির কারণে তা আপনি বলতেই পারেন; হাসি-ঠাট্টায় ভারতীয় চ্যানেলের সেই অনুষ্ঠানটি জমে উঠেছিল। 

তবে কথার কথা নয়, অস্ট্রেলিয়া যে সত্যিই ক্রিকেটে ‘ফুটবলের ব্রাজিল’; তা কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে। এমনিতেই সবার থেকে বেশি ছয়বার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে অসিরা। কিন্তু গত দশকের কথায় যদি ধরা হয়, সেখানে কিন্তু একটা মজার ব্যাপার লক্ষ করা যায়। আর সেটা হলো, ২০১৫ ও ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এবারের ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে একই চার দল এবং এই চার দলের মধ্য থেকে গত দুটি আসরেই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। তাহলে কি এবারও চ্যাম্পিয়ন হবে অসিরা?

শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটেই না, ২০২১ সালে দুবাইতে টি২০ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নও তারা। এমনকি সামনে জুনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও খেলবে তারা। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যার অর্থ ঘুরেফিরে এই চারটি দলই আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। তা তারা যেমন শক্তির দল নিয়েই আসুক না কেন। এবার যেমন বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সাতজন আসেনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তার পরও তাদের চ্যাম্পিয়ন মানসিকতা এতটুকু ধাক্কা খায়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ৩৫১ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় অসিরা। মেলবোর্ন, মুম্বাই, লাহোর; যে কোনো কন্ডিশনে যে কোনো উইকেটে অসিরা নিজেদের দারুণ মানিয়ে নিতে পারেন। 

অস্ট্রেলিয়ার মতো ধারাবাহিকতা আছে ভারতেরও। তবে ২০১১ সালের পর ভারত কিন্তু এই ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এর পর শচীন টেন্ডুলকার-উত্তর ভারতীয় প্রজন্মের সাফল্য এসেছে শুধু ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় এবং সর্বশেষ ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অস্ট্রেলিয়ার মতো নিউজিল্যান্ডও আইসিসির আসরগুলোতে স্নায়ু শক্ত রেখে সেমিতে উঠে যাচ্ছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে হেরে গিয়েছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপে তারা লর্ডসে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল। আর গত বিশ্বকাপে মুম্বাইতে তারা সেমিফাইনালে ভারতের কাছে আটকে গিয়েছিল। তবে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরই দ্বিতীয় আসরে কেনিয়ায় ২০০০ সালে তারা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০২১ সালে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিল কিউইরা। সেই হিসাবে কিউইদের যদি ‘ফুটবলের ফ্রান্স’ও বলা যেতে পারে। 

আর নকআউট পর্বে এসে প্রোটিয়াদের স্নায়ু দুর্বলতার ব্যাপারটি সবারই জানা। ঢাকায় আইসিসির এই ইভেন্টের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর পর আর তাদের ফাইনালে দেখা যায়নি। পাঁচটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছে তারা। সর্বশেষ গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও হেরে গিয়েছে। তাই ক্রিকেটের এই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘ফুটবলের নেদার‍ল্যান্ডস’ বললে বোধ হয় খুব বেশি ভুল হবে না। কারণ ডাচরা কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপে তিন তিনবার ফাইনাল খেলেও ট্রফি স্পর্শ করতে পারেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম ফ ইন ল র ফ ইন ল ফ টবল র আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা: ন্যায়বিচার কোথায়

বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত অবহেলার শিকার। দক্ষ জনশক্তি তৈরির অন্যতম ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও কারিগরি শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, যা শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নয়, দেশের শিল্প ও অর্থনীতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতিতে অনিয়ম, ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগ, উচ্চশিক্ষার সীমাবদ্ধতা ও কর্মসংস্থানের সংকট—এসব ইস্যু কারিগরি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। তবু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। প্রশ্ন হলো, আমরা কবে এ অবিচারের অবসান ঘটাব?

অবহেলার শিকড় কত গভীর

কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে এটি যেন উপেক্ষিতই থেকে গেছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের ৬০-৭০ শতাংশ জনশক্তি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ। অথচ বাংলাদেশে এই হার মাত্র ১৪ শতাংশ। সরকার প্রতিনিয়ত কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। পর্যাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, দক্ষ প্রশিক্ষকের সংকট, অপ্রতুল ল্যাব–সুবিধা, নিম্নমানের পরীক্ষাব্যবস্থা, অবৈধ নিয়োগ ও প্রমোশনের অনিয়ম—এসব কারণে কারিগরি শিক্ষার্থীরা আজ হতাশ, বিক্ষুব্ধ।

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ প্রমোশন: মেধার অবমূল্যায়ন

সম্প্রতি কারিগরি ছাত্র আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ প্রমোশন ও বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলেছে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ প্রমোশন উচ্চশিক্ষিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অবমাননাকর। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে, একটি অযোগ্য গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পেশাদারদের হেয় করছে, যা কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট করছে।

শুধু তা–ই নয়, শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে ২০২১ সালে রাতের আঁধারে সংশোধিত নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ অনিয়ম রোধে বিচার চাইলে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, পরীক্ষা বর্জন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাহলে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের জন্য কোথায় যেতে হবে?

উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বৈষম্য: আমরা কি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত। ডুয়েট ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য তেমন কোনো আসন নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলেও ৫-৮ লাখ টাকা খরচ করতে হয়, যা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে। অথচ সাধারণ শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার অসংখ্য সুযোগ আছে।

অন্যদিকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য যেখানে সরকারি চাকরির অসংখ্য পদ রয়েছে, সেখানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য পদসংখ্যা খুবই কম। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের বঞ্চিত করা হয়, কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা হয়, এমনকি কখনো কখনো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের অধীন করে রাখা হয়। তাহলে কি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা শুধুই শ্রম দেবে, কিন্তু মর্যাদা পাবে না?

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে

১. বিতর্কিত পদোন্নতি বাতিল করতে হবে।

২. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন করতে হবে।

৩. ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

৪. অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. কারিগরি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে।

৬. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তাদের স্বপ্ন, পরিশ্রম ও ভবিষ্যৎকে বারবার নষ্ট করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষা বর্জন ও প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের করণীয়: ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক

সরকারের উচিত অবিলম্বে এ সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

বিতর্কিত নিয়োগ ও প্রমোশন বাতিল করে স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকারি চাকরিতে আলাদা কোটা রাখতে হবে।

অধিকসংখ্যক কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে।

কারিগরি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন টেকসই করতে হলে কারিগরি শিক্ষাকে অবহেলা করা যাবে না। আজ যারা কারিগরি শিক্ষাকে অবহেলা করছে, ভবিষ্যতে তারাই দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ভুগবে। তাই আর নয় অবহেলা, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এখনই!

তানভীর হাসান মন্ডল

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে
  • ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার তিন বছর কারাদণ্ড
  • ফ্ল্যাট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা: ন্যায়বিচার কোথায়