গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা
Published: 3rd, March 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় সব মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করায় ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি আরব দেশ ও জাতিসংঘ।
গতকাল রোববার গাজায় ত্রাণ ও পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দেশটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে মিসর ও কাতার। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস মানবিক সহায়তার সরবরাহ চুরি করছিল এবং এগুলোকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কাজে ব্যবহার করেছিল। এ কারণেই তাঁর দেশ পদক্ষেপটি নিয়েছে। নেতানিয়াহুর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস।
গত শনিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এটির মেয়াদ বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ‘সস্তা ব্ল্যাকমেল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে একটি ‘অভ্যুত্থান’।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে ১৫ মাস ধরে চলা লড়াই বন্ধ হয়েছে। এ চুক্তির অধীন প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়েছে হামাস।
গতকাল এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইসরায়েলি এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। এটিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে মন্ত্রণালয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল অনাহারকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে কাতার ও মিসর উভয় দেশই সাহায্য করেছিল।
এদিকে সৌদি আরব ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা ও সমালোচনা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তা–বিষয়ক প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।’
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয় এবং গত শনিবার মধ্যরাতে তা শেষ হয়।
দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলাপ-আলোচনার অর্থ হলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো শুরু হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ২৪ জন জিম্মি জীবিত আছেন। মারা গেছেন ৩৯ জন। তৃতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য হলো অবশিষ্ট মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা এবং গাজা পুনর্গঠন। এ জন্য কয়েক বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আন্তোইন রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এটি অত্যন্ত অপরিহার্য। আমরা সব পক্ষকে একটি সমাধানে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর অনুমোদন ইসরায়েলের০২ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের কৃষিখাতে ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব ফেলে এমন উদ্যোগে অর্থায়নকারী আন্তর্জাতিক তহবিল ‘পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি’। কৃষকদের সহায়তা করতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আই-ফার্মারকে পাঁচ লাখ ডলারের এই সহায়তা দিচ্ছে তহবিলটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই তহবিলের অর্থায়ন আই-ফার্মারের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি উপকৃত করবে। এই তহবিল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এই বিনিয়োগের মাধ্যমে পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটি ২০২৪ সালে তাদের আঞ্চলিক কার্যক্রমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পর প্রথমবারের মতো এই খাতে প্রবেশ করল। ক্ষুদ্র কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলছে আই-ফার্মার। প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের উচ্চমানের কৃষি উপকরণ, আর্থিক সহায়তা, কৃষি পরামর্শ, বিমা সুবিধা ও ন্যায্য বাজার সংযোগ নিশ্চিত করছে। কৃষক, সরবরাহকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে আই-ফার্মার উৎপাদন বাড়াতে, আয় বাড়াতে ও টেকসই কৃষি চর্চা প্রসারে ভূমিকা রাখছে।
নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক লরা আলসেনাস বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখনও সহজ শর্তে অর্থ ও মানসম্মত কৃষি উপকরণ পাওয়ার জন্য নানারকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আইফার্মারের উদ্ভাবনী মডেল কৃষি সরবরাহ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে এবং কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই বিনিয়োগের ঘোষণা তাদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে এবং বাংলাদেশে আরও টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
আইফার্মারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ বলেন, পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির এই অর্থায়নের ঘোষণা আমাদের আরও বেশি কৃষককে সহায়তা দিতে সক্ষম করবে। এর মাধ্যমে আমরা আরও ভালো মানের কৃষি উপকরণ, সহজতর আর্থিক সহায়তা ও শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পারবো, যা সরাসরি কৃষকের আয় ও জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
পাইওনিয়ার ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে নেক্সাস ফর ডেভেলপমেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ সমতা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করা প্রভাবশালী উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করে আসছে। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত এই তহবিলটি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বাংলাদেশে জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগগুলোর জন্য এই তহবিল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। এখন পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।