এবারের রোজায় পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, আলুসহ কিছু ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের স্বস্তি দিলেও তাঁরা বিপাকে রয়েছেন ভোজ্যতেল নিয়ে। ভোজ্যতেল, বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছিল কয়েক মাস আগে থেকে। রোজা চলে এলেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রমজানে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে কোনো সংকট হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম স্থিতিশীল আছে বলেও তারা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু রোজার শুরুতে এসে দেখা গেল বোতলজাত সয়াবিন বাজার থেকে প্রায় উধাও।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে শুক্রবার দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। বিশেষ করে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই সংকট চলছে। এই সুযোগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকা লিটার দরে। এই দর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাহিদার তুলনায় দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, তাহলে ক্রেতারা কেন বাজারে গিয়ে বোতলজাত তেল পাচ্ছেন না?

ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল উৎপাদন ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর দাবি, তারা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছে; কিন্তু ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। আবার খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ কম বলে তাঁরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না।

কয়েক দিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০ কার্টন ভোজ্যতেল উদ্ধার করেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ অভিযানে ২০২৩ সালের মে থেকে অক্টোবর উৎপাদিত পাঁচ লিটারের ছয় কার্টন সয়াবিন তেলও জব্দ করা হয়, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের মে থেকে অক্টোবরে শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ তেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মনে রাখতে হবে, মজুত প্রবণতা তখনই শুরু হয়, যখন সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা থাকে। কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করলে বোতলের তেল মজুত করার ঝুঁকি কেউ নিত না। যেমন এবার চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়নি, কারণ সরবরাহ ভালো।

অন্যান্য দেশে ব্যবসায়ীরা রোজা, ঈদ, নববর্ষ ও বড়দিন উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেন; কিন্তু আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে নেন মওকা হিসেবে।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে থাকে; এই শাস্তি গুরু পাপে লঘু দণ্ডই মনে হয়। বাজারে সরবরাহব্যবস্থায় কী সমস্যা তৈরি হলো, কী উপায়ে তার সমাধান করা যায়, সরকারকে সেটার ওপর জোর দিতে হবে। বোতলজাত তেল সরবরাহের সংকটটি অনেক দিন ধরেই চলছিল। সেটা কেন সমাধান করা গেল না, খোলা তেল সরবরাহ করা গেলে বোতলের তেল সরবরাহ কেন বাড়ানো যাবে না, ব্যবসায়ীরা কি এবার অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভোজ্যতেলকে বেছে নিয়েছিলেন—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে যাঁরা ক্রেতাদের পকেট কাটছেন, তঁাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এমন যাতে না হয়, সেই বাজার কৌশল খুঁজে বের করা সরকারেরই দায়িত্ব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল সরবর হ ব যবস য় র সরবর হ ক ভ জ যত ল ব তলজ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ

চীনের আকাশসেবা সংস্থার জন্য বানানো নতুন একটি বোয়িং উড়োজাহাজ গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ঘরে ফিরে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ ও চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের শিকার হয়ে উড়োজাহাজটিকে ফিরতে হলো।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে রয়টার্সের খবর, বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে প্রতিষ্ঠানটির অবতরণক্ষেত্রে নেমেছে। উড়োজাহাজটি চীনা আকাশসেবা প্রতিষ্ঠান জিয়ামিনএয়ারের জন্য বানানো হয়েছিল। সেটার গায়ে জিয়ামিনএয়ারের নাম লেখা ও তকমা রয়েছে।

আরও পড়ুনবাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প নাকি চিন পিং—কে আগে হার মানবেন১৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রায় ৫ হাজার মাইলের (৮ হাজার কিলোমিটার) ফিরতি যাত্রায় উড়োজাহাজটি গুয়াম ও হাওয়াইয়ে জ্বালানি নেওয়ার জন্য থেমেছিল। চীনা প্রতিষ্ঠানটিতে সরবরাহের জন্য চীনে বোয়িংয়ের ঝৌশান কেন্দ্রে শেষ কাজ হতে থাকা কয়েকটি ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজের মধ্যে এটি একটি।

এ মাসে চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এর জবাবে চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন পণ্যে আরোপ করা হয় ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক। উড়োজাহাজ পরিবহনবিষয়ক পরামর্শদাতা সংস্থা আইবিএ জানিয়েছে, ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের নতুন একটি উড়োজাহাজের বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর শুল্ক চীনা উড়োজাহাজ সংস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো।

আরও পড়ুনচীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প১৮ এপ্রিল ২০২৫

তবে কোন পক্ষের সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরল, সেটা নিশ্চিত নয়। বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে জিয়ামিনএয়ারও কোনো জবাব দেয়নি। আকাশযানশিল্পটি কয়েক দশক ধরে শুল্কমুক্ত অবস্থায় ছিল। পাল্টাপাল্টি শুল্কের জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন এটা নতুন উড়োজাহাজ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার সর্বশেষ লক্ষণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক পরিবর্তন নিয়ে বিভ্রান্তি অনেক ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ সরবরাহকে স্থবির করে দিতে পারে। বেশ কিছু উড়োজাহাজ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) বলেছেন, তাঁরা বাড়তি শুল্ক দেওয়ার বদলে বরং আপাতত উড়োজাহাজ সরবরাহ স্থগিত রাখবেন।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে প্রবৃদ্ধি কমলেও বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি নেই: আইএমএফ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্প কাজে আসছে না
  • বাজারে খুলনার তরমুজ বেশি, চিনবেন কীভাবে
  • চীনের ফেরত দেওয়া বোয়িং কিনতে চায় ভারত
  • বাংলাদেশে ক্যাস্ট্রলের পরিবেশক হিসেবে নিয়োগ পেল রক এনার্জি
  • নেত্রকোনায় সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ড, জেলা কারাগার সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন
  • ‘বিল তো ঠিকই দিই, পানি পাই না এক ঘণ্টাও’
  • শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা করার দাবি টিইউসির
  • মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনে যত চ্যালেঞ্জ
  • ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের দায় শোধ করতে পারবে ব্যাংক
  • ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ