নেতৃত্ব তার কাছেই যাওয়া উচিত যার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে: রুনা খান
Published: 3rd, March 2025 GMT
‘কেউ নম্র হতে পারেন, সে কারণে তাকে দুর্বল ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। বরং যে যত বিনয়ী, তার ক্ষমতা তত বেশি হতে পারে’-বললেন বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান।
নিজেকে তিনি বর্ণনা করেন একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, একজন মা এবং একজন লেখক হিসেবে। সুবিচার, সম্মান ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশা হলো তার কর্মশক্তির উৎস। শুধু সমস্যা সমাধান নয়, বরং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি তার লক্ষ্য।
২০০২ সালে যাত্রার পর প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষকে সহযোগিতা করে আসছে ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থাটির রয়েছে চার হাজারের বেশি কর্মী, যাদের ৫০ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দা। মূলত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাহাজের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে ফ্রেন্ডশিপ। এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে রুনা খানের হাত ধরে।
রুনা খানের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৮ সালে। লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ ও ইডেন কলেজের পর তিনি হার্ভার্ড এক্সিকিউটিভ এডুকেশন প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার কয়েকটি বই এবং অশোকা ফেলোশিপ পানি তিনি। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ছয়টি শিক্ষা বিষয়ক এবং দুটি শিশুতোষ গল্প। ১৯৯৫ সালে তিনি কাজ শুরু করেন ইউনিসেফের সঙ্গে।
দেশে-বিদেশে কল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রুনা খান যেসব সম্মাননা পেয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড (২০২২), পজিটিভ প্লানেটের গ্রিন অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), আইডিবি প্রাইজ ফর ওম্যান্স কন্ট্রিবিউশন টু ডেভেলপমেন্ট (২০০৮), রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড ফর এন্টারপ্রাইজ (২০০৬) এবং অশোকা ফেলোশিপ (১৯৯৪)।
আগামীতে কী করার স্বপ্ন দেখেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে রুনা খান বলেন, ‘এমন একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে নারীর অবস্থান শুধু নিশ্চিত নয়, বরং শক্তিশালী হবে। ওই পৃথিবী হবে এমন, যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, শহরের নারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবেন, আগামীর নেতৃত্ব দেবেন।’ নেতৃত্ব তার কাছেই যাওয়া উচিত যার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে এবং নেহায়েত পুরনো প্রথার ভিত্তিতে কারো হাতে নেতৃত্ব যাওয়া ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের হাতে শুধু ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নয়, বরং সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের চাবিকাঠিও তুলে দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যেন উন্নতির পদযাত্রায় কোনো নারীকে পেছনে ফেলে যাওয়া না হয়।’
ফ্রেন্ডশিপের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী জাহাজগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো ‘লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’, যেটি পরিচালিত হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। ভাসমান এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬ লাখের বেশি মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ডে ২০২৫ উপলক্ষ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ক্যাম্পেইন 'এক্সেলারেট অ্যাকশন- এম্পাওয়ার্ড ওমেন, এম্পাওয়ারিং দা ফিউচার' এর অধীনে স্মরণ করা হচ্ছে রুনা খানের এই অবদানকে।
আগামীতে উন্নয়নের হাল ধরতে চান- এমন নারীদের উদ্দেশ্যে রুনা খান বলেন, ‘এগিয়ে যাও, কারো অনুমতি বা স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করো না। সাহস নিয়ে নেতৃত্ব দাও, বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলো, কাজ করো সততার সঙ্গে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করলে পৃথিবী পাল্টাবে না, পৃথিবী পাল্টাবে তখন যখন তুমিই একে বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য নিজের মূল্যবোধ যত্নে আগলে রাখতে হবে, আর ভবিষ্যতে সেটাই পথ দেখাবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ট্রেনিং-রিসার্চকে গুরুত্ব দিতে হবে’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য সার্ভিস, ট্রেনিং এবং রিসার্চকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স রুমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মোটামুটি একটি পর্যায়ে এসেছে। এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ফাংশনাল দিক উন্নত করা। এটাকে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। সেক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য এ ইন্সটিটিউটের ম্যান্ডেট হচ্ছে সার্ভিস, ট্রেনিং এবং রিসার্চ। এই তিনটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যখন সাইকিয়াট্রিতে আসি- তখন অনেকে বলতেন সাইকিয়াট্রিস্ট বাই চান্স। কিন্তু এখন অবস্থাটা পুরো পাল্টে গেছে। এখন সাইকিয়াট্রিস্ট বাই চয়েস। এটা হচ্ছে সবচেয়ে সম্ভাবনার দিক।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের আধুনিক সময়ের মানুষদের পরিচয় হচ্ছে বহুমাত্রিক। আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মগত, জাতিগত, পেশাগত পরিচয় রয়েছে। কিন্তু যখন আমরা নিজেদের সাইকিয়াট্রিস্ট বলি তখন কিন্তু আমরা এই পরিচয়টাকে হাইলাইটস করি। ফলে সেটাই ঐক্যের সূত্র হবে। এটা হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই আমরা এ জাতির মেন্টাল উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারবো। আমরা তখনই ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, যখন সম্মিলিত স্বপ্ন থাকে। সম্মিলিত কোন স্বপ্ন ছাড়া কখনো ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় না। সাইকিয়াট্রিতে আমরা এমন সমস্যা ডিল করি যা একান্তই ব্যক্তিগত। ফলে সেক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টদের বেশি এ্যথিক্যাল হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে একজন ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”
সাইকিয়াট্রি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, “আশা করব- আপনাদের প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ডাইমেনশন হিসেবে এই দিকটার প্রতি নজর রাখবেন। যেন আমরা ভালো, দক্ষ সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ার পাশাপাশি সত্যিই একজন এ্যথিক্যাল মানুষ হয়ে উঠতে পারি।”
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার হেদায়েতুল ইসলাম, অধ্যাপক ডাক্তার মো. এনায়েত করিম, অধ্যাপক ডাক্তার মো. নিজাম উদ্দিন, অধ্যাপক ডাক্তার ওয়ালিউল আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক কামরুল হাসান, ডাক্তার তৈয়বুর রহমান রয়েল, ডাক্তার আহসানউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
ঢাকা/এএএম/ইভা