যে পথ ধরে পাহাড় থেকে পাচার হয় বন্য প্রাণী
Published: 3rd, March 2025 GMT
ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে ১১টি বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমান নেওয়া হচ্ছিল কুষ্টিয়ায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীরা হনুমানগুলোকে চট্টগ্রাম থেকে বিক্রির জন্য কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এর আগেও ঢাকায় গত ৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় পাচারকালে আটটি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও নেওয়া হচ্ছিল চট্টগ্রাম থেকে।
শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, গত এক বছরে বিভিন্ন স্থানে আটক ও গ্রেপ্তার পাচারকারীরা পুলিশ বা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, মূলত চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা এসব বন্য প্রাণী সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। এর আগে বন কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, চট্টগ্রাম মূলত ট্রানজিট। তবে এখন তাঁরা বলছেন, ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন প্রাণীও পাচার হচ্ছে।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট, একসময় বাংলাদেশ ট্রানজিট দেশ হিসেবে ধরা হতো। তবে বর্তমানে বাংলাদেশকে ধরা হয় সোর্স, ট্রানজিট ও কনজ্যুমার দেশ হিসেবে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়ার পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পাচার হওয়া বন্য প্রাণীও আসে দেশে। মূলত তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধরা বন্য প্রাণী ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৭১৭টি অভিযান পরিচালনা করে ১৯ হাজারে বেশি বন্য প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা ৯ হাজার এবং বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম ও কচ্ছপের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুন্ধি কাছিম এক হাজারের বেশি ও কড়ি কাইট্টা (কচ্ছপ) ৯৫৫টি।
বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস আজ ৩ মার্চ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।
পাহাড় থেকে যে পথে পাচারপার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামে আসা যায়। যেটি মূলত বান্দরবানের লামা-আলীকদম এলাকা হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যোগ হয়। এর বাইরে আরেকটি লামা থেকে কোয়ান্টাম এলাকা হয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় উঠেছে। এ ছাড়া আরেকটি গ্রামীণ সড়ক কোয়ান্টাম এলাকা থেকে টংকাবতী সড়ক হয়ে বান্দরবানে যোগ হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসতে অন্তত তিনটি তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) পার হতে হয়। তবে বাকি দুই সড়কে তেমন কোনো তল্লাশিচৌকি নেই। স্থানীয় লোকজন বলছেন, মূলত এই দুটি সড়কই বন্য প্রাণী পাচারের রুট হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বনের ভেতর দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরেও প্রাণী আনা–নেওয়া করা হয়। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও তেমন পদক্ষেপ নেয় না।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের জনবলসংকটের কারণে সব স্থানে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়। তিন পার্বত্য অঞ্চলের বন বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে সহযোগিতার জন্য।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (চট্টগ্রাম) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ, বিজিবির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। যাতে অপরাধ কমানো যায়। এ ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলে যাঁরা সংশ্লিষ্ট কাজ করেন, তাঁদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে সেভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। যেসব সড়কের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমাদের নিয়মিত টহল কার্যক্রম আছে। সম্প্রতি এসব সড়কে এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি।’
দেশে বর্তমানে বন্য প্রাণী পাচার রোধে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাও (ইন্টারপোল) নজরদারিতে রেখেছে বাংলাদেশের বনাঞ্চলগুলো।
খাঁচায় করে পাচার করা হচ্ছিল ১১টি মুখপোড়া হনুমান। ছবিটি ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে উদ্ধার করার পরের.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র জন য হন ম ন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা
সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু
হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।
মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।