যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একমত ইউরোপ
Published: 3rd, March 2025 GMT
ট্রাম্প-জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডার পর ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে তৎপর হয়েছে ইউরোপ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন ইউরোপের নেতারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়েই এটা করতে চান তাঁরা। এ লক্ষ্যে চার দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে এক সম্মেলনে বসেছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনলন্ডন সম্মেলনে ইউক্রেনের পক্ষে চার বিষয়ে মতৈক্য৪ ঘণ্টা আগে‘সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় শুরু হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা সম্মেলন চলে। সেই আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও এতে ইউরোপের নিরাপত্তা শঙ্কা প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে রয়েছি। এটা কথা বলার কোনো সময় নয়। স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ ও একসঙ্গে কাজ করার এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এটা। ইতিহাস আমাদের একটা কথা বলে, ইউরোপের কোথাও যদি সংঘাত চলতে থাকে, তা একদিন সবার দুয়ারে ধাক্কা দেবে।’
আরও পড়ুনসবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, লন্ডন সম্মেলন শেষে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান৪ ঘণ্টা আগেভবিষ্যতে আবারও এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ইউরোপের নেতারা বৈঠক করবেন জানিয়ে স্টারমার বলেন, এসব পদক্ষেপের গতি অব্যাহত রাখতে ও একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার জন্য শিগগিরই আবার বৈঠকে বসার বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে সম্মেলনে যে পরিকল্পনা নেওয়া হলো, তাতে বৈঠকে থাকা অনেক দেশ যুক্ত হতে চায় বলে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এটা খুব গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করি যে কিছু দেশ এগিয়ে না এলে আমরা যে অবস্থানে আছি, সেখানেই থেকে যাব। আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। তাই ইউরোপকেই বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে লন্ডন সম্মেলনের ওপর নজর রাখছে মস্কো৫ ঘণ্টা আগেচার দফা শান্তি পরিকল্পনা
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে লন্ডন সম্মেলনে চার দফা একটি পরিকল্পনার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্য ইউরোপীয় দেশ। এই পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মিলে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোবে।
ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মেলনে চার দফা পরিকল্পনা হলো: যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে; স্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে অবশ্যই রাখতে হবে; শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে ইউরোপের নেতাদের; ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি জোট গঠন করতে হবে এবং দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা৫ ঘণ্টা আগেকিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আজ এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে গতি এল, সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই পরিকল্পনা। এর লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং এটা নিশ্চিত করা যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছি। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।’
এর পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যের দেওয়া এই অর্থ খরচ করে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে।
স্টারমার বলেন, ‘ইউরোপকে অবশ্যই বড় দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমাদের এই মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ও তা সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সমর্থন থাকতে হবে।’
আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে লন্ডনে সম্মেলন শুরু, যোগ দিয়েছেন ইউরোপের নেতারা৬ ঘণ্টা আগেসম্মেলনে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। সম্মেলন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনে যেন একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকে, সেটা নিশ্চিত করা পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোর মূল লক্ষ্য হবে। সবকিছুর ভিত্তি হবে ইউক্রেনের একটা শক্তিশালী সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুনইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে২ ঘণ্টা আগে‘খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’
সম্মেলনে ‘ভালো ও খোলামেলা আলোচনা’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন। সম্মেলন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের বিশাল পরিসরে অগ্রসর হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যয় বাড়ানো। সবচেয়ে খারাপ কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, এই নীতি বজায় রাখার জন্য আপনি আপনার প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ করতে পারবেন না বা শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত পাল্টে ফেলতে পারবেন না।’
সম্মেলনে নজর ছিল রাশিয়ার
স্বাভাবিকভাবেই লন্ডন সম্মেলনে নজর ছিল রাশিয়ার। গতকাল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সেই সম্মেলনের আগে অভিযোগ করেন, ৫০০ বছর ধরে বিশ্বে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনাগুলোর সবই হয় ইউরোপ থেকে সৃষ্টি হয়েছে অথবা ইউরোপীয় নীতির কারণে ঘটেছে। লাভরভ এটাও বলেন, কোনো সংঘাত উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউরোপের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ওপর থেকে সমর্থন পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এবং এর ফলে দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরও ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাবে—ইউরোপের শঙ্কার মধ্যে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
গতকালের সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে যোগ দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটে। পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও চেক প্রজাতন্ত্রের নেতারাও সম্মেলনে যোগ দেন।
এখন ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া ডেমোক্রেসি ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক পিটার জালমায়েভ। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ইউরোপ যদি এবার জেগে না ওঠে, তাহলে আর কখনোই জাগবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প র ন ত র ইউক র ন র প য় ছ ন ইউর প ন শ চ ত কর ন ইউর প র ইউর প য় পদক ষ প র জন য র বল ন ক জ কর আম দ র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশির ভাগ মার্কিনের মনোভাব নেতিবাচক: সিএনএনের জরিপ
নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর গত কয়েক সপ্তাহে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন, তাতে তাঁর প্রতি আমেরিকানদের নেতিবাচক মনোভাব আরও বেড়েছে।
সিএনএনের এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। এসএসআরএস দেশজুড়ে এই জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপে তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেগুলো হলো ট্রাম্পের সঙ্গে কতটা একমত, ট্রাম্প যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সেগুলো সঠিক কি না এবং তাঁর নীতি দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারছে কি না।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রমের সঙ্গে একমত নন, ৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী একমত পোষণ করেছেন।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে করা সিএনএনের আরেকটি জরিপে প্রায় একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। গত শুক্রবারের আগে সিএনএনের এবারের জরিপ শেষ হয়েছে।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র বাগ্বিতণ্ডায় হয়, ভেস্তে যায় বৈঠক। তবে সিএনএনের এই জরিপে ওই বৈঠকের আগেই শেষ হওয়ায় এতে বৈঠকের কোনো প্রভাব পড়েনি।
জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্প এখনো দারুণ জনপ্রিয়। ট্রাম্প যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, তার সঙ্গে ৯০ শতাংশ রিপাবলিকান একমত পোষণ করেছেন। যদিও ট্রাম্প এখনো একই রকমভাবে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অজনপ্রিয়। ৯০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ট্রাম্পের দেশ পরিচালনার সঙ্গে একমত হতে পারেননি।
আরও পড়ুনট্রাম্প ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন, প্রথম দিনেই সই করবেন রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে১৯ জানুয়ারি ২০২৫অন্যদিকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৬ জন ট্রাম্পের সঙ্গে একমত নন। তাঁদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ অসম্মত এবং ৪১ শতাংশ সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। জরিপে বেশির ভাগ মানুষ ট্রাম্পের নীতি ও দেশ পরিচালনার সঙ্গে সম্মত না হলেও প্রথম মেয়াদের তুলনায় ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
আরও পড়ুন‘সুবর্ণ যুগের’ প্রতিশ্রুতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের২০ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনক্ষমতা গ্রহণের পর ৭৯টি নির্বাহী আদেশে সই ট্রাম্পের ৯ ঘণ্টা আগে