পবিত্র রমজান মুমিনের জন্য প্রশিক্ষণকাল। এ মাসে মুমিন সংযমে ভরা পুণ্যময় জীবনে অভ্যস্ত হয় এবং বছরের অন্য মাসগুলোতে সেভাবে জীবনযাপন করে। একজন রোজাদারের রোজনামচা কেমন হতে পারে, তার একটি ধারণা এখানে দেওয়া হলো। সুবিধামতো এসব আমল করা যায়।
সকাল
আজানের জবাব: একজন মুমিনের দৈনন্দিন জীবন শুরু হয় ফজরের আজান শুনে। সে প্রথমেই আজানের উত্তর দেয় এবং আজানের দোয়া পাঠ করে। আজানের উত্তর প্রদানকারীর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.
ফজরের সুন্নত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে তা থেকে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭২৫)
জামাতে ফজর নামাজ আদায়: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রাতের আঁধারে মসজিদে আগমনকারীদের কিয়ামতের দিন পূর্ণ আলো লাভের সুসংবাদ দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৫৬১)
জিকির ও তাসবিহ পাঠ: ফজরের নামাজের পর পুরুষেরা মসজিদে এবং নারীরা জায়নামাজে বসে জিকির, তিলাওয়াত ও তাসবিহ পাঠ করবেন। কেননা ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজর নামাজ শেষে সূর্য পরিপূর্ণ উদিত হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতেন।’ (সুনানে আবি দাউদ)
দান করা: প্রতিদিন সকালে ফেরেশতারা দানকারীর জন্য দোয়া করে। তাই দানের মাধ্যমে দিন শুরু করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪৪২)
দুপুর
হালাল জীবিকার সন্ধান: কারও উপার্জন হারাম হলে রমজান মাসে সে তা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাজের সন্ধানে পথ চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম)
জোহরের নামাজের প্রস্তুতি: আজানের উত্তর দেওয়া, নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।
বিকেল
আসরের নামাজের প্রস্তুতি: নামাজের প্রস্তুতি ও মসজিদে জামাতের সঙ্গে আসরের নামাজ আদায় করা।
কোরআন তিলাওয়াত: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হতেন এবং তাঁরা উভয়েই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬)
ইফতারের আগে দোয়া: ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫২)
রাত
মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি: জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়।
জিকির ও তাসবিহ পাঠ: হাদিসে উল্লেখিত সন্ধ্যার জিকির ও তাসবিহ পাঠ করতে পারেন।
পরিবারে ধর্মচর্চা: পরিবারের সবার খোঁজখবর নেওয়া। ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করা বা কোনো বই পড়া। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি উপদেশ দিতে থাক। কেননা উপদেশ মুমিনদেরই উপকারে আসে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৫)
এশার নামাজের প্রস্তুতি: রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঘরে পবিত্রতা অর্জন করে এবং পায়ে হেঁটে কোনো মসজিদে ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য যায়, তাহলে তার এক পদক্ষেপে একটি পাপ মার্জনা হয় এবং অপর পদক্ষেপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৬৬)
এশার নামাজের প্রস্তুতি: আজানের উত্তর দেওয়া, জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় এবং এশার সুন্নত নামাজ পড়া।
জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায়: মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে, আল্লাহ তার জন্য পূর্ণ রাত নামাজ আদায় করার সওয়াব লিখে রাখেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস ১৬০৫)
তাহাজ্জুদ আদায় ও সাহ্রি খাওয়া: রমজান মাসে তাহাজ্জুদ পড়ার বিশেষ সুযোগ থাকে। আর সাহ্রি খাওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহ্রি খাও। কেননা সাহ্রিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯২৩)
আরও পড়ুনগাভি নিয়ে বনি ইসরাইলের বাড়াবাড়ি০১ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ য় কর আল ল হ র জন য ত সব হ মসজ দ ফজর র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।