তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আগামী ১ জুন। এ জন্য নির্বাচন পরিচালনা ও আপিল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চলছে ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। ইতোমধ্যে ৬৯০ ভুয়া ভোটার শনাক্ত করে তাদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট এবং ভেরিফিকেশনে ভুয়া ভোটার শনাক্ত হয়। ভুয়া শনাক্ত সদস্যদের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৫৮২ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০৮ জন। এখন প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০৬।
গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৬। পর্যালোচনার কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য গত ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন বিজিএমইএর ১০ সদস্য। এতে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশাসকের নিয়োগ করা হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং অডিট ফার্মের বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট ও ভেরিফিকেশন কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বিজিএমইএর সদস্যপদ নবায়নের নতুন নিয়মের স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। রিটটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যেই ভুয়া ভোটার শনাক্ত করার কাজটি হয়েছে।

দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিজিএমইএ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে। একটি সম্মিলিত পরিষদ এবং অপরটি ফোরাম। দল নিরপেক্ষ বলা হলেও গত ১৬ বছর সম্মিলিত পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ছিল। কিছুটা আওয়ামীবিরোধী শিবির  হিসেবে বিবেচনা করা হয় ফোরামকে। গত নির্বাচনের আগে ৭৯২ ভুয়া ভোটার থাকার অভিযোগ করা হয় ফোরামের পক্ষ থেকে। শর্ত অনুযায়ী, ভোটার হতে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, অভিযুক্তদের রিটার্ন হালনাগাদ নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে সে সময়কার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ৬৭ জনের ভোটাধিকার বাতিল করে। বাকিদের ভোটাধিকার বহাল ছিল।   নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ নিরঙ্কুশ বিজয় পায়। প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সভাপতি নির্বাচিত হন।
অবশ্য গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়। এতেও ফোরাম আপত্তি থাকায় পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে  নির্বাচন  অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আরও চার মাস প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ জুন তাঁর বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।
সংগঠনের প্রতিদিনকার কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসককে সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি সহায়ক কমিটি রয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালকে। ল ফার্ম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ব্যারিস্টার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ এ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। 

অন্যদিকে নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে। এ বোর্ডের দুই সদস্য হয়েছেন বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এন এম কুদরত-ই-খু্দা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। 

নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল গতকাল সমকালকে বলেন, দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। আজ সোমবার বোর্ডের প্রথম বৈঠক হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সম্পর্কে বৈঠকে  বিস্তারিত আলোচনা হবে। ভুয়া ভোটারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তবে বিস্তারিত এখনও জানেন না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ ব জ এমইএর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমার জান্তার মরিয়া চেষ্টা

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে ঐতিহাসিক যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিযেছিলেন, তা খুব দ্রুতই মুখ থুবড়ে পড়ল। তিনি মিয়ানমারের যুদ্ধবিরতি-বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার  কালি শুকানোর আগেই তাকে ভণ্ডুল করে দেওয়া হলো। আবারও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের তাতমাডো বাহিনী সেই সাগাইং অঞ্চলে নতুন করে বোমা হামলা শুরু করে, যে এলাকা ছিল সাম্প্রতিক ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল।

যেটি মানবিক জানালা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা ছিল তা এখন মিয়ানমারের দীর্ঘ ট্র্যাজেডির আরেকটি অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। এটি লেখা হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার ভাষায়। কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকতা যদিও গভীরভাবে হতাশাজনক, এটি আসিয়ানের ব্যর্থতা নয়; বিশেষ করে আনোয়ারের তো নয়ই। বরং মিয়ানমারের জান্তা ও ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টকে (এনইউজি) যুক্ত করতে তাঁর এই বিরল সাহস ও রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল এখনও পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এর কারণ এই নয়, এটি কয়েক দিনের জন্য হলেও শান্তি এনেছে। বরং এটি তাতমাডোর প্রকৃত একগুঁয়েমিকে উদোম করে দিয়েছে এবং আসিয়ানের কূটনীতিকে নতুন করে স্পষ্টতা ও বৈধতা দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আশ্চর্যজনক নয়, বরং এটি একটি সংকেত। এ ক্ষেত্রে সংকেত যতটা স্পষ্ট ততটাই বিপজ্জনক যে, তাতমাডো অঞ্চল, সংহতি ও আস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
এটি কেবল আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নয়, বরং নিজস্ব কমান্ড চেইনের মধ্যেও একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এটি বিশেষ করে সাগাইংয়ের ক্ষেত্রে সত্য, যা দীর্ঘদিন ধরে অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীকী ও কার্যকরী কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত।
স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়– যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়া স্পষ্টত তারই প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।  সমাধানের চেষ্টা না করে নিরপেক্ষতার মানে হলো কুকর্মে সহযোগিতা করা এবং তা মিয়ানমারের চলমান ভাঙনের সঙ্গে আসিয়ান ও অন্যান্য শক্তির যোগসাজশ বলে বিবেচিত হবে।  

উভয় পক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার পর আনোয়ার এখন তার সহযোগী রাষ্ট্রপ্রধানদের এটা বোঝাতে সক্ষম যে, অস্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। জান্তা ও এথনো-ন্যাশনালিস্ট অর্গানাইজেশন (ইএনওএস) উভয়ই যখন তাদের সবচেয়ে দুর্বলতম পর্যায়ে থাকে, তখন পদক্ষেপ অবশ্যই চূড়ান্ত হতে হবে।
এ কারণে আনোয়ারের দ্বৈত-কূটনীতিকে ব্যর্থ বলা যায় না। এটি ছিল একটি কৌশলগত প্রকাশ। জান্তা ও এনইউজি উভয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে আনোয়ার দেখিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ ঐক্য যাচাই-বাছাইয়ের পরও এবং বহিরাগত প্রত্যাশা বেশি থাকলেও আসিয়ান এখনও একসঙ্গে বসতে, যোগাযোগ করতে ও বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে আহ্বান জানাতে পারে।
এখন আসিয়ান+জিসিসি+চীন শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ার তিনটি ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতা আর কাল্পনিক নয়, এটি চলমান। সমন্বিত হস্তক্ষেপ গৃহীত না হলে আসিয়ান ও জিসিসি বা উপসাগরীয় সহযোগিতা অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাত, মানব পাচার, ডিজিটাল দাসত্ব ও রাষ্ট্রহীনতার বিস্তার লাভ অনিবার্য।
প্রকৃতপক্ষে, মিয়ানমারের বিভক্তির ফলে চীন, থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণহীন অঞ্চলের সৃষ্টি হচ্ছে। 

সেগাইং-এ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন আরেকটি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের চেয়েও বেশি কিছু। এটি ভেঙে পড়ার একটি বিন্দু। আর বিপরীতভাবে এটি আনোয়ার ও আসিয়ানকে তাদের প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। এই শক্তি তিরস্কার করার জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক সংকটের মুহূর্তে নেতৃত্ব ও কৌশল নির্ধারণের জন্য।

ফার কিম বেং: মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক; এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেসবুক লাইভে এসে নিরাপত্তা চাইলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা
  • ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে জখম, থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পরিবারের
  • বাংলাদেশকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ দেখছে জিম্বাবুয়ে
  • শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক
  • লেনিন কেন এখনও জরুরি
  • মিয়ানমার জান্তার মরিয়া চেষ্টা
  • গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা
  • বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস আজ
  • সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ
  • সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বিকেএমইএর