রমজান সামনে রেখে ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে। দিন সংখ্যা কম হওয়ার পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে গত মাসে এসেছে প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার। দৈনিক গড়ে ৯ কোটি ২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কোনো একক মাসে দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার আসে গত ডিসেম্বরে। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ গত জানুয়ারি কিংবা আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও অনেক বেশি। মূলত সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। আট মাসে বেশি এসেছে ৩৫৫ কোটি ডলার, যা ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। এসব কারণে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৬ কোটি ডলার। গত জানুয়ারিতে এসেছিল ২১৯ কোটি ডলার। এ যাবৎকালে কোনো একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার এসেছিল গত ডিসেম্বরে। দিন সংখ্যা কম হওয়ার পরও এ বছরের ফেব্রুয়ারির রেমিট্যান্স চতুর্থ সর্বোচ্চ।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচার নিয়ে কড়াকড়ির কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। এতে করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার বাণিজ্যের আড়ালে কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হুন্ডি করে যারা দেশের বাইরে পাঠাত, তারাও চাপে আছে। ঋণ জালিয়াতি, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অভিযুক্ত ১০টি গ্রুপের বিষয়ে যৌথ টিম কাজ করছে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার চেষ্টা চলছে। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে। এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে এখন ২১ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই। গত বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ জানুয়ারি যা ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই দিন ছিল ২০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে অবশ্য রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। বিগত সরকারের সময়ে প্রচুর ডলার বিক্রির কারণে তা দ্রুত কমে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ডলার বাজারে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ার অন্যতম কারণ অর্থ পাচার কমে যাওয়া। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দশম ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।

টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।

স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।

এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।

স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।

টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।

মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’

স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।

জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাওনা আদায়ে রিংশাইন টেক্সটাইলের ৬টি প্লটের বরাদ্দ বাতিল
  • প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ
  • ফেব্রুয়ারির ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স
  • রোজার আগের মাসে প্রবাসী আয় ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • রিং সাইনের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ৬ শতাংশ
  • এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা
  • রিংসাইন টেক্সটাইলের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ
  • শতভাগ রপ্তানিমুখী প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে যাচ্ছে আরএফএল
  • টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত