ডিজিটাল জগতের সুপ্রসারে সবকিছুই দারুণ উপভোগ্য। চটজলদি বিকিকিনি যেন সময়ের চাহিদা তুঙ্গে নিয়েছে। বিপরীতে অবশ্য প্রতারণা আর শঙ্কা ভীতি ছড়িয়েছে। নিত্যনৈমিত্তিক সুকৌশলে সাইবার চক্র যেন অধরা আর অপ্রতিরোধ্য। কয়েকটি ওটিপি হ্যাকের ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। সামনে আসছে ঈদ। তাই সতর্ক হতে হবে এখনই। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
হুট করেই অচেনা কোনো নম্বর থেকে কেউ ফোন করল পরিচিত কারও কথা বলে। কিছু একটা বলে এটা-ওটা শুনিয়ে তাৎক্ষণিক জরুরি প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা প্রার্থনা করে বসল। বিভ্রান্ত হলেন, জটিল কিছু না ভেবেই করলেন সাহায্য।
পরিচিত কারও নাম শুনে কথাও বললেন খানিকটা। মিনিট না পেরোতেই অজানা ওই কণ্ঠ জানাল, চেনা যে ব্যক্তির কথা সে বলেছে, সে আরেকটা নম্বর থেকে ফোন করেছে। কলটা মার্জ করার কথা বলল, তা হলে তিনজন একসঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে।
প্রস্তাবটা খারাপ তো নয়– এমন ভাবনা আসা স্বাভাবিক। মুহূর্তেই বাইরে থেকে আসা ওই কলে যুক্ত হলেন, অর্থাৎ মার্জ করলেন। ব্যস! মিনিটের ব্যবধানে বুঝতে পারলেন কিছু একটা ঘটে গেছে। কিন্তু কী সেটা? ঘটতে পারে অনেক কিছুই। প্রধান লক্ষ্য আর্থিক ক্ষতি। কোনো ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) বা অন্য কোনো তথ্য না জেনেও কীভাবে ঘটল এমন ঘটনা, বিস্ময় প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। সাইবার ক্রাইম জগতে নব্যধারার এমন পদ্ধতি ‘কল মার্জিং স্ক্যাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কীভাবে এমন ঘটনা সম্ভব! প্রথমে বিবেচনা করতে হবে, প্রতারক চক্র কীভাবে কী পদ্ধতিতে ফাঁদ পেতেছে। প্রথম ধাপে চক্রটি আগে থেকে টার্গেট করা ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনেছে। প্রশ্ন আসছে, টু-স্টেপ-অথেন্টিকেশন পদ্ধতি সক্রিয় থাকায় সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারছে না অপরাধ চক্র। সে সময়ে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতে ক্লোন করছে আক্রান্ত ব্যক্তির ওটিপি কোড।
উল্লিখিত পদ্ধতিতে শুধু কল করে পরিচিত কারও রেফারেন্স দিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে ফোনে যুক্ত করছে। আর মুহূর্তেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওটিপি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। অপর প্রান্ত থেকে পরিচিত ব্যক্তি পরিচয়ে আসা কলটি আদৌ ফাঁদে ফেলার জন্য ব্যাংকের ওটিপি জানার অপকৌশল।
বহু ঘটনায় টেক্সট পদ্ধতিতে ওটিপি না এলেও ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে ওটিপি জানানো হয়।
ফলে কলটি মার্জ হওয়ামাত্রই ভয়েস পদ্ধতিতে ওটিপি জানা যায়। অন্যদিকে থাকা চক্রটি ওত পেতে তা স্পষ্ট শুনে ওটিপি বসিয়ে দেয়।
ঠিক কিছু বুঝে ওঠার আগে হাতিয়ে নেওয়া ওটিপি বসানো মাত্রই টার্গেট ব্যক্তির ব্যাংক থেকে অর্থ লেনদেন হয়ে যায়। তখন অপরাধী চক্রটি ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নেয়। অর্থাৎ ওটিপি ছাড়া কীভাবে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে– এমন মামলার তদন্ত করতে বিশ্বের কয়েকটি দেশের সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন ওই দেশের পুলিশ কর্মকর্তা। ঠিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ভয়েস কলের সহায়তা নিয়ে ওটিপি জেনে নিচ্ছে সাইবার প্রতারক চক্র। ঘটনার পর ফোনকল নিজে থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও করার থাকে না কিছুই। ঘটনার সাপেক্ষে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশেষ এমন পদ্ধতি সাধারণ গ্রাহকের সুবিধার জন্যই প্রচলিত। কিন্তু অপকৌশলে তা অপব্যবহার করছে সাইবার ক্রাইম চক্র।
ইতোমধ্যে সারাবিশ্বের কয়েকটি ঘটনা থেকে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ঘটনা ভাবাচ্ছে সাইবার বিশেষজ্ঞদের। এমন বিশেষ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রথম সতর্কতা হবে অজানা কোনো ব্যক্তির ফোন নম্বরে হুট করে বিশ্বাস না করে ‘কল মার্জ’ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি কোনো পরিচিত ব্যক্তির রেফারেন্স দিয়ে এমন সহায়তা প্রার্থনা করে ফোনকল আসে, সে ক্ষেত্রে কথা না বলে যে ব্যক্তির পরিচয় দেওয়া হচ্ছে, তাকেই তখন কল করা। তাহলে বিভ্রান্তির ঘটনা ঘটবে না, শঙ্কাও কমবে।
কিন্তু ঘটনা যদি ঘটেই যায়, সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বিভাগের শরণাপন্ন হতে হবে। এমন বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অপরাধী চক্রকে কোনোভাবেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। চক্রটি অধরাই থেকে যাবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিবগঞ্জ সীমান্তে পেট্রোল বোমা ও ককটেলের বড় চালান আটক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে বিস্ফোরকের একটি বড় চালান আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশকে অস্থিতিশীল করতে চোরাইপথে ভারত থেকে আনা উপকরণ দিয়ে বানানো এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবির।
সীমান্ত বাহিনীটির দাবি, বোমাগুলো দেশীয়ভাবে তৈরির পর তা বন্দর এলাকা থেকে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে পাচার হওয়ার আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তা আটকে দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চকপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৯টি ককটেল এবং ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের একটি আভিযানিক দল। রাত ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
তিনি জানান, দুটি প্লাস্টিকের ক্যারেটসহ চকপাড়া সীমান্তের ১৮৪ মেইন পিলার হতে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে কয়লাবাড়ি ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় দুটি প্লাস্টিকের ক্যারেটসহ দুই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় বিজিবির একটি অভিযানিক দল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে গেলে একটি ক্যারেটে তল্লাশি চালিয়ে লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ৯৯টি ককটেল এবং অপর ক্যারেট থেকে ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করে।
তিনি আরও জানান, পেট্রোল বোমাগুলো কোকাকোলা বা এ ধরনের কাঁচের বোতলে বানানো হয়েছে এবং ককটেলগুলো জর্দ্দার কোটায় দেশীয় প্রযুক্তিতে বানানো হয়েছে।
অধিনায়কের দাবি, এসব বিস্ফোরক ভারত থেকে না আনলেও গান পাউডারসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক উপকরণ সীমান্ত দিয়ে আনার পর সন্ত্রাসীরা সীমান্ত এলাকায় বোমা তৈরির পর সেগুলো সোনামসজিদ বন্দর রুট ব্যবসার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ট্রাকে করে দেশের অভ্যন্তরে পাচারের চেষ্টা করছিল। তবে গোয়েন্দা নজরদারির কারণে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এসব কাজে জড়িতদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে। এ ঘটনায় জব্দকৃত বোমাগুলো শিবগঞ্জ থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।