ভালো নেই সিলেটের মানুষ। প্রকৃতির কোলে প্রশান্ত থাকা এই পর্যটন অঞ্চলকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা। সম্প্রতি সিলেটে বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা। তবে এখানকার মানুষের দাবি, সেই তুলনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। এতে করে তাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ।
সিলেটে গত পাঁচ দিনে খুন হয়েছেন তিনজন। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে একাধিক। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, তারা সব ঠিক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট বসানোসহ চলছে একাধিক বিশেষ অভিযান। প্রায় প্রতিদিনই আসামিরা ধরা পড়ছে।
বুধবার দুপুরে এসএমপির জালালাবাদ থানার ৭ নম্বর মোগলগাঁও ইউনিয়নের ফতেহপুরের পীরেরগাঁও নামক গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে সমর আলী নামে এক ছাগল ব্যবসায়ীর লাশ। স্থানীয়দের ধারণা, ছাগল বিক্রির টাকা ছিনিয়ে নিতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পীরেরগাঁও মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন সমর আলী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছাগল বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা ছিল। বুধবার সকালে তাঁর লাশ পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী একটি ঝোপে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দু’দিনের ব্যবধানে খুন হয়েছেন দু’জন। শনিবার রাতে খসরু মিয়া ও মঙ্গলবার দুপুরে রুস্তম আলী নামে দু’জন নিহত হন। বাড়ির জমি নিয়ে ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত খসরু হাসপাতালে মারা যান। অপরদিকে একই উপজেলার হাজরাই গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন রুস্তম আলী।
দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদির জানান, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নারীসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এদিকে নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় এক নারীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার দুপুরে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে বসা কয়েক যাত্রীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে আলাল ও ইমন নামের দুই যুবক। যাত্রীরা বিষয়টি চালককে অবগত করলে স্থানীয় মোগলাবাজার স্টেশন এলাকায় ট্রেন থামিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক হওয়া আলাল কুলাউড়ার বরমচালের এবং ইমন হোসেন রেলস্টেশন এলাকার খোজারখলার বাসিন্দা।
এদিকে ডাকাত আতঙ্কে একের পর এক নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সিলেটের মানুষ। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দারা। কিছুতেই কাটছে না এই আতঙ্কের রেশ। উপজেলার লামাকাজি, খাজাঞ্চী, অংকারী, রামপাশা, বিশ্বনাথ, দেওকলস ও দশঘর ইউনিয়নের বাসিন্দারাও নিজ উদ্যোগে রাত জেগে এলাকা পাহারা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে শুক্রবার রাতে ডাকাতির অভিযোগে জকিগঞ্জ ও এর আগে একই উপজেলা থেকে ডাকাত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার সম্রাট তালুকদার।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের অভিযানিক দল সবসময় মাঠে তৎপর রয়েছে। পুলিশ যৌথ বাহিনীর অভিযান ও চেকপোস্ট চলমান আছে।
সম্প্রতি চলমান এসব ইস্যু নিয়ে বাসদের সমাবেশে হয়। সেখানে বক্তারা, সারাদেশে চলমান নৈরাজ্য ও অপরাধকাণ্ডের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। তারা বলেন, প্রশাসনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের অভাবে পুলিশে সংকট কাটছে না। যার কারণে দেশের এই পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে সরকার চরম দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার ২২৮
জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে গত রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১ হাজার ২১ জন গ্রেপ্তার হলো। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এসব তথ্য জানায়।
এছাড়া বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারা দেশে আরো ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত গত ২০ দিনে মোট ১১ হাজার ৯২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে একজনকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৩
সেলুনে দাড়ি কাটাতে গিয়ে আ.লীগ নেতা আটক
সাঁড়াশি অভিযান সম্পর্কে ডিএমপি জানায়, রাজধানীতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানা ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ৫৫০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে।
ডিএমপি থেকে বলা হয়, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ডাকাত সন্দেহে ১৫ জন, ছিনতাইকারী সন্দেহে ২৪ জন, চাঁদাবাজ সন্দেহে ৫ জন, চোর সন্দেহে ১২ জন, মাদক কারবারি সন্দেহে ২৭ জন ও পরোয়ানাভুক্ত ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত ছয়টি চাকু, দুটি সুইচ গিয়ার, একটি দা, একটি চাপাতি, দুটি কুড়াল, তিনটি পাইপ, একটি মাইক্রোবাস, চারটি মুঠোফোন ও ৬২ হাজার ২৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ৩৭ কেজি ৬৪৫ গ্রাম গাঁজা, ২৩৮ পিস ইয়াবা ও ২০ গ্রাম হেরোইন। সর্বশেষ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৪৯টি মামলা করা হয়েছে।
জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল দলের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) ১৪টি, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) ১২টি এবং ডিএমপির সঙ্গে র্যাবের ১০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া ডিএমপির সঙ্গে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ২০টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করেছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ