পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা বেহাল
Published: 2nd, March 2025 GMT
মা, শিশু ও প্রসূতিসেবায় সাফল্য দেখিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০১২ ও ১৩ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ২০১৪ সালে জাতীয় পুরস্কার ও সনদ পায়। সেই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যসেবা এখন বেহাল। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে উপজেলায় সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা নিতে এসে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শত শত বিদেশি নাগরিক কর্মরত। প্রায়ই তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে তাদেরও সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিলে তাদের কিছু করার নেই।
জরুরি চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন রোগী ফাতেমা খাতুন। তিনি জানান, দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এক রোগীর স্বজন রাইদুল ইসলামের ভাষ্য, রোগীর প্রয়োজনে নার্সদের ডেকে পাওয়া যায় না। তাদের আচরণও ভালো নয়। রোগীদের দেওয়া খাবার নিম্নমানের।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলার কনসালট্যান্টসহ ১১ পদের বিপরীতে দু’জন কনসালট্যান্ট আছেন। চিকিৎসা কর্মকর্তার ১৫ পদের স্থলে আছেন মাত্র আটজন। ২৮ পদের মধ্যে বর্তমানে ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স ২৬ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ২২ জন। তাদের বিরুদ্ধেও রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই। এতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। বহির্বিভাগে দিনে অন্তত ৫০০ রোগী সেবা নেন। ভর্তি থাকছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। তাদের সেবা দিচ্ছেন মাত্র ১২ জন চিকিৎসক। চাপ সামলাতে নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীদেরও হিমশিম খেতে হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ নাজনীন আফরোজ এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, জনবল সংকটে আমরাও সমস্যায় আছি। রূপপুর প্রকল্প, ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার কারণে প্রচুর রোগীর চাপ থাকে। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাগজে ৫০ শয্যার হলেও ২৭ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। রোগী এলেই পাঠানো হয় (রেফার) পাবনা, রাজশাহী বা ঢাকায়। এসব সংকটের পাশাপাশি পুকুরের টেন্ডার, মসজিদের কমিটি, অ্যাম্বুলেন্সের গ্যারেজসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স দরকার হলে আমাদের ডাক পড়ে। কিন্তু আমাদের হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে। এখন ডাকলেও আমাদের রোগী পর্যন্ত যেতে দেরি হয়। এতে ভোগান্তি বেড়েছে। আর মসজিদের মুসল্লি শহীদুল ইসলামের ভাষ্য, মসজিদের কমিটি কর্তৃপক্ষ তাদের পছন্দমতো ব্যক্তি নিয়ে করেছেন।
বরাদ্দের খাবারসহ কেনাকাটা ও সেবার মান নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে রোগী ও স্বজনদের। অভিযোগ উঠেছে, পুকুরের টেন্ডার ও মসজিদে মুসল্লিদের মতামত উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের নানান সংকটে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ভাষ্য, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সব জানেন। আর আরএমও দায় চাপান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ওপর।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলী এহসান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সের গ্যারেজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন তারা। মসজিদের কমিটিতে অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের ছাড়া বাইরের কাউকে রাখা হয়নি।’ অন্যান্য বিষয়ে আরএমওর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
আরএমও মো.
রোগীর চাপ যে হারে বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার না করা গেলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর যেসব পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা দরকার। এতে সেবার মান বাড়বে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ব স থ য কর মকর ত র স ব স থ য কমপ ল ক স মসজ দ র চ ক ৎসক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কারিগরি শিক্ষার্থীদের দাবি কী, পূরণে বাধা কোথায়, কী চিন্তা করছে সরকার
কারিগরি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন। ১৬ এপ্রিল সাতরাস্তায় তাঁদের অবস্থান কর্মসূচিতে রাজধানীজুড়ে যানজট তৈরি হয়। ঢাকার বাইরেও জেলায় জেলায় আন্দোলন হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা মূলত ছয়টি দাবি তুলেছেন। যদিও তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর’ থেকে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে পদোন্নতি বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশকে কেন্দ্র করে।
পদন্নোতির বিধান না থাকায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০-এর দুটি সিরিয়াল (২৭ ও ২৮) চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর মো. আশিক মিয়াসহ কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে রিট আবেদনকারীদের (ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর) জন্য কিছু পদ রাখতে বা সন্নিবেশিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যদি পদ না থাকে তাহলে যোগ্যতাসাপেক্ষে যেকোনোভাবে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দিতে বলা হয়।
রায়ের পর থেকেই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন। ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি হলো পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
দাবিগুলো পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ১৫ এপ্রিল লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আগামী ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি করতে বলা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ বলছে, আন্দোলনকারীদের সব দাবি মানা কঠিন।
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর কারা
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হলেন এমন প্রশিক্ষক, যাঁরা কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিভিন্ন ট্রেডে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁরা মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভোকেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস পরিচালনা করেন।
কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় শুরু থেকে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জনবলকাঠামো অনুযায়ী চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর রয়েছেন। এর মধ্যে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি সরকারি বেতনকাঠামোর ১৩তম গ্রেডের।
অবশ্য ১৭তম গ্রেডে বেতনপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরও রয়েছেন। তাঁদের মূল কাজ পরীক্ষাগার-ওয়ার্কশপে দায়িত্ব পালন করা এবং ওয়ার্কশপ ও পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। তাঁরা যন্ত্রপাতি কীভাবে চালানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন।
আন্দোলনকারীরা যা বলছেন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেকেই আছেন, যাঁরা অফিস সহায়ক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। অনেকে অনিয়মিত কর্মী (মাস্টাররোল) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। এ ধরনের কর্মচারীরা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা কমবে।
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর—দুটি পদেরই সংক্ষিপ্ত রূপ সিআই। এ কারণে ক্র্যাফট ইন্সপেক্টরদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় সিআই পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া স্নাতক ডিগ্রিধারী ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিলের দাবির বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই নিয়োগের ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, যেখানে উচ্চশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন নেই, সেখানে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক।
বিতর্কিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত (২০২১ সালে) ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কোনো কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের নিয়োগে যোগ্যতা হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে স্নাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। গোপনে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা পদোন্নতির জন্য রিট করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন এসএসসি পাস ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি পদোন্নতি পেয়ে যখন শিক্ষকতায় আসবেন, তিনি কী শেখাবেন!
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে উচ্চশিক্ষিত জনবল নিয়োগের বিষয়ে জুবায়ের বলেন, তাহলে বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করে যাঁরা বের হবেন, তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা সরকার কোথা থেকে দেবে।
‘বক্তব্য সঠিক নয়’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মরত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংগঠন বাংলাদেশ পলিটেকনিক নন-গেজেটেড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাপনটিএ)।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, সারা দেশে ১৩তম গ্রেডে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০। এঁদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী রয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন প্রায় ৫০০ জন। পদার্থ ও রসায়নে স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করা রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।
বাপনটিএর সদস্যদের অভিযোগ, নতুন যোগদান করা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও বিগত সরকারের সময় প্রকল্প থেকে সরাসরি উচ্চপদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছেন। কারণ হলো ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা (জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর)।
পিয়ন থেকে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে—আন্দোলনকারীদের এমন দাবি সঠিক নয় বলেও অভিযোগ করছেন ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা। তাঁরা বলছেন, ১৭তম গ্রেডে চাকরি করা ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা এই পদোন্নতির আওতাভুক্ত নন।
বাপনটিএর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি শিক্ষক পদ। তাঁদের মানহানি করার জন্য ১৭তম গ্রেডের ল্যাবরেটরি বেয়ারার এবং দক্ষ বাহক পদের নাম পরিবর্তন করে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর করা হয়েছে। এসব পদের কর্মপরিধি ১৩তম গ্রেডের ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ওপর চাপিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝানো হয়েছে।
যা বলছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ
কারিগরি শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা আবার সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ।
২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল করার যে দাবি, তা পূরণ কারিগরি শিক্ষা বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদ থেকে পদোন্নতির বিষয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দাবিগুলো নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন, এগুলো আমার কাছে খুব ছোট দাবি। আমি ওদের নিয়ে আরও বড় চিন্তা করছি, পরিকল্পনা করছি এবং কাজ শুরুও করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে আমি বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম (মূল ধারা) করতে চাই। তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করুক। সমঝোতার মাধ্যমে যেগুলো সম্ভব আমরা মেনে নেব।’