Samakal:
2025-04-02@21:39:54 GMT

ন্যায়নিষ্ঠ কর্মতৎপর মানুষ

Published: 2nd, March 2025 GMT

ন্যায়নিষ্ঠ কর্মতৎপর মানুষ

এএমএম শওকত আলী ১৯৬৬ ব্যাচের সিএসপি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এম হুসাইন আলী জেলা ও দায়রা জজ এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আইন সচিব ছিলেন। তাঁর পিঠাপিঠি বড়ো ভাই এম আকতার আলী ১৯৬৫ ব্যাচের অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর ৩ মাস ২৮ দিন। এম আকতার আলী এবং ড.

এএমএম শওকত আলী ডাকসাইটে সিএসপি অফিসার ছিলেন। আমি ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি। তখন থেকেই দুই সহোদর সিএসপির মেধা, দক্ষতা ও সাহসী মনোভাবের নানা গল্প শুনেছি। তারা দুই ভাই তখন যুগ্ম সচিব। এম আকতার আলীর সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। ড. শওকত আলীর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আমি অতিরিক্ত সচিব। ওই সময় তিনি আমার শ্রদ্ধাস্পদ ও প্রিয় মানুষে পরিণত হন।

ড. এএমএম শওকত আলী ছিলেন একজন অসাধারণ মেধাবী, দক্ষ, বাস্তববাদী, ন্যায়নিষ্ঠ, সময়নিষ্ঠ, সাহসী ও দৃঢ়চিত্ত।
আমি শওকত আলীর সঙ্গে এক বছর চাকরি করেছি। কখনও তাঁর সময়নিষ্ঠার ব্যত্যয় দেখিনি। তিনি ঠিক ৯টা বাজার ৫ মিনিট আগে অফিসে উপস্থিত হতেন এবং ৫টায় বেরিয়ে যেতেন। উপদেষ্টা হিসেবেও ঠিক ৯টা-৫টা অফিস করতেন।

উপদেষ্টা রাজনৈতিক পদ। তা সত্ত্বেও তাঁর কোনো ভিজিটর থাকত না। তিনি অফিস আওয়ারের পুরো সময় নিবিষ্ট মনে দাপ্তরিক কাজ করতেন। তাঁর টেবিলে কোনো ফাইল পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেরত আসত। তাঁর সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষিপ্রতা ছিল শিক্ষণীয়। তিনি অতি সহজে যে কোনো জটিল বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। সিদ্ধান্ত দিতে তিনি কখনোই ঢিলেমি করতেন না। 
তিনি আইনানুগ ও ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত দিতেন। তাঁর মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতাপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রিয়তোষণ দেখিনি। তিনি যার যার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার নীতি মেনে চলতেন। অন্যের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতেও দ্বিধান্বিত হতেন না।

ড. এএমএম শওকত আলী অনুজদের কর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না। কোনো তদবির করতেন না। তিনি অনুজদের মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করতেন না। অনুজদের বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের এক মহিরুহ, আইকন, কিংবদন্তি ও সূর্য সন্তান। তাঁর কাছে অনেক শিখেছি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। 
তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং এমএ পাস করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লি উন্নয়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পল্লি উন্নয়ন, জেলা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেন। 
কর্মজীবনেও তিনি ছিলেন সফল মানুষ। তিনি সিলেট এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের 
চেয়ারম্যান ছিলেন। ডাক ও তার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। 

ড. এএমএম শওকত আলীর পেশাদারিত্বের গুণাবলি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি আমার একজন প্রিয় মানুষ। দৈহিকভাবে এ পৃথিবীতে না থাকলেও তিনি আমার হৃদয়ে আছেন জাগরূক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে পরকালে শান্তিতে রাখুন।

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার: সাবেক সচিব;
লেখক ও গবেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট করত ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

হত্যা মামলায় ঈদের দিন ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

ঈদের দিন সোমবার দুপুরে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া গ্রামের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইমরুল হাসান কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মৃত ইনায়েত হোসেন মিয়ার ছেলে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর সাজেদুর রহমান।

ওসি জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় ইমরুল হাসান মিয়াকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী তার স্ত্রী, সন্তান ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গাড়ি বহরে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদারকে পিটিয়ে হত্যা করে সড়কের পাশে ফেলে রাখে।

এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর শওকত আলীর স্ত্রী রাবেয়া রহমান ১১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হত্যা মামলায় ঈদের দিন ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার