Samakal:
2025-03-03@09:35:04 GMT

ন্যায়নিষ্ঠ কর্মতৎপর মানুষ

Published: 2nd, March 2025 GMT

ন্যায়নিষ্ঠ কর্মতৎপর মানুষ

এএমএম শওকত আলী ১৯৬৬ ব্যাচের সিএসপি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এম হুসাইন আলী জেলা ও দায়রা জজ এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আইন সচিব ছিলেন। তাঁর পিঠাপিঠি বড়ো ভাই এম আকতার আলী ১৯৬৫ ব্যাচের অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর ৩ মাস ২৮ দিন। এম আকতার আলী এবং ড.

এএমএম শওকত আলী ডাকসাইটে সিএসপি অফিসার ছিলেন। আমি ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি। তখন থেকেই দুই সহোদর সিএসপির মেধা, দক্ষতা ও সাহসী মনোভাবের নানা গল্প শুনেছি। তারা দুই ভাই তখন যুগ্ম সচিব। এম আকতার আলীর সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। ড. শওকত আলীর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আমি অতিরিক্ত সচিব। ওই সময় তিনি আমার শ্রদ্ধাস্পদ ও প্রিয় মানুষে পরিণত হন।

ড. এএমএম শওকত আলী ছিলেন একজন অসাধারণ মেধাবী, দক্ষ, বাস্তববাদী, ন্যায়নিষ্ঠ, সময়নিষ্ঠ, সাহসী ও দৃঢ়চিত্ত।
আমি শওকত আলীর সঙ্গে এক বছর চাকরি করেছি। কখনও তাঁর সময়নিষ্ঠার ব্যত্যয় দেখিনি। তিনি ঠিক ৯টা বাজার ৫ মিনিট আগে অফিসে উপস্থিত হতেন এবং ৫টায় বেরিয়ে যেতেন। উপদেষ্টা হিসেবেও ঠিক ৯টা-৫টা অফিস করতেন।

উপদেষ্টা রাজনৈতিক পদ। তা সত্ত্বেও তাঁর কোনো ভিজিটর থাকত না। তিনি অফিস আওয়ারের পুরো সময় নিবিষ্ট মনে দাপ্তরিক কাজ করতেন। তাঁর টেবিলে কোনো ফাইল পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেরত আসত। তাঁর সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষিপ্রতা ছিল শিক্ষণীয়। তিনি অতি সহজে যে কোনো জটিল বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। সিদ্ধান্ত দিতে তিনি কখনোই ঢিলেমি করতেন না। 
তিনি আইনানুগ ও ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত দিতেন। তাঁর মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতাপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রিয়তোষণ দেখিনি। তিনি যার যার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার নীতি মেনে চলতেন। অন্যের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতেও দ্বিধান্বিত হতেন না।

ড. এএমএম শওকত আলী অনুজদের কর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না। কোনো তদবির করতেন না। তিনি অনুজদের মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করতেন না। অনুজদের বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের এক মহিরুহ, আইকন, কিংবদন্তি ও সূর্য সন্তান। তাঁর কাছে অনেক শিখেছি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। 
তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং এমএ পাস করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লি উন্নয়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পল্লি উন্নয়ন, জেলা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেন। 
কর্মজীবনেও তিনি ছিলেন সফল মানুষ। তিনি সিলেট এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের 
চেয়ারম্যান ছিলেন। ডাক ও তার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। 

ড. এএমএম শওকত আলীর পেশাদারিত্বের গুণাবলি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি আমার একজন প্রিয় মানুষ। দৈহিকভাবে এ পৃথিবীতে না থাকলেও তিনি আমার হৃদয়ে আছেন জাগরূক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে পরকালে শান্তিতে রাখুন।

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার: সাবেক সচিব;
লেখক ও গবেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট করত ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের ৫ জন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের পাঁচজন স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন- প্রথম যুগ্ম সদস্য সচিব নারাণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল আমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব ফতুল্লার পাগলা এলাকার তামিম আহমেদ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সোনারগাঁয়ের তুহিন মাহমুদ, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক পদে নারায়ণগঞ্জ শহরের শওকত আলী এবং সদস্য হিসেবে আছেন সদর থানা এলাকার আহমেদুর রহমান তনু।

গত শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ হয়। অনুষ্ঠানে দলটির ২১৭ জনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন এই রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

জানাগেছে, প্রথম যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন। 

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা তামিম আহমেদ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। 

এছাড়া যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তুহিন মাহমুদ সোনারগাঁয়ের সনমান্দি ইউনিয়নের প্রেমের বাজার এলাকার বাসিন্দা। জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদ বর্তমানে একটি উন্নয়ন সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া শওকত আলী পেশাগত জীবনে শিক্ষকতার পাশাপশি সামাজিক কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা যায়। একসময়ের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী শওকত আলী জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।

আহমেদুর রহমান তনু নারায়ণগঞ্জের সদর থানার নিতাইগঞ্জ এলাকার সন্তান। পেশায় ব্যবসায়ী তনু নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের ৫ জন